ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

নয়াদিল্লি থেকে খুররম জামান

বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীকে নিয়ে আর্কাইভ ও প্রদর্শনী

ডিপ্লোম্যাটিক অ্যাফেয়ার্স করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪
বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীকে নিয়ে আর্কাইভ ও প্রদর্শনী বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী

খুররম জামান, নয়াদিল্লি থেকে: বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জীবন-সংগ্রাম সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য একটি আর্কাইভ ও প্রদর্শনী আয়োজনের ব্যাপারে দেশ দুটি সম্মত হয়েছে।

বুধবার বিকালে নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর ও ভারতের সংস্কৃতিমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক যৌথ বৈঠক করেন।

বৈঠক থেকে বেরিয়ে আসাদুজ্জামান নূর গণমাধ্যমকর্মীদের একথা জানান।

নূর বুধবার সার্ক সংস্কৃতিমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নিতে নয়াদিল্লিতে আসেন।

বৃহস্পতিবার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশের সংস্কৃতিমন্ত্রীরা দিল্লিতে বৈঠকে বসছেন। তার আগে বুধবার  সার্কভূক্ত দেশগুলোর সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

আর এর মাঝেই বিকাল সাড়ে ৪টায় বাংলাদেশ ও ভারতের সংস্কৃতিমন্ত্রী নিজেদের মধ্যে বৈঠক সারলেন।

পরে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, ‘ভারত ও বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও সংগ্রামভিত্তিক আর্কাইভ ও প্রদর্শনী আয়োজনরে ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এ প্রদর্শনী উভয়দেশেই হবে। ’

এর আগে মহাত্মা গান্ধী ও দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনের নেতা কিংবদন্তী নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়েও একই ধরনের আর্কাইভ ও প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এরই আলোকে এবার বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধীকে নিয়ে এই আয়োজন হবে।

আসাদুজ্জামান নূর জানান, দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময়ের অংশ হিসাবে আগামী মাসেই ভারতের অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসছে। ঠিক সেসময়েই ‘উদাহরণ’ হিসেবে মহাত্মা গান্ধী ও নেলসন ম্যান্ডেলার জীবন-সংগ্রামভিত্তিক আর্কাইভ এর প্রদর্শনীও হবে বাংলাদেশে।

আসাদুজ্জামান নূর ভারতের সংস্কৃতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে বলেন, দুইদেশের সংস্কৃতি-আচার-আচরণ-অভ্যাস-জীবনযাপনে অনেক মিল আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা অভিন্নও। যুগ যুগ ধরে চলা এই সম্পর্ক বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আদর্শগত ও রাজনৈতিক দিক থেকে আরো দৃঢ় ও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সেই চেতনার আলোকেই আমরা ভারতের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরো অনকেদূর এগিয়ে নিতে চাই।

‘বর্তমান বিশ্বে মৌলবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে তা এই উপমহাদেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। যে কারণে এই মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে আমাদের নিজেদের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় আরো বাড়াতে হবে। ’

তবে দুই দেশের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় চর্চা শুধু দিল্লি বা কলকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না উল্লেখ করে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সাধারণ মানুষ। তারা মনে করে, বাংলাদেশ এখনো পাকিস্তানের মতোই ধর্মীয় গোঁড়ামি দিয়ে আচ্ছাদিত একটি রক্ষণশীল দেশ। কিছু মানুষ এরকম থাকতে পারে, কিন্তু গোটা বাংলাদেশের চিত্র এরকম নয়। তাই দিল্লি-কলকাতার বাইরেও ভারতের বাকি অংশের সাধারণ মানুষের কাছেও প্রকৃত বাংলাদেশকে তুলে ধরতে হবে।

এ সময় ঢাকায় ভারতের ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারের আদলে সারাবিশ্বে বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিকাশের অংশ হিসাবে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিকভাবে নিউইয়র্ক, লন্ডন ও কলকাতা প্রতিষ্ঠান খোলা হবে। সেই প্রক্রিয়া অনেকদূর এগিয়েও গেছে। আগামী বছরের মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করবে বলে আশা প্রকাশ করেন নূর।

তিনি জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সংস্কৃতি বিনিময় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। খুব শিগগির ভারতের সংস্কৃতিমন্ত্রী শ্রীপদ নায়েক ঢাকায় যাবেন। সেখানে সেই চুক্তিটি আবারো নবায়ন করা হবে।

এ সময় নূর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সারদাকাণ্ড নিয়েও কথা বলেন।

তিনি বলেন, সারদাকাণ্ড নিয়ে আমি পত্রিকায় প্রতিবেদন দেখেছি। তবে এখনো পর্যন্ত সরকারের কাছে এ নিয়ে কোনো তথ্য আসেনি। বিষয়টি নিয়ে সরকারের মধ্যেও কোনো আলোচনা হয়নি।

‘তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও ভারত উভয়দেশ এই ধরনের অপশক্তিকে দমনের জন্য আন্তরিকভাবে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। ’

মন্ত্রী এ ব্যাপারে নিজের মতামত তুলে ধরে আরো বলেন, ভারতের কোনো সরকার এর সঙ্গে জড়িত নয়। হোক সে রাজ্য বা কেন্দ্রীয়। যদি ব্যক্তিগত পর্যায়ে এ ধরনের ঘটনা ঘটে তাকে তা খুবই দুঃখজনক। এটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে হয়ে থাকতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, সরকার হয়তো সবকিছু জানে না। সরকারকে না জানিয়েও অনেক ঘটনা ঘটে থাকে।

বাংলাদেশের টিভি চ্যানেল ভারতে প্রদর্শনের ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দুই দেশই এটি চায়। কিন্তু ক্যাবল নেটওয়ার্ক ব্যবসায়ীদের ভিত্তিহীন দাবির কারণে তা চালু করা যাচ্ছে না। যদি এটি চালু করা যায়, তা দুইদেশের জন্যই ভাল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।