ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

তসলিমউদ্দিন চৌধুরী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন

চট্টগ্রাম প্রতিদিন ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭
তসলিমউদ্দিন চৌধুরী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছিলেন তসলিমউদ্দিন চৌধুরী’র শোক সভায় অতিথিরা। ছবি: সোহেল সরওয়ার/বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: দৈনিক পূর্বকোণের সম্পাদক স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরী’র শোক সভায় বক্তারা বলেছেন, তিনি শুধু একজন সম্পাদকই ছিলেন না, ছিলেন নানা গুণের অধিকারী অনন্য একজন ব্যক্তি। জীবনকে কিভাবে গঠন করতে হয়, কিভাবে চলতে হয়, মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার সূক্ষবোধগুলো ছিল তাঁর মধ্যে প্রবলভাবে।

শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পিএইচপি ভিআইপি লাউঞ্জে ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শুকলাল দাশের সঞ্চালনায় এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

আমৃত্যু প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য থাকা তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণে এই শোকসভার আয়োজন করে ক্লাব।

এতে বক্তারা আরও বলেন, তসলিমউদ্দিন চৌধুরী হচ্ছে একটি সংগ্রামের নাম। তার মাঝে কোন ক্লান্তি ছিল না।

তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করার চেষ্টা করেছেন। অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ। বুয়েট থেকে পাশ করা একজন ব্যক্তি সাংবাদিকতায় এলেন। এটা সাংবাদিকদের জন্য বিরাট পাওনা। তিনি শুধু একজন সম্পাদকই ছিলেন না, তিনি সম্পাদক পদকে ছাপিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পেরেছিলেন তার কাজের মধ্য দিয়ে।

শোক সভায় তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর ছোটভাই ও দৈনিক পূর্বকোণের নির্বাহী সম্পাদক ডা. ম. রমিজ উদ্দীন চৌধুরী এই শোক সভা আয়োজনের জন্য চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির প্রতি তাঁর অনেক বেশি ঝোঁক ছিল। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার ফাইনালের ছবি সারাদেশের কোন পত্রিকা ছাপাতে পারেনি। একমাত্র পূর্বকোণ পেরেছিল।

তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, মাত্র ৪২ বছর বয়সে তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে না পড়লে চট্টগ্রাম তথা দেশকে অনেক কিছু দিতে পারতেন। আমি বড়ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম দুই ধরণের ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই লিখতে। লিখলে ক্যান্সার রোগীদের জন্য বিরাট গাইড লাইন হত। এমনকি তার চিকিৎসক সিঙ্গাপুরের প্রফেসর ডা. রউফও বলেছেন, একটা ক্যান্সার আছে এমন রোগীও এতদিন বাঁচতে পারেন না। অথচ আপনি দুই ধরণের ক্যান্সার নিয়ে বেঁচে আছেন।

তিনি তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর ধৈর্য্য শক্তির প্রশংসা করে বলেন, তিনি অসুস্থ হবার পর থেকে ৮৭০০ দিনের প্রতিটি দিন সকালে উঠে চিন্তা করতে হত আজ কিভাবে কাটাব। দিনে ছয়বার পেটের পাইপ ব্যবহার করে খাওয়া গ্রহণ করতে হতো। আসলে তিনি অসম্ভব বুদ্ধিমান ছিলেন। তিনি তার শরীরের সকল সুবিধা অসুবিধার কথা বুঝতে পারতেন। সাথে সাথে আমাকে কিংবা চিকিৎসককে বলতেন।

প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর মতো বিভিন্ন গুণের অধিকারী মানুষ সমাজে বিরল। এই চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের জন্যও তার অনেক অবদান আছে। ক্লাবের সৌন্দর্যবর্ধন কাজে তিনি যেসব সিদ্ধান্ত নিতেন, তা আবার আমাদের সাথে পরামর্শ করতেন। অথচ তিনি পরামর্শ না করলেও আমরা তার সিদ্ধান্ত মেনে নিতাম। তার মাঝে এই বিনয় ছিল। যেকোন বিষয় নিয়ে তার সাথে কথা বলা যেত। তার গুণের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তাঁর বাবা ইউসুফ চৌধুরীও ছিলেন বিশাল হৃদয়ের একজন ভাল মানুষ। তিনি যোগ্য তিন সন্তান রেখে গিয়েছিলেন।

তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে তানিতা চৌধুরী সভায় বলেন, আমার বাবা আজ আমাদের মাঝে নেই। আমাদের সবাইকে একে একে যেতে হবে এটাই নিয়ম। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হল, যিনি আমাদের কাছ থেকে চলে গেছেন, তার জীবন থেকে অনেক কিছু শেখার আছে, জানার আছে। অনুসরণ করার আছে। আমরা যেন সেসব অনুসরণ করতে পারি। তিনি বলেন, আমার পিতা ২৪ বছর অসুস্থ ছিলেন, কিন্তু কখনোই বুঝতে দেননি। আমাদের পিতৃস্নেহ-ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত করেননি। গত এক বছর ধরে তিনি খুব বেশি অসুস্থ ছিলেন। তখনো তিনি থেমে যাননি।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি কলিম সরওয়ার বলেন, সংবাদপত্রকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান করার চিন্তা কখনোই তার মাঝে ছিল না। তিনি ছিলেন একজন আদর্শবান ব্যক্তিত্ব। বুয়েট থেকে পাশ করা মেধাবী এ সম্পাদক ছিলেন ষ্পষ্টবাদী। তিনি তাঁর গুণ দিয়ে সংবাদপত্রের সকলস্তরের মানুষের মন জয় করে নিয়েছিলেন।

চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রতন কান্তি দেবাশীষ বলেন, তসলিমউদ্দিন চৌধুরী শুধু একজন সম্পাদক নন, একটি প্রতিষ্ঠান, একটি আদর্শ। কিভাবে সাংবাদিকদের পেশাগত উন্নয়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি পরামর্শও দিতেন।

অনুষ্ঠানে তসলিমউদ্দিন চৌধুরী’র পুত্র তৌকির চৌধুরী এবং জামাতা শাহেদ চৌধুরীসহ তাঁর স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন।

শোক সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন প্রেসক্লাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কাজী আবুল মনসুর, যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, চট্টগ্রাম সাংবাদিক হাউজিং সোসাইটির সাবেক চেয়ারম্যান মঈনুদ্দিন কাদেরী শওকত, সিইউজের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, সাবেক সভাপতি মোস্তাক আহমদ, দৈনিক প্রথম আলোর উপ-বার্তা সম্পাদক ওমর কায়সার, সিইউজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজিমুদ্দীন শ্যামল, ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, দৈনিক পূর্বকোণের স্পোর্টস রিপোর্টার দেবাশীষ বড়ুয়া দেবু, হাউজিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম, প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য জাহিদুল করিম কচি, ড. সৈয়দ আবদুল ওয়াজেদ, ইসকান্দর আলী চৌধুরী, ওল্ড ফৌজিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মেজবাহ উদ্দিন আহমদ, লায়ন দিদারুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।

শুরুতে আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত পরিচালনা করেন ক্লাবের স্থায়ী সদস্য জালাল উদ্দিন চৌধুরী। এছাড়া তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভায় স্থপতি তসলিমউদ্দিন চৌধুরীর জীবনী পাঠ করেন ক্লাবের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী।

শোকসভায় প্রেস ক্লাবের সহসভাপতি মনজুর কাদের মনজু, অর্থ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, ক্রীড়া সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক রোকসারুল ইসলাম, কার্যকরী সদস্য ম. শামসুল ইসলামসহ চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এবং সিইউজের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৭

টিএইচ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।