ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

৩ বার কন্যা জন্ম দেওয়ায় পিটিয়ে খুন

আউটপুট এডিটর, কো-অর্ডিনেশন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪
৩ বার কন্যা জন্ম দেওয়ায় পিটিয়ে খুন প্রতীকী

ঢাকা: স্বামী ঠাকুরদাস সরেনের অভিযোগ গুনমনি সরেন (৩০) পরপর তিনবার কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তাই সে এ সংসারে থাকার উপযুক্ত নয়।

‘অলক্ষ্মী'  গুনমনি এখন সংসারে ‘বোঝা' হয়ে গিয়েছে৷

ঠাকুরদাস পুত্রলাভের আশায় দ্বিতীয় বার বিয়ের পিড়িতে বসেন৷ দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানসম্ভবা হওয়ায় গুণমনি’র উপস্থিতি সংসারে অমঙ্গল ডেকে আসতে পারে৷ ওই ধারনার বশবর্তী হয়ে গুনমনিকে পিটিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করে ঠাকুরদাস ও তার পরিবারের লোকজন৷

এ ঘটনা শুক্রবার রাতে ঘটে পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলার বাঘমুণ্ডি থানার বোঙাদা গ্রামে। এই ঘটনায় গুণমনি’র স্বামী ঠাকুরদাস সরেন, শ্বশুর কর্মা সরেনসহ সতীন মঙ্গলী সরেনকেও গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷

তাদের শনিবার দুপুরে পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে ১৪দিন জেল হেফাজতে পাঠানো হয়৷ গুনমনি‘র বাবা নেপাল মাণ্ডি’র অভিযোগের ভিত্তিতে শুক্রবার রাতেই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে বাঘমুণ্ডি থানার পুলিশ৷

বছর দশেক আগে গুণমনি’র সঙ্গে ঠাকুরদাসের বিয়ে হয়৷ গুনমনি’র বাপের বাড়িও ওই বোঙাদা গ্রামে৷ বিয়ের পর সুখেই কাটছিল স্বামী-স্ত্রী’র দাম্পত্য জীবন৷ ঝামেলা শুরু হয় বিয়ের প্রায় দেড় বছর পর৷

গুনমনি প্রথম কন্যা সন্তান প্রসব করেন৷ তবে সংসারের এই অশান্তি মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টাই করছিলেন ওই বধূ৷ কিন্তু তারপর গুনমনি দু'বারই কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ায় তার ওপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে শ্বশুরবাড়ির লোকজন৷

পুত্রলাভের আশায় চাষাবাদের কাজ করা ঠাকুরদাসকে আবার বিয়ে দেওয়া হয়৷ বিয়ের তিন বছর পর দ্বিতীয় স্ত্রী অন্তঃস্বত্ত্বা হন৷ গুনমনি’র বাবা নেপাল মাণ্ডি বলেন, মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুত্রসন্তান চেয়েছিল৷

আমার মেয়ে তিনবার কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়াতেই ওরা মেয়েকে ‘অলক্ষ্মী' অপবাদ দেয়৷ জামাই’র দ্বিতীয় স্ত্রী গর্ভবতী হওয়ায় ওদের ধারনা হয় সংসারে গুনমনি’র উপস্থিতি অমঙ্গল হতে পারে৷ তাই মেয়েকে ওরা মেরে ফেলল৷

গুনমনির অত্যাচার, অপমান সহ্য করতে না পেরে তার বাবাকে সব কিছুই জানান৷ কিন্তু দিনমজুর, সামান্য চাষাবাদ করা নেপাল মাণ্ডি মেয়েকে সংসারে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে বলেছিলেন আঁচ করতে পারেননি এমন ঘটনা ঘটবে৷

শুক্রবার রাতে নানাভাবে গুনমনিকে খোঁটা দিচ্ছিলেন তার সতীন৷ সেই সময় দু'জনের তুমুল ঝামেলা বাধে। এরপরই গুনমনিকে লাঠি পেটা করে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়৷

মেয়ের শ্বশুরবাড়ির পড়শি’র কাছ থেকেই রাতেই খবর পান নেপাল মাণ্ডি৷

তিনি গিয়ে দেখেন মেয়ের মৃতদেহ পড়ে রয়েছে৷ বারবার প্রশ্ন করেও মেয়ের শ্বশুর বাড়ি থেকে কোনও উত্তর পাননি নেপাল৷ রাতেই বাঘমুণ্ডি থানার পুলিশকে জানান তারা৷ পুলিশ জানিয়েছে, গুনমনি‘র গলায় কালশীটে দাগ রয়েছে৷

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।