ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত করুন: তথ্যমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৭ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
যারা সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত করুন: তথ্যমন্ত্রী ...

চট্টগ্রাম: যারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায় তাদের প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।  

মঙ্গলবার (২০ জুন) বিকেল ৪টায় নগরের প্রবর্তক মোড়ে ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের উদ্যোগে আয়োজিত রথযাত্রায় ভার্চুয়ালি প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আহ্বান জানান।

 

ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় রথযাত্রায় সহায়তা করছে। আমাদের এই দেশ হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সবার দেশ।

হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত ধরে যুদ্ধ করে আমাদের এই দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। এই দেশে সব ধর্মের মানুষ ও সব সম্প্রদায়ের সমান অধিকার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য একটি পক্ষ সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নির্যাতন চালাতে চায়। তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে চায়। মাঝে মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াতে চায়। আমাদের এই অপশক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকতে হবে। রথযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে সফল হোক এই আমার কামনা। রথযাত্রার এই আনন্দ উল্লাস যেন বছরজুড়ে থাকে। যেভাবে আমাদের পূর্বসূরিরা হাতে হাত রেখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জাতির পিতার নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন করেছে সেভাবে আজকেও আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের কাছে পৌঁছাবো। জাতির পিতার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সত্যিকারের উন্নত, অসাম্প্রদায়িক ও শান্তিপূর্ণ দেশ গড়তে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।  

উদ্বোধকের বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, সমাজ থেকে সাম্প্রদায়িক গৌষ্ঠীকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে। এই দেশ সবার। এখানে হিন্দুরা মন্দিরে যাবে, মুসলিমরা মসজিদ-মাজারে আর বৌদ্ধরা প্যাগোডায়। আমরা রথের রশিও টানবো আবার নিজের ধর্মও পালন করবো। এতে হিন্দু মুসলমানের কোনো সমস্যা হবে না, ইমান নষ্ট হবে না। যাদের ইমান নেই, যাদের মন দুর্বল তারা অন্য সম্প্রদায়ের মন্দির দখল করছে। আমরা আজকে প্রতিজ্ঞা করতে চাই যারা মন্দির দখল করতে চায় তাদের ঘরবাড়ি কিন্তু চট্টগ্রামে আছে। মন্দির দখল করতে গেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মীদের বলবেন। আমরা তাদের বাড়ি ঘর চিনি, কখন তাদের কী ওষুধ দিতে হয় সেটি আমরা জানি। আমেরিকার কথায় যারা নাচছে তাদের আমরা দেখিয়ে দেব আওয়ামী লীগ নাচাতেও জানে। আমরা আপনাদের নাচাবো, আবার আপনারা নির্বাচনেও আসবেন। নির্বাচনে আসলে আপনাদের দেশের জনগণ খোদা হাফেজ বলে দেবে। বিদেশি শক্তির ছায়ায় এদেশে কেউ ক্ষমতায় আসতে পারবে না। এ দেশের মূল মালিক জনগণ।  

রথযাত্রা উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী। আশীর্বাদক ছিলেন ইসকন বাংলাদেশের সদস্য ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ শ্রীপাদ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী।  স্বাগত বক্তব্য দেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (প্রশাসন ও অর্থ) এমএ মাসুদ,গোমদণ্ডী যোগাশ্রমের অধ্যক্ষ স্বামী ছত্রেশ্বরানন্দ সরস্বতী, স্বামী অদ্বৈতানন্দ যোগাশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী অক্ষরানন্দ পুরী মহারাজ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ চট্টগ্রাম নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, মোরশেদ আলম, নীলু নাগ, রুমকি সেনগুপ্ত, চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু, সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য, কৈবল্যধামের ট্রাস্টি মনিলাল দাশ, বাংলাদেশ গীতা শিক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শুভাশীষ শর্মা, নগর ছাত্রলীগের সহ সম্পাদক রাহুল দাশ, বাজুস চট্টগ্রাম জেলা শাখার সভাপতি প্রণব সাহা, সনাতনী জাগরণ সংঘের সভাপতি কাঞ্চন আচার্য্য, সনাতন সংগঠনের মুখপাত্র অ্যাডভোকেট রাজীব দাশ, নগর পূজা পরিষদের সদস্য অর্পণ চক্রবর্তী, উত্তর জেলা  ছাত্রলীগের সহ সভাপতি লিপটন দেবনাথ লিপু, অজয় দত্ত, রবিন পাল, অভিরাজ নাথ প্রমুখ।  

ভোরে মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানমালার সূচনা হয়। বিকেল ৪টায় রথযাত্রার বর্ণাঢ্য মহাশোভাযাত্রা প্রবর্তক মোড় থেকে শুরু হয়ে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সিনেমা প্যালেস প্রাঙ্গণে সমাপ্ত হয়। শোভাযাত্রায় চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের অংশগ্রহণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের বিভিন্ন নামহট্ট, ভক্তিবৃক্ষ, ইয়ুথ ফোরাম, গীতা প্রচার বিভাগ, জাগ্রত ছাত্র সমাজ, সংর্কীতন, ফুড ফর লাইফ, নিত্যসেবা, সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ, জাগো হিন্দু পরিষদ, ঋষি মতিলাল স্মৃতি সংসদ, বিশ্ব সনাতন ঐক্য, জাতীয় হিন্দু মহাজোট, সনাতন সংগঠন, ইউএসটিসি, মেডিক্যাল সার্ভিস টিম, বাংলাদেশ সনাতনী গণ জাগরণ মঞ্চ, কোজাগরী পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদ, শারদাঞ্জলি ফোরাম, নার্সিং কলেজসহ ১৭০টির বেশি বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বিভিন্ন পৌরাণিক সাজসহ অংশ নেন।

মহাশোভাযাত্রায় প্রায় লক্ষাধিক ভক্তমণ্ডলী সংকীর্তনানন্দে নগরের রাজপথ পরিভ্রমণ করেন। অনুষ্ঠানসূচিতে ছিল মঙ্গলারতি, গুরুপূজা, ভাগবত পাঠ, বিশ্ববাসীর কল্যাণার্থে শ্রীজগন্নাথের সন্তুষ্টি বিধানার্থে ১০টি অগ্নিহোত্র বৈদিক যজ্ঞ, মঞ্চে ভজন কীর্তন, ভোগারতি, সংকীর্তন। এতে প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি ভক্তকে মহাপ্রসাদ বিতরণ করা হয়। নগরের মোড়ে মোড়ে নগরবাসী উলুধ্বনি, শঙ্খধ্বনি, মঙ্গলপ্রদীপ পূজার নৈবেদ্য সহকারে জগন্নাথ-বলদেব-সুভদ্রা মহারাণীকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানান। শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পৌরাণিক সাজের মাধ্যমে আবহমান বাংলার ও বৈদিক সংস্কৃতির চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০২৩
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।