ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার ইফতারের নানা রঙের ছবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ২০, ২০১৪
কলকাতার ইফতারের নানা রঙের ছবি ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তের সঙ্গে কলকাতায় যথাযথ শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হচ্ছে রমজান। আর এই রমজানের এক মাস রোজা  রাখছেন কলকাতার ইসলাম ধর্মের মানুষরা।

রোজার পর সমস্ত জায়গায় পালিত হচ্ছে ইফতার।

কলকাতার ইফতারের সেই ছবি পাঠকদের জন্য তুলে ধরতে কলকাতার বেশ কিছু জায়গায় হাজির হয়েছিল বাংলানিউজ২৪। শুধু ইফতারের খাওয়াদাওয়া নয়, ইফতারের সময় বাজারে বিভিন্ন জিনিসের দাম, ক্রেতাদের মতামত এই সমস্ত কিছুর খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে বাংলানিউজ২৪-এর তরফে।

কলকাতার  বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে দেখা গেল কোথাও তাজা খেজুর কোথাও শরবত কোথাও ছাতু আবার কোথায় ভেজা চাল ইত্যাদি দিয়ে ইফতার করছেন সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গে আছে ফল, মিষ্টি,তেলে ভাজা সহ বিভিন্ন খাবার।

আর ইফতারের জন্যই ফল, মিষ্টি, শরবত, সেমাই, নানারকম তেলে ভাজা নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে হাজির হয়েছেন বিক্রেতারা। তবে খাবার তালিকায় এখানেই শেষ নয়। এর সঙ্গে সব থেকে বেশি যে খাবারটির চাহিদা বেশি চোখে পরলো সেটি হালিম। সঙ্গে কাবাব, বিরিয়ানি, ফিরনি ইত্যাদি তো আছেই।

দক্ষিণ কলকাতার পার্ক সার্কাস অঞ্চলে এক হালিম বিক্রেতা জানালেন সাধারণ সময় প্রতিদিন বিকেলের হালিমের চাহিদার থেকে ইফতারের সময় চাহিদা দ্বিগুণ হয়েছে। হালিমের সঙ্গে আছে জিলিপি, মুট, ডাবের পানি, দুধ ইত্যাদি।

অনেকে ইফতারের জন্য বেছে নিয়েছেন দই,চিড়া জাতীয় হালকা খাবার। তবে প্রায় সব জায়গাতেই ফল শরবত খাওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেল।

ইফতারের খাওয়া দাওয়ার খোঁজ খবর করতে গিয়ে কলকাতার এক বয়োজৈষ্ঠ নাগরিক জানালেন, ইফতার শব্দটির আরবি শব্দটির মূল আরবি শব্দ ‘ফতূর’ । ‘ফতূর’ শব্দের অর্থ নাস্তা বা হাল্কা খাবার। তাই সারাদিন রোজা পালনের পর হালকা খাবার দিয়েই ইফতার করা উচিৎ।

এতো গেল ইফতারের খাবার দাবার। তবে ইফতারের বাজারের দিকে তাকালে পকেটের সীমাবদ্ধতার কথা প্রথমে মনে আসছে কলকাতার মধ্যবিত্ত মানুষদের।

ফলের দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় নাগালের বাইরে যেতে বসেছে। ঠিক তেমনই বাকি বাজারের অবস্থা। আর এই কারণেই ইফতারের পাতে কিছুটা হিসাব করে সাজাতে হচ্ছে বলে মত কলকাতার সাধারণ মানুষদের।

যদিও রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবার বলা হচ্ছে ফল এবং সব্জির দাম কমাতে মধ্যস্বত্ব ভোগীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে সরকার, কিন্তু এর ফলে বিশেষ কিছু কাজের কাজ হচ্ছে বলে অন্তত মনে করছেন না কলকাতার নাগরিকরা।

কলকাতার বাজারগুলি ঘুরে দেখা গেল বিস্তর দামের ফারাক রয়েছে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে। সব্জির ক্ষেত্রে সেই ফারাকটা প্রায় কোথাও কোথায় ১০০% থাকছে।

দাম বেড়েছে মাছ মাংস, ডিমের বাজারেও। ঈদ আসার মুখে চিনির দামের বেশ কিছুটা বৃদ্ধির আশা করছেন দোকানিরা। কলকাতার এক ফল ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল দাম বাড়ার ফলে ইফতারের সময় ফলের চাহিদা কমেছে বেশ কিছুটা। হোটেল মালিকদের গলাতেও একই সুর। খাবারের দাম আর মান বজায় রাখতে গিয়ে তারা নাজেহাল হচ্ছেন।

