ঢাকা, বুধবার, ০ মাঘ ১৪৩১, ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চসিকের পুরোনো চুক্তি বাতিল না করে দরপত্র, স্থগিতাদেশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
চসিকের পুরোনো চুক্তি বাতিল না করে দরপত্র, স্থগিতাদেশ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন।

চট্টগ্রাম: নগরের চারটি ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি বাতিল না করেই চসিকের নতুন দরপত্র বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করায় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফ্লাইওভার চারটি হচ্ছে– আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, এমএ মান্নান চৌধুরী ফ্লাইওভার, কদমতলী ফ্লাইওভার ও দেওয়ানহাট ফ্লাইওভার।

 

চসিকের নতুন দরপত্র বিজ্ঞপ্তিকে আইনবহির্ভূত দাবি করে গত ৩০ ডিসেম্বর রিট (পিটিশন নম্বর ১৬৩৬৫/২০২৪) করেন ট্রেড ম্যাক্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. হেলাল আহমেদ। গত ৭ জানুয়ারি বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন এবং কেএম রাশেদুজ্জামান রাজার বেঞ্চ বিজ্ঞপ্তির ফ্লাইওভার অংশের ওপর ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দেন।

আদেশের কপি ৯ জানুয়ারি চসিকে হস্তান্তর করেন মো. হেলাল আহমেদ। এ ছাড়া ডাকে পাঠানো আদেশের কপি সোমবার রিসিভ করে চসিক।

সূত্র জানায়, ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার এবং বাকি তিনটি ফ্লাইওভারে সৌন্দর্যবর্ধনে ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি ‘ট্রেড ম্যাক্স’র সাথে চুক্তি করে চসিক। পাঁচ বছরের জন্য এ চুক্তি করলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এক বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ চুক্তির মেয়াদ রয়েছে। এ চুক্তি বাতিল না করে ফ্লাইওভারগুলোসহ নগরে ওয়ার্ডভিত্তিক নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনে দরপত্র আহ্বান করে চসিক।  

দরপত্র আহ্বানের আগে ফ্লাইওভারের সৌন্দর্যবর্ধনের মেয়াদ বৃদ্ধি ও রাজস্ব সমন্বয় করার লক্ষ্যে চসিক আইন কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক ও নগরপরিকল্পনাবিদকে সদস্যসচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে বলা হয়, বার্ষিক কর ও বিদ্যুৎ বিল বাবদ ৫ বছরে চূড়ান্ত হিসাবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি চসিক থেকে ৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা প্রাপ্য। চসিক স্থান বুঝিয়ে দিতে না পারার কারণে কিংবা দখল দিতে না পারার কারণে অথবা প্রশাসনিক জটিলতার কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি আয় বঞ্চিত হয়েছে ধরে এ অর্থ নির্ণয় করা হয়।

চুক্তি অনুযায়ী, ট্রেড ম্যাক্সকে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের বিপরীতে বছরে ১ কোটি টাকা এবং বাকি ফ্লাইওভারগুলোর জন্য বছরে মাত্র ১৫ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে। ওই হিসেবে পাঁচ বছরে চসিকের আয় হওয়ার কথা ৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রথম বছর ট্রেড ম্যাক্স ৫৭ লাখ টাকা পরিশোধ করে। বাকি টাকা করোনাজনিত মন্দা পরিস্থিতির কারণে চসিক ট্রেড ম্যাক্সকে মওকুফ করে দেয়। বাকি চার বছরে চসিক ট্রেড ম্যাক্সের কাছ থেকে পাবে ৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়া কদমতলী, দেওয়ান হাট এবং এমএ মান্নান ফ্লাইওভারের বিদ্যুৎ বিল ট্রেড ম্যাক্সের দেওয়ার কথা কথা থাকলেও পরিশোধ করতে হয় চসিককে। এতে বছরে ৩০ লাখ টাকা হিসেবে ৫ বছরে চসিকের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে বিভিন্ন খাতে ট্রেড ম্যাক্সের আর্থিক ক্ষতি দেখানো হয়েছে ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

চুক্তির শর্ত অনুসারে ট্রেড ম্যাক্স ১০টি পাবলিক টয়লেট করার কথা থাকলেও করেছে একটি। এক্ষেত্রে চসিক জায়গা নির্ধারণ করে দিতে পারেনি বলে উল্লেখ করা হয়। একইভাবে ১০৬টি হকার শেডের একটিও করা হয়নি। এ বিষয়ে ‘ঠিকারদারকে হকার শেড লিজ দেওয়া করপোরেশনের জন্য শোভনীয় নয় এবং এটি করপোরেশনের ম্যান্ডেট বহির্ভূত’ বলে মন্তব্য করা হয় প্রতিবেদনে।

গত ২৭ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদনটি অনুমোদন দেন মেয়র। এরপর ১৬ ডিসেম্বর ‘সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভিন্ন সড়ক, মিডিয়ান, ফুটপাত, ফুটওভার, সড়কদ্বীপ, ফ্লাইওভারের উপর ও নিচের অংশ, ফুটওভারের পরিত্যক্ত খালি স্থান, উন্মুক্ত স্থান, জলাশয়, সৌন্দর্যবর্ধন সবুজায়ন ও ল্যান্ডস্ক্যাপিং এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিভিন্ন সংস্থা অথবা প্রতিষ্ঠান অথবা ব্যক্তির কাছ থেকে ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রস্তাব’ আহ্বান করে। এতে চার শতাধিক প্রস্তাব জমা পড়ে।  

ট্রেড ম্যাক্সের স্বত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ হেলাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়নি। আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবেও জানানো হয়নি। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে জানতে পারি নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। অথচ সর্বশেষ মাসেও বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গার্ডেনিংসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। তাই বাধ্য হয়ে উচ্চ আদালতে রিট করি। আদালত ৩ মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। চসিক চুক্তি বাতিলে আমাদের নোটিশ দিলেও সময় দিতে হবে। তদন্ত করে আমাদের যে আর্থিক ক্ষতি নিরূপণ করা হয়েছে সেগুলো তো অ্যাডজাস্ট করতে হবে। চসিক জায়গা দিতে না পারায় যাত্রী ছাউনি, পাবলিক টয়লেট, হকার শেডসহ কিছু কাজ আমরা করতে পারিনি। এখানে আমাদের দোষ নেই।

জানতে চাইলে চসিকের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, চসিকের আইন কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা স্থগিতাদেশের বিষয়টি দেখছেন। নতুন করে সৌন্দর্যবর্ধনের ক্ষেত্রে মেয়র যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবেন সেভাবেই অগ্রসর হবে চসিক।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।