ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মেসি-নেইমারে বিভক্ত কলকাতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৭ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৪
মেসি-নেইমারে বিভক্ত কলকাতা ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: ঐতিহাসিকভাবেই কলকাতার মানুষ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত। একদিকে যেমন উত্তর কলকাতার মানুষ অন্যদিকে দক্ষিণ কলকাতা, একদিকে ঘটি আর অন্যদিকে বাঙাল।

আবার খেলার দিক থেকে কেউ হয়তো ইস্টবেঙ্গল, তার বিপরীতে অন্যজন মোহনবাগান। রাজনৈতিকভাবে একজন যদি হাতচিহ্ন তো অন্যজন পদ্মফুল, কিংবা এ সিপিএম তো ও  তৃণমূল।

তবে ভাগাভাগির কিন্তু এখানেই শেষ না। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর কলকাতা অন্তত আরো দুটি ভাগে পরিষ্কার ভাগ হয়ে যায়। সেটি বিশ্বকাপ ফুটবলকে নিয়ে। ব্রাজিল আর  আর্জেন্টিনার ফটুবল সমর্থকদের মধ্যে এই ভাগাভাগি। যদিও আর মাত্র ১৩ দিন বাদেই শুরু হচ্ছে বিশ্ব ফুটবলের সেরার লড়াই, কিন্তু ইতোমধ্যেই ফুটবল জ্বরে কাঁপতে শুরু করেছে কলকাতা।

তবে এটা ঠিক, লোকসভা ভোট থাকায় একটু দেরি করে শুরু হয়েছে এই কাঁপুনি। এতোদিন পাড়ার মোড় থেকে অফিস ফেরতা চায়ের দোকানের আড্ডা দখল করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গান্ধী। কিন্তু নির্বাচনের পাট চুকতেই আড্ডার রঙ গেছে বদলে। সেটা গেরুয়া পদ্ম আর তিন রঙের হাত চিহ্ন থেকে বদলে এখন হয়েছে সাদা-নীলের আর্জেন্টিনা আর হলুদ- সবুজ-নীলের ব্রাজিলে।

একদিকে মেসি অন্যদিকে নেইমার আর টেংগো সিলভা। শুধু কলকাতার মানুষই নয়, ভাগ হয়ে গেছে কলকাতার দেওয়ালগুলিও। নির্বাচনি দেওয়াল লিখনের উপর নির্বিচারে এবং নির্ভয়ে সাদা রঙ করা চলছে। এর উপর আঁকা হবে প্রিয় খেলোয়াড়দের ছবি, প্রিয় দলের পতাকা।

আকাশে উড়ছে নানা দলের সমর্থনের ঘুড়ি। দেদার বিকোচ্ছে সেইসব ঘুড়িও। সঙ্গে আছে বিভিন্ন দেশের পতাকা। কলকাতার এক বিখ্যাত শপিং মলে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, দেদার বিকোচ্ছে বিভিন্ন দেশের জার্সি। তবে ব্রাজিলের জার্সির চাহিদা বেশি, তার পরেই আছে আর্জেন্টিনা। এছাড়া জার্মানি, উরুগুয়ের জার্সিরও খোঁজ করছেন ক্রেতারা।

কলকাতা যখন ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত তখন বাঙালির প্রিয় মিষ্টিতে তার আঁচ লাগবে না এমনটা হতে পারে না। কলকাতার বেশিরভাগ দোকানে হৈ হৈ করে বিক্রি হচ্ছে এখন বিশ্বকাপ মিষ্টি- ফুটবল সন্দেশ, বিশ্বকাপ কেক।

পিছিয়ে নেই কলকাতার বড় রেস্তোরাঁগুলিও। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বড় পর্দায় খেলাগুলি দেখানো হবে বলে জানা গেছে।

সঙ্গে থাকছে বিভিন্ন দেশের বিশেষ খাবারের আয়োজন। তবে দলের দলাদলিতে যতই দুলুক কলকাতাবাসী, একটি জায়গায় কিন্তু তারা এক। আর সেটি হোল ফুটবল।

বাড়িতে কড়া নির্দেশ আগামী একমাস বন্ধ থাকবে সমস্ত মেগা সিরিয়াল দেখা। তখন শুধুই ফুটবল। ফলে এ অলিখিত ঘোষণায় কিছুটা বিপন্ন সিরিয়াল-আসক্তরা। যদিও অনেকে গৃহশান্তি বজায় রাখতে আলাদা টেলিভিশন সেট কিনে নিয়েছেন।

আর যেনতেন প্রকারেণ ‘নাইট ডিউটি’ বাতিল করে অথবা অফিস থেকে ভারতীয় সময় রাত সাড়ে ৯টার আগেই বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কলকাতার ফুটবলপ্রেমীরা।

আর সেই কারণেই কলকাতার রাস্তা আর গলিগুলি ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে সাও পাওলোর রাস্তাগুলির মতো। কারণ ভারত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ না পেলেও ক্রমশ ফুটবল-মগ্ন হয়ে পড়ছে কলকাতা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।