নয়া দিল্লি থেকে ফিরে: ব্যাংক্যুইট হল এরিয়া। এটি বর্তমানে ভারতের রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন।
মোগল, ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য স্থাপত্য শিল্পে নির্মিত এ ভবন এখন ভারতীয়দের অহঙ্কার। কিন্তু আবার এ ভবনেই লুকিয়ে আছে ভারতীয়দের বঞ্চনার হাজারো ইতিহাস।
ব্যাংক্যুইট হল এরিয়ায় দেয়ালের লাল চিহ্ন এখনো মনে করিয়ে দেয় ব্রিটিশদের হাতে ভারতীয়দের নির্যাতন ও বঞ্চনার কথা।
এ ভবনটি ভারতের মাটিতে এবং এ অঞ্চলের মানুষদের টাকায় নির্মিত হলেও দেয়ালের লাল চিহ্নটির ওপরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না ভারতীয়দের।
সেখানে কেবল সাদা চামড়ার মানুষগুলোই যেতে পারতেন! আর তাই লাল চিহ্নের ঠিক ওপরে দেয়ালের রং সাদা। সেখানে কেবল ব্রিটিশরাই যেতে পারতেন।
ব্রিটিশ শাসনামলে এ ভবনটি ভাইসরয়ের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তখন এর নাম ছিল ‘ভাইসরয়’স হাউস’।
এরপর স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর সি রাজ গোপাল এটির নামকরণ করেন ‘গভর্নর হাউস’। পরে, ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ ১৯৫০ সালে ‘রাষ্ট্রপতি ভবন’ নামকরণ করেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনের গাইড সঞ্জয় প্রকাশ শর্মা বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানান।
ভারত সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে গত ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশের একশ’ জনের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করেন।
এ সফরকালে ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় ও ঐতিহাসিক নিদর্শন পরিদর্শনের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি ভবনের দরবার হলে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীর সঙ্গে সাক্ষাত করেন প্রতিনিধি দল।
১৮ অক্টোবর স্থানীয় সময় সকাল পৌনে ৯টায় মোট তিনটি বাসে করে নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশ করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। ৯টায় রাষ্ট্রপতির গার্ড বদলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উপভোগ করে ১০টায় রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশ করেন প্রতিনিধি দল।
সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাগত জানানোর পর একশ’ জনের প্রতিনিধি দলকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রাষ্ট্রপতি ভবন পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়া হয়।
দুই দলে দুইজন গার্ড রাষ্ট্রপতি ভবন পরিদর্শনের সময় এই ভবনের পরিচিতি, ইতিহাস বর্ণনার পাশাপাশি ভবনের বিভিন্ন হল, কক্ষ ও স্থানের নামকরণের কারণও ব্যাখ্যা করেন।
দ্বিতীয় দলের গাইড সঞ্জয় প্রকাশ শর্মা প্রথমেই নিয়ে যান রাষ্ট্রপতি ভবনের মোগল গার্ডেনে। ব্রিটিশরা এ বাগান তৈরি করলেও কেন মোগল গার্ডেন নাম রাখা হয়েছে তা জানালেন তিনি।
‘মোগলরা যেভাবে বাগান তৈরি করতেন ঠিক সেই ধরন অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে এই বাগান। তাই এর নামকরণ করা হয়েছে মোগল গার্ডেন। অন্য কোনো কারণ নেই। মোগলরা বাড়ির পাশেই রাখতেন বাগান। ’ – জানান সঞ্জয় প্রকাশ শর্মা।
ভবনের বিভিন্ন কক্ষ এবং স্থানে নিয়ে সে সম্পর্কে বর্ণনা দিচ্ছেন সঞ্জয়। কয়েকটি স্থান পরিদর্শনের পর আমাদের তথা প্রতিনিধি দলের সদস্যদের নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংক্যুইট হল এলাকায়। সেখানে গিয়ে দেয়ালে রং ব্যবহারের কারণ বর্ণনা করেন।
সঞ্জয় জানান, দেয়ালে এই লাল অংশের মধ্যে ভারতীয়দের বড় ইতিহাস লুকিয়ে আছে। ভারতের মাটিতে এটি নির্মিত হলেও এ লাল চিহ্নের ওপরে উঠার অনুমতি ছিল না কোনো ভারতীয় নাগরিকের। সেখানে কেবল সাদা চামড়ার মানুষরাই উঠতে পারতেন।
সাতদিনের সফরে একশ’ সদস্যের প্রতিনিধি দল ভারতের মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই পরিদর্শন করেন।
সেখানে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাত, মুম্বাই ইউনিভার্সিটিতে মতবিনিময়, গেটওয়ে অব ইন্ডিয়া পরিদর্শন করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
সফরে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লি, আগ্রা, স্যাটেলাইট সিটি গুরগাঁও, মুম্বাই, কলকাতার দর্শনীয় সব স্থান পরিদর্শন করে প্রতিনিধি দলটি।
দুই দেশের সংস্কৃতি বিনিময়ের লক্ষ্যে ২০১২ সাল থেকে এ ধরনের সফরের আয়োজন করে আসছে ভারত সরকার। এ উদ্যোগের আওতায় তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশের তরুণদের প্রতিনিধি দল ভারত সফর করলো।
এবারের একশ’ জনের প্রতিনিধি দলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ জন শিক্ষার্থী, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষার্থী, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী, এফবিসিসিআইয়ের ৫ জন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ১৫ জন সাংবাদিক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ছাড়াও বেসররকারি আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০১৪