ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার থিমকান্ট্রি বাংলাদেশ

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
কলকাতায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার থিমকান্ট্রি বাংলাদেশ কলকাতায় জমে উঠেছে ২১তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাংলাদেশ প্যাভেলিনিয়ন। ছবি: বাংলানিউজ

কলকাতা: কলকাতার সায়েন্স সিটি প্রাঙ্গনে শুরু হয়েছে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা’। ২১তম এ বাণিজ্য মেলার ফোকাস কান্ট্রি বাংলাদেশ ও ইরান এবং সহকারী দেশ হিসেবে আছে আফগানিস্তান ও থাইল্যান্ড।

 

মেলা শুরু হয়েছে ১৬ ডিসেম্বর। চলবে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৮ দিনের এই মেলায় অংশ নিয়েছে ২০টি দেশ এবং ভারতের ২২টি রাজ্য।

বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে সায়েন্স সিটিতে মোট ৬৫০টি স্টলে চলছে কেনাবেচা। খাবার থেকে শুরু করে পোশাক, আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, প্রসাধনী, ঘরসাজানো এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার রকমারি জিনিসপত্র দিয়ে সাজানো হয়েছে সেসব স্টল।  

উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, বাণিজ্য মেলার মূল উদ্দেশ্য হলো কলকাতাকে শিল্প ও বাণিজ্যের পীঠস্থান হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে কলকাতার প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে চান বাণিজ্য মেলার উদ্যোক্তারা।

আয়োজক কমিটির সভাপতি উৎপল রায় বলেন, বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) অবদি মেলায় বিক্রি হয়েছে, ৪৯ কোটি ৭০ লাখ রুপির। সব মিলিয়ে অর্ডার পাওয়া গেছে আরও ৫০ কোটির কাছাকাছি। ফলে সেদিক থেকে দেখতে গেলে এবারে বাণিজ্য মেলা গতবারের থেকে ভালো অবস্থায় আছে।

এবারে বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়েছে ৩১টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান। তারমধ্যে ২৩টি সরকারি ভাবে অংশ নিয়েছে, বাকি ৮টি প্রতিষ্ঠান এসেছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। বেচাকেনায় কলকাতাবাসীর ভালোই সাড়া পাচ্ছেন মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি বিক্রেতারা। আবার অনেক প্রতিষ্ঠান এবারই প্রথম অংশ নিয়েছে।  

কেসিএস হ্যান্ডলুম প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মী বলেন, খুবই অন্যরকম অভিজ্ঞতাটা হচ্ছে। কারণ, এটা আমার প্রথম  ভারতের বাণিজ্য মেলায় আসা। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, ভাষার মিল রয়েছে। এবং সবাই খুব আন্তরিক। বেচাকেনা ভালোই হচ্ছে। কলকাতাবাসীর মধ্যে ভালোই চাহিদা আছে জামদানি, তাঁত, টাঙ্গাইল শাড়ির।

অপর এক নারী বিক্রেতা বলেন, কলকাতাবাসী জামদানি শাড়ি খুবই পছন্দ করছেন এবং আমাদেরও দিতে পেরে ভালো লাগছে৷ এছাড়া আমাদের দেশের জাতীয় পতাকার রঙের আদলে শীত চাদর নিয়ে এসেছি। উনারা খুবই ভালোভাবে নিয়েছেন। অনেক বিক্রি করতে পেরেছি।

এছাড়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে বাসন-কোসন, শীতবস্ত্র, ফুড অ্যান্ড বেভারেজ সব ধরনের বাংলাদেশের পণ্যর ভালো চাহিদা রয়েছে। আসলে কলকাতায় চাহিদা থাকলেও সারাবছর বাংলাদেশি পণ্য মেলে না। তাই অনেকে প্রতিষ্ঠান শহরবাসীর সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে চলে। বাণিজ্য মেলায় সেসব বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেওয়ায় কলকাতার ক্রেতারা ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। আবার অনেকে আসছেন বাংলাদেশের টানে।

উত্তর কলকাতা থেকে মিসেস সেন কেনাকাটা সারছেন ‘বনলতা’ থেকে। সেখান থেকে কয়েক ধরনের নকশী কাঁথা ও কাঁটায় বোনা আসবাব ঢাকার কভার কিনেছেন। তিনি বলেন, ফেসবুকে লাইভ থেকে আমরা ওনাদের প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারি। সে কারণেই উনাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম স্টলে এসে। পছন্দসই জিনিস, তাই কয়েকটা কিনে ফেললাম।

একই দোকান থেকে কেনাকাটা করেছেন তার সঙ্গে আসা পারমিতা। তার অভিমত, বাংলাদেশ যাইনি, দেশটাকে চিনি সামাজিক মাধ্যমের মধ্য দিয়ে। বেশ পছন্দ হলো কটা জিনিস। তাই কিনে ফেললাম বিছানার চাদর, নকশী কাঁথা আরও অনেক কিছু। বাড়িতে গিয়ে বিছাবো, বন্ধুদের দেখাবো যে, বাংলাদেশের জিনিসপত্র ব্যবহার করছি। এটা তো বাংলাদেশে না গেলে আমাদের পক্ষে পাওয়া মুশকিল। তাই না!

আবার অনেকেই আসছেন শেকড়ের টানে। এই যেমন, দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা অধুনা বগুড়াবাসী, নন্দা সেন। কলকাতার একটি কলেজের সাবেক অধ্যাপিকা, ৬১ সালের পর আর কোনদিন যাওয়া হয়নি বাংলাদেশ। বয়স বাড়ার কারণে শেকরের টানটা একটু বেশিই অনুভব করেছেন। আজও মনে করেন, তিনি বাংলাদেশের লোক।

নন্দা সেন বলেন, বগুড়ায় আমার জন্ম, পড়াশোনার অনেকটা সেখানে। ভিক্টোরিয়া স্কুলে পড়তাম। তারপরে উদ্বাস্তু হয়ে এ শহরে পা রাখা। তবে শেকড়ের টানটা আজও রয়ে গেছে। সেজন্য কলকাতায় বাংলাদেশ কোন কিছুতে অংশগ্রহণ করলে, খবর পেলেই চলে আসি। কিসের জন্য আসি বলতো, শেকড়ের টানে। কেউ এসেছে ঢাকা থেকে, কেউ চিটাগাং থেকে। কিন্তু বগুড়ার কেউ আসে না।

বাংলা ভাষায় কথার আদান-প্রদানে ক্রেতা বিক্রেতার মনের মিল আর শেকড়ের টান, সব মিলিয়ে এবারে জমে উঠেছে ২১তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার বাংলাদেশ প্যাভেলিনিয়ন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২২
ভিএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।