বিভাগীয় বিদ্যুৎ প্রকৌশলী দফতরে কর্মরত কর্মচারীদের টিএ বিল প্রতি মাসে দেওয়া হয়। বিল তোলার জন্য একজন কর্মচারীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
অভিযোগ রয়েছেন, হেফজুর রহমান ৮৭ জন কর্মচারীর মূল বিলের বিপরীতে আরেকটি নকল বিল তৈরি করে সেখানে কর্মচারীদের কাজ থেকে স্বাক্ষর নিতেন। এতে কর্মচারীদের মূল বিলের কম দেখানো হতো। অর্থাৎ কারও বিল ১০ হাজার টাকা হলে তিনি (হেফজুর) তা হিসাব শাখা থেকে উত্তোলন করে ওই কর্মচারীকে দিতেন ৫ বা ৬ হাজার টাকা। নকল বিলে তা দেখানো হতো। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব দফতরের সিল এবং স্বাক্ষর থাকতো। ফলে কর্মচারীরা বিষয়টি বুঝতে পারেনি।
প্রায় দুই দশক ধরে এমন জালিয়াতি করে এলেও চলতি বছরের অক্টোবর মাসের বিল পরিশোধ করতে গিয়ে ২১ নভেম্বর বিষয়টি ধরা পড়ে। এতে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল। ওইদিন কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় বিভাগীয় বিদ্যুৎ প্রকৌশলী হাবিবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আনোয়ার হোসেন।
জানা গেছে, বিল দিতে গড়িমসি করায় লাইন ইলেক্ট্রিশিয়ান মনছুর মিয়া ও ইলেক্ট্রিক ফিডার মিলন চট্টগ্রাম স্টেশনে হেফজুর সঙ্গে দেখা বিল পরিশোধের জন্য চাপ দেয়। এসময় নিজের ব্যাগ থেকে বিল বের করতে গিয়ে নকল কপির সঙ্গে আসল কপিও বেরিয়ে আসে।
তারা বিষয়টি অন্যান্য কর্মচারীদের জানালে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী (ট্রেন লাইটিং) শাহ আলমের দফতরে বৈঠক করে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মচারীদের মধ্যে এখনো অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী কর্মচারীদের দাবি বিগত সময়ের সব বিল (পেইড ভাউচার) খতিয়ে দেখার। তারা বলছেন, হিসাব শাখা থেকে আগের বিলগুলো সংগ্রহ করলে তাদের স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলবে না।
এদিকে ৩ লাখ টাকায় বিষয়টি সুরাহা করার অভিযোগ উঠেছে এসএসএই (টিএল) শাহ আলমের বিরুদ্ধে। কর্মচারীদের অভিযোগ, জালিয়াতির ঘটনার সঙ্গে তার যোগসাজশ রয়েছে। তবে শাহ আলম বলছেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে বাংলানিউজকে বলেন, যারা গাড়িতে ডিউটি করে তারা শাহ আলমকে টাকা না দিলে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে। অনেক কর্মচারীকে লাইন ডিউটি না করিয়ে ছেড়ে দিয়ে তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। এসি অপারেটর শাহাবুদ্দিন, আবুল হাশেম, গোলাম মাওলা, ইলেক্ট্রিক ফিটার হানিফকে চুক্তির কাজে ব্যবহার করে।
তাদের অভিযোগ, পাওয়ার কারের ইঞ্জিনে কৌশলে সরকারি মালামাল পাচার করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে যাদের কাছে স্টোরের চাবি থাকে তাদের ব্যবহার করা হয়। এ ধরনের ঘটনা আরএনবি’র হাতে কয়েকবার ধরা পড়লেও টাকা দিয়ে সুরাহা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, টিএ বিল পাস করাতে হেড বিল মান্নানকে ১০ হাজার টাকা এবং ডিএফএ (পাহাড়তলী) দফতরে ১০ হাজার টাকা দিয়ে পাস করিয়ে পে-অ্যান্ডক্যাশ অফিসে পাঠানো হয়।
বিষয়টি তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) মো. আবদুল হাই।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৭
এমইউ/টিসি/এসএইচ