ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

আদালতের পর্যবেক্ষণ

দুর্নীতির মাধ্যমে মেয়র ঘোষণা করা হয় রেজাউলকে

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০২৪
দুর্নীতির মাধ্যমে মেয়র ঘোষণা করা হয় রেজাউলকে প্রতীকী ছবি।

চট্টগ্রাম: পৌনে ৩ বছর আগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) নির্বাচনে ফলাফল কারচুপির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেছেন আদালত। একইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবকে গেজেট প্রকাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

বিএনপি পন্থী আইনজীবীরা বলছেন, দেশের ইতিহাসে এটিই প্রথম ঘটনা যেখানে আদালতের রায়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্বাচনী আইন ও বিধিভঙ্গের কারণে ফলাফল বাতিল হয়েছে।  

আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারক মোহাম্মাদ খাইরুল আমীন বলেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি নির্বাচনের দিন নির্বাচনী চিত্র, ঘটনা ও অনিয়ম এবং স্থানীয়, জাতীয় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ইউটিউব প্রকাশিত অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের পাহাড়সম অভিযোগে প্রতীয়মান হয় যে, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন একটি পূর্বপরিকল্পিত তামাশার নির্বাচন ও প্রহসনের নির্বাচন।

সরকারি দল মনোনীত প্রার্থীকে মেয়র ঘোষণা দেওয়ার কৃত্রিম আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। ফলাফলের পার্থক্য সম্পূর্ণরূপে অবিশ্বাস্য ও অযৌক্তিক এবং বাস্তবতা বিবর্জিত।

বিচারক রায়ে লিখেছেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০ এর দায়িত্ব প্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার ফলাফলের চট্টগ্রাম অফিস থেকে প্রাপ্ত কপি এবং মামলার বিবাদী তৎকালীন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামানের ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাক্ষরিত, যা নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরবরাহকৃত কপি, কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল প্রকাশের জালজালিয়াতি ও অনিয়মের চিত্র চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন ২০২০ এর ভোটের ফলাফল গেজেটের চরম অনিয়ম ও জালজালিয়াতির চিত্র স্পষ্টত প্রতিফলিত হয়। তৎকালীল আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনারের সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনী আইন ও বিধিমালাকে কোনো প্রকার তোয়াক্কা না করে রেজাউল করিম চৌধুরীর কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দান করেছেন এবং অন্যায় ও অবৈধভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন।

রায়ে বলা হয়েছে, সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা করার জন্য তৎকালীন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, নির্বাচন কমিশনারের সচিব ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ বিবাদীর নির্বাচনী এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা ২০১০, সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) বিধিমালা ২০১৯ চরমভাবে লংঘন করেন। দুর্নীতি-বেআইনি ও যোগসাজশমূলক কার্যকলাপ এবং আচরণের মাধ্যমে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে রেজাউল করিম চৌধুরীকে তর্কিত ভাবে ফেরবের আশ্রয়ে ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারির তারিখেরে প্রকাশিত গেজেট মতে নির্বাচিত ঘোষণা বেআইনি, অবৈধ, ভিত্তিহীন।  

ডা. শাহাদাত হোসেনের আইনজীবী মো. মঈনউদ্দীন হোসাইন সোহেল আদালতের রায় তুলে ধরে বাংলানিউজকে বলেন, মামলায় আইন ও বিধিমালা বলে ডা. শাহাদাত হোসেনকে বিবাদীগণের বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে বিনা খরচায় ডিক্রি দেওয়া হলো। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার আইনের ধারা অনুসারে সরকারের গেজেট অনুসারে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের একই বছরের ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মেয়র হিসেবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে নির্বাচিত ঘোষণা বাতিল করেছেন আদালত এবং একই সাথে আইন অনুযায়ী এই মামলায় নির্বাচনে ধানের শীষের প্রতীকের প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে নির্বাচিত মেয়র হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন।

২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি চসিক নির্বাচনে কারচুপি ও ফল বাতিল চেয়ে মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বিবাদী করা হয়েছিল চসিকের সাবেক মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাসানুজ্জামান, নির্বাচন কমিশনের সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, আবুল মনজুর, এমএ মতিন, খোকন চৌধুরী, মুহাম্মাদ ওয়াহেদ মুরাদ ও মো. জান্নাতুল ইসলামকে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটের দিন দুপুর পর্যন্ত ৪ থেকে ৬ শতাংশ ভোট পড়ে। কিন্তু ভোটের হিসাবে দেখানো হয়, ২২ শতাংশ ভোট পড়েছে। ঘোষিত ফলাফলে ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পাওয়ায় নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ঘোষণা অনুসারে, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির মেয়রপ্রার্থী শাহাদাত হোসেন ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছিলেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট।

কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনকে ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বিএনপির পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকের পর চসিক নির্বাচনে মেয়র পদে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।  

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০২৪
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।