ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৬

নগরবাসীর পানি ‘পাওয়ার’ বছর

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
নগরবাসীর পানি ‘পাওয়ার’ বছর চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প। (ছবি: ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: বিদায়ী বছরের নভেম্বর মাস থেকে চালু হয়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প। এরপর থেকে নগরীর প্রায় সব জায়গায় পানি পাওয়া যাচ্ছে। পানি পাওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম ওয়াসার কার্যালয়ে নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন দিয়ে একটি প্রশ্ন করছেন বিভিন্ন জন ‘পানি নিয়মিত থাকবে তো?’

সম্প্রতি চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি অনুষ্ঠানে মানুষের এই আগ্রহের কথা বলেছিলেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। এরপর তিনি ঠাট্টা করে বলেছিলেন, মানুষদের বিশ্বাসই করানো যাচ্ছে না পানি নিয়মিত পাওয়া যাবে।

কারণ দীর্ঘদিন ধরে তাদের আশ্বস্ত করেই সময় গেছে। তবে এখন থেকে পানি পাওয়া যাবে।
২০২২ সাল থেকেই ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ দিতে পারবো আমরা।

আগে যেখানে একদিন না, বেশ কয়েকেদিনেও পানি পাওয়া যেত না, সেখানে এখন দিনের প্রায় সময় মিলছে পানি। তাই বলা যায় ২০১৬ সালটি ছিল নগরবাসীর পানি পাওয়ার বছর। ওয়াসার প্রতি মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হওয়ার বছরও বটে।

কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করার পর থেকে দৈনিক ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করতে পারছে ওয়াসা।

নগরবাসীর ক্রমবর্ধমান পানির চাহিদা মেটাতে জাইকার অর্থায়নে ২০০৬ সালে এ প্রকল্প হাতে নেয় চট্টগ্রাম ওয়াসা। ২০১২ সালের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণসহ নানা জটিলতায় কাজ শুরু হয় ২০১০ সালে।

স্থানীয় সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ নানা জটিলতায় তিন দফা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে অবশেষে চলতি বছরের নভেম্বরে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করে ওয়াসা।

১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটারের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে নভেম্বর মাস থেকে চালু হওয়া এই প্রকল্পের পানি সরাসরি পানযোগ্য বলে দাবি করছে ওয়াসা। তাদের মতে কর্ণফুলী থেকে সংগৃহীত এসব অপরিশোধিত পানি কয়েক ধাপে পরিশোধনের পর হয়ে যাচ্ছে সরাসরি পানযোগ্য।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ সম্প্রতি বলেন, ‘এই প্রকল্পের পানির উৎস কর্ণফুলী নদীর অপরিশোধিত পানি। অনবরত পানির প্রবাহ ঠিক রাখার জন্য নদীর কূলে ইনটেকের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রকল্পতে আসা পানির ছোট-বড় উভয় প্রকারের ভাসমান পদার্থ আটকে রাখার জন্য ভাসমান ফেন্স ও বারস্ক্রিন ব্যবহার করা হয়েছে। ফিল্টারে পানি পরিশোধনের পর ক্লোরিন মিশিয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। পরে ট্রান্সমিশন পাম্পের সাহায্যে দীর্ঘ ট্রান্সমিশন লাইন দিয়ে উচ্চচাপে নগরীর নাসিরাবাদ এলাকায় স্থাপিত রিজার্ভারে সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয় পুরো নগরে।

ওয়াসার ব্যবস্থপনা পরিচালক বলেন, ‘এই প্রকল্পের সরবরাহ করা পানি গুণের দিক দিয়ে বাজারজাত করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পানির সমান। তাই এ পানি সরাসরি টেপ থেকে খাওয়ার যোগ্য। ’

তবে সরাসরি এই পানি পানযোগ্য হলেও সেক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে পাইপলাইন লিকেজ। এই লিকেজের কারণে বিভিন্ন এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে নানা ব্যাকটেরিয়া। কোথাও আবার ড্রেনের ময়লা পানিও লিকেজ দিয়ে মিশে যাচ্ছে ওয়াসার সরবরাহ করা পানির সঙ্গে। তাই শতভাগ জীবাণুমুক্ত করে মূল প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ করা হলেও নগরবাসীর বাসার পর্যন্ত আসতে আসতে সেই পানি হয়ে যাচ্ছে জীবাণুযুক্ত।

এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘৪০-৫০ বছরের পুরোনো হওয়ায় কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৬০ শতাংশ পাইপ নষ্ট হওয়ার পথে। এর ফলে অর্ধেক প্রেশারে পানি সরবরাহ করাতে কিছু কিছু পাইপ ফেটে গেছে। পাইপ লিকেজ হওয়ার কারণে পাইপলাইনে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে পানির সঙ্গে মিশে যাছে। পাশাপাশি লিকেজ হয়ে যাওয়া বিভিন্ন এলাকায় ড্রেন থাকায় সেই ড্রেনের পানিও পাইপলাইনে প্রবেশ করছে। এর ফলে পানিতে জীবাণু ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এই পানি বাসাবাড়ির বেসিন থেকে সরাসরি পানে সমস্যা হতে পারে। না হয় এই পানি সরাসরি পান করা যেত।

তবে আশার বাণী শুনিয়ে ওয়াসার এমডি বলেন, ‘আশা করছি কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ফেজ-২ এর কাজ শেষ হলে এই সমস্যা আর থাকবে না। কারণ এই প্রকল্পের আওতায় পানি সরবরাহের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং একই সাথে বর্ধিত পানির সুষ্ঠু বণ্টন ব্যবস্থার জন্য সঞ্চালন, বিতরণ পাইপলাইন উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ কাজও করা হবে। ২০২০ সালের মধ্যে এই প্রকল্প শেষ হবে। এই প্রকল্প শেষ হলে আরও ১৪ কোটি লিটার পানি মিলবে। আর মদুনাঘাট পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষে নয় কোটি লিটার পানি মিলবে। এর ফলে নগরবাসীকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে পারবো।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬

টিএইচ/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।