চট্টগ্রাম: বাবা অন্ধ হলেও ছিলেন হাফেজ। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে বছর দশেক আগে ছেড়েছেন সংসার, আজও ফেরা হয়নি ঘরে।
জন্মের পর থেকে পৃথিবীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পারা দৃষ্টিহীন মোরশেদা আক্তারের জীবনের গল্পটা এমনই। পড়ছেন চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে। জীবন সংগ্রামে অভাব যখন প্রতিবন্ধকতা, সেখানে তা জয় করার অদম্য স্পৃহা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। তাই পড়ালেখা শেষ করে হতে চান শিক্ষক। ভাগ নিতে চান মায়ের সংগ্রামী জীবনের।
প্রতিটি দিনকে নতুন করে উপলব্ধি করা মোরশেদার তাই নিজেকে নিয়ে সহজ সরল স্বীকারোক্তি, কারো দয়া নয়, সহযোগিতা থাকলে সব প্রতিবন্ধকতা জয় করতে পারবেন তিনি।
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি ইউনিয়নের সুলতান মাওলানা পাড়া গ্রামে বাড়ি মোরশেদার। শিক্ষা জীবনের সূত্রে থাকেন চট্টগ্রাম নগরে। চার বোনের মধ্যে মোরশেদা দ্বিতীয়। বড় বোন সুস্থ স্বাভাবিক, বিয়ের পর থাকেন শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু পরের তিন বোনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এরমধ্যে মোরশেদা ডিগ্রিতে পড়ছেন, অন্য দুই বোন পড়ছেন উচ্চমাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষে।
এই মোরশেদার সফলতার কোনো গল্প হয়তো নেই, তবে আছে নিভু নিভু করে জ্বলতে থাকা একটি স্বপ্নের গল্প।
মোরশেদা জানান, কষ্ট করে পড়া লেখা করছি। হতে চাই শিক্ষক। কিন্তু শারিরীক প্রতিবন্ধকতা হয়তো নিজের চেষ্টায় জয় করতে পারি তবে আর্থিক প্রতিবন্ধকতা জয় করা দুঃসাধ্য। তিন বোনের পড়ার খরচ যোগাতে মায়ের জীবন ওষ্ঠাগত। প্রতিবন্ধী ভাতা পাই, কিন্তু তা দিয়ে সব খরচ মেটানো যায় না। মা কষ্ট করে আমাদের পড়ার খরচ যোগান। কখনো পূরণ করতে পারলেও কখনো সম্ভব হয় না।
মোরশেদার মা ফরিদা বেগম বলেন, আমার কোনো ছেলে নেই। চারটি মেয়ে। এর মধ্যে তিনজনই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তাদের পড়া লেখার খরচ চালাতে পারি না। কারো সহযোগিতা পেলে হয়তো তাদের পড়াতে পারবো।
২০১৫ সালে এসএসসি ও ২০১৭ সালে এইচএসসি পাস করেন মোরশেদা। শিক্ষা জীবনে এত দূর পাড়ি দেওয়ার পিছনে একমাত্র সাহস সামাদ স্যার।
মুরাদপুর সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক মো.আব্দুর সামাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমার সাধ্য মত চেষ্টা করি তাদের সহযোগিতা করতে৷ কিন্তু সব সময় যে করতে পারি তা নয়। এই মেয়েগুলো পড়া লেখা শেষ করে ভালো কিছু করতে চায়। কিন্তু তাদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ নেই। সমাজের বিত্তবান যারা আছেন তারা যদি তাদের দিকে সুনজর দেন তাহলে অনেক পরিবার আর্থিক অনটন থেকে মুক্তি পাবে।
তিনি বলেন, মোরশেদাদের মত নারীরা সমাজে কিভাবে টিকে আছে তা জানেন না অনেকে। নারী দিবসে সফল নারীদের গল্প অনেকে বলবেন। নারী উন্নয়নে হবে সভা সেমিনারও। কিন্তু অন্ধকারেই রয়ে যাবে মোরশেদার মত জীবন যুদ্ধে টিকে থাকা না বলা গল্পগুলো।
বাংলাদেশ সময়: ১০০১ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২২
এমআর/টিসি