তবে এর মধ্যেও ইফতারে জন্য বিশেষ বিশেষ খাবারের আয়োজন করতে হোটেলগুলি বাদ দিচ্ছেনা। তবে কলকাতার চিকিৎসকরা ইফতারের সময় বেশি তেলে ভাজা বা গুরুপাক খেতে নিষেধ করছেন। তাদের মতে রোজা ভাঙার পর বারে বারে এবং বেশি করে খাওয়া উচিৎ জল।

কারণ বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় ঘাম হচ্ছে। তার উপর রোযার সময় দীর্ঘক্ষণ উপবাস। এর মধ্যেই অনেককে কঠোর শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করতে হচ্ছে। এর ফলে শরীরে জলের মাত্রা কমে যাচ্ছে। তাই রোজা ভাঙার পর ডাবের জল ,শরবৎ ইত্যাদি খেতে বলছেন তারা। তবে ঠাণ্ডা পানীয় কখনই নয়।

তার আরও বলছেন রোজা ভাঙার পর একদম হাল্কা খাবার দিয়ে ইফতার শুরু করতে। তার পর ধীরে ধীরে খাদ্য গ্রহণ করতে। বিশেষ করে যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য সতর্কবাণী জারি করছেন কলকাতার চিকিৎসকরা।

কলকাতার ফলের বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল সব থেকে বেশি চাহিদা খেজুরের। শুধু দেশী খেজুর নয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমদানি করা খেজুরেরও যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। এছাড়া রয়েছে আপেল, বেদানা, কলা, শসা পেয়ারার চাহিদা। চাহিদা রয়েছে আঙুরের।

কলকাতার নিউমার্কেট এলাকার দোকানিরা জানাচ্ছেন দুপুর একটার পর থেকেই ইফতার উপলক্ষে কেনাকাটা শুরু হয়ে যাচ্ছে। আছর নামাজের পর ক্রেতাদের ভিড় সব থেকে বেশি।

বাজার ঘুরে দেখা গেল বিশাল শিকের সঙ্গে সাজানো সুতি কাবাব, জালি কাবাব, টিকা কাবাব, ডিম চপ, কাচ্চি, তেহাতি, পোলাও, খাসির রানের রোস্ট, দইবড়া, হালিম, নূরানি লাচ্ছি, পনির, বিভিন্ন ধরনের কাটলেট বিক্রি হচ্ছে দেদার।

সঙ্গে আছে পেস্তা বাদামের শরবত, ছানা মাঠা, কিমা পরটা, বিরাট আকারের জিলাপি সহ নানা পদের খাবার। আর এই সব সাজিয়ে বসে পড়েছেন বিক্রেতারা। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফল, পিঠা-পায়েস, মিষ্টিসহ ইফতারের নানা সামগ্রী বিক্রি হচ্ছে কলকাতার বিভিন্ন বাজারে।

কলকাতায় অনেক বাড়িতেই ইতিমধ্যেই জমে উঠেছে ইফতার পার্টি। শুধু বাড়িতেই নয় কলকাতার বিভিন্ন সংগঠনও আয়োজন করেছে ইফতার পার্টির। আর সব কটি জায়গায় রয়েছে খাওয়া-দাওয়ার এলাহি আয়োজন।

বাদ যাচ্ছেনা ছোলা, মুড়ি, ঘুগনি, বেগুনি, আলুর চপ,পেঁয়াজের চপ প্রভৃতিও। তবে মধ্যবিত্তরা সাধ আর সাধ্যের ব্যবধান ঘোচাতে বাজারের দরাদরিতে অংশ নিলেও হাল ছেড়েছেন নিম্নবিত্তরা।

কলকাতার শিয়ালদা এলাকার এক মালবাহী ভ্যান চালককে প্রশ্ন করলে তিনি জানালেন, ইচ্ছে মত পাত সাজিয়ে ইফতার করার সাধ্য তার নেই। তাই মুড়ি ছোলা, কিংবা মুড়ি আর পেঁয়াজের চপ দিয়েই তিনি ইফতার সারছেন। দিনের বাকি রোজগারটুকু সঞ্চয় করে রাখছেন বড়িতে থাকা তার দুই সন্তান আর স্ত্রীর খাবারের জন্য। তবে তার ইচ্ছা আছে ঈদে স্ত্রী এবং সন্তানদের নতুন পোশাক কিনে দেবার। তাই ইফতারে ১০-১৫ রুপির বেশি খরচ তিনি করতে পারছেন না।

এই রকমই মিশ্র চেহারা দেখা গেল কলকাতার ইফতারের বাজারে। দাম বেশি থাকলেও বছরের এই বিশেষ সময়ে সাধ আর সাধ্যের লড়াই করে যে যার সাধ্যের মধ্যে নিজের মত করে পালন করছে ইফতার।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৪ ঘণ্টা, ২০ জুলাই , ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।