ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

‘এখানে গোলাগুলি হচ্ছে, আমাদের বাঁচান’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
‘এখানে গোলাগুলি হচ্ছে, আমাদের বাঁচান’ তামিম ইকবাল

একদিন পরেই সিরিজের তৃতীয় শেষ টেস্ট খেলতে নামার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। সেই ম্যাচের ভেন্যু ক্রাইস্টচার্চে চলছিল অনুশীলনও। কিন্তু এদিন ঘটে গেল এক রোমহর্ষক ঘটনা। মসজিদে বন্দুক নিয়ে হামলা চালিয়ে প্রায় ৪৯ জনকে নির্দয়ভাবে হত্যা করলো কয়েকজন সন্ত্রাসী। 

ঘটনার সময় হ্যাগলি ওভালের আক্রান্ত মসজিদের কাছেই মাঠে অনুশীলন শেষে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়রা। কিন্তু মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতেই এক আহত নারীর মুখে হামলার কথা শুনে ফিরে আসেন দলের সবাই।

আশ্রয় নেন টিম বাসে। কিন্তু তখনও থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। সেসময় ইসএসপিএনক্রিকইনফো’র এক সাংবাদিককে ফোন করে বাংলাদেশ দলের ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল হামলার কথা জানানোর পাশাপাশি সহায়তা চান।

ক্রিকইনফো’র সাংবাদিকের ওই মুহূর্তের অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, শুরুতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনডোর সুবিধা থাকায় সেখানেই অনুশীলন সেরে নেওয়া হবে। কিন্তু টিম হোটেল থেকে তা দূরে হওয়ায় সিদ্ধান্ত পাল্টানো হয়। ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে অংশ নেন মাহমুদউল্লাহ। তবে দলের সবাই নামাজের জন্য তৈরি হচ্ছিলেন দেখে একটু দ্রুতই কথা শেষ করেন ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক। তারপরও ৯ মিনিট ধরে কথা বলেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলন শেষে দলের ১৭জন সদস্য, যাদের মধ্যে ছিলেন দলের ম্যানেজার খালেদ মাসুদ পাইলটও, টিম বাসে রওয়ানা হন। এর প্রায় ১৭-১৮ মিনিট পরেই ক্রিকইনফো’র ওই সাংবাদিকের কাছে সহায়তা চেয়ে কল করেন তামিম। ফোনে বেশ আতঙ্কিত কণ্ঠে তামিম বলছিলেন, ‘এখানে গোলাগুলি চলছে, আমাদের বাঁচান। ‘ 

প্রথমে এটাকে নিছক মজা হিসেবে নিয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। কিন্তু ফোন কেটে দিয়ে ফের কল করে একই কথা বলেন তামি। এবার তার কণ্ঠ ভারী হয়ে আসছিল। যে মসজিদে তারা প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন, সেখানে তখন গোলাগুলি চলছে জানিয়ে তামিম ওই সাংবাদিককে পুলিশে খবর দিতে বলেন।  

তামিমের কথা শুনে ওই মসজিদের দিকে দৌড়ে যান ওই সাংবাদিক। পথে এক নারী তাকেসহ আরও দুই বাংলাদেশি সাংবাদিককে লিফট দিলে দ্রুততম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাজ্জব বনে যান সবাই। সেখানে তখন রীতিমত ভয়াবহ পরিস্থিতি। চারদিকে রক্ত আর লাশ। কয়েকটি পুলিশের গাড়ি আর অ্যাম্বুলেন্স দাঁড়িয়ে আছে। আহতদের সেখান থেকে সরানো হচ্ছে।  

ওই সাংবাদিক দৌড়ে বাংলাদেশের টিম বাসের দিকে যান। গিয়ে দেখেন, কয়েকজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার বাস থেকে নেমে ছুটছেন। কিছু দূর এগিয়ে যেতেই বাংলাদেশের ক্রিকেটার ইবাদাত হোসেন ওই সাংবাদিকে হাত ধরে তাদের সঙ্গে ছুটতে বলেন। একটু পর তারা হ্যাগলি পার্কে প্রবেশ করেন এবং ১৫ মিনিটের ওই রাস্তা একপ্রকার ছুটেই পাড়ি দেন তামিমরা। কিছু দূর এগিয়ে অবশ্য গতি কমিয়ে হাঁটতে থাকেন সবাই।  

ওই কয়েক মিনিটকে নিজের জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম কয়েক মিনিট বলে আখ্যা দিয়েছেন সেই সাংবাদিক। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে তখনও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবাই যে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন তা নিয়ে কথা বলতে থাকেন। এক সিনিয়র ক্রিকেটার নাকি ওই সাংবাদিককে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেলেন। এরপর হ্যাগলি ওভালে পৌঁছে ড্রেসিং রুমে ঢুকেই অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ পান তামিম-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ’রা।  

এরপর তাদের সেখান থেকে সরিয়ে টিম হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড মিলে আইসিসি’র সঙ্গে কথা বলে তৃতীয় টেস্ট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়।

চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর যখন সবাই হোটেল রুমে প্রবেশ করেন, ওই সাংবাদিক তামিমের রুমে গিয়ে শুরুতে তার কথা বিশ্বাস না করার জন্য ক্ষমা চান আর তামিম তার পিঠে হালকা ছোঁয়া দিয়ে মুচকি হাসি দেন। ওই হাসির আড়ালে কিছুক্ষণ আগের অভিজ্ঞতার ছাপ তখনও স্পষ্ট।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১৯
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।