ঢাকা: অবশেষে যাত্রী চাপ লাঘবে উদ্যোগী হল বাংলাদেশ ও ভারতের রেল মন্ত্রণালয়। কলকাতায় এক বৈঠকে এখন থেকে সপ্তাহে ২ দিনের পরিবর্তে ৩ দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
তবে কবে নাগাদ সপ্তাহে ৩ দিন রেল চলাচল শুরু হবে তা জানাতে পারেননি ঢাকায় রেল বিভাগের এক কর্মকর্তা। তিনি শুধু বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে যাত্রী চাপ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। টিকিট দিতে না পেরে যাত্রীদের কটু কথা শুনতে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে। এ অবস্থায় দুই দেশের কর্তৃপক্ষ রেল ট্রিপ বাড়ানো নিয়ে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা শুধু বলেন, সোমবার থেকে কলকাতায় পূর্ব রেলের সদর দপ্তর ফেয়ারলি প্লেসে দুই দেশের রেল কর্মকর্তাদের বৈঠক শুরু হয়। মঙ্গলবার এ বৈঠক শেষ হয়েছে।
তিনি অবশ্য বলেন, কলকাতার এ বৈঠকেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নয়। ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে মৈত্রী এক্সপ্রেস বাড়ানো নিয়ে আরও আলোচনা হবে। দুইদেশের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে আগামী মাসে নয়াদিল্লিতে আলোচনা হবে। তারপরই সিদ্ধান্ত হবে। তবে বাড়তি রেল চালু নিয়ে উভয় পক্ষ আশাবাদী। এখন শুধু প্রয়োজন উভয় দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র।
বাংলাদেশ রেল মন্ত্রণালয়ের তিন কর্মকর্তা ভারতের রেল কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে মৈত্রী এক্সপ্রেসে চেপেই গত শুক্রবার কলকাতায় যান। বাংলাদেশ রেলের তিন কর্মকর্তা হলেন- শাহ জহিরুল ইসলাম ডিডিজি (অপারেশন), খলিলুর রহমান এডিজি (রোলিং স্টক) এবং কালীকান্ত ঘোষ অতিরিক্ত পরিচালক।
ভারতীয় পক্ষে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সেদেশের রেল বোর্ডের অতিরিক্ত ট্রাফিক সদস্য অসীম কুমার মৈত্র, পূর্ব রেলের অতিরিক্ত এজিএম ডি কে প্যাটেল প্রমুখ।
কলকাতায় দুইদিনের ওই বৈঠকে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে পণ্য পরিবহন ছাড়াও যাত্রীবাহী রেল চলাচল নিয়েও আলোচনা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশের দর্শনা এবং ভারতের গেদে সীমান্ত দিয়ে সপ্তাহে দু’দিন মৈত্রী এক্সপ্রেস চলাচল করে। বেনাপোল-পেট্রাপোল স্থল সীমান্ত পাশ ঘেঁসে থাকা রেলপথে এ ট্রেন চলাচল করবে। নতুন রুটের এই ট্রেনটির নাম মৈত্রী-২ এক্সপ্রেস রাখারই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে নামকরণ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছে ঢাকার সূত্র।
ব্রিটিশ শাসনামলে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে সরাসরি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল চালু করা হয়। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের সময় এ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উভয় দেশের একটি করে ট্রেনও আটকা পড়ে যায় যশোর এবং কলকাতায়।
ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতামুখী বরিশালের রেলযাত্রীরা স্টিমারে করে খুলনা আসতেন। খুলনা থেকে রেলে চেপে তারা কলকাতার শিয়ালদহ রেলস্টেশনে যেতেন। বরিশালে স্টিমারের টিকিট কেনার সময় রেলের ভাড়া একইসঙ্গে নেওয়া হতো। অনুরুপ কলকাতার যাত্রীরাও একইভাবে টিকিট কিনে চলাচল করতেন।
আগে যেমন খুলনা ও কলকাতার মধ্যে রেল চালুর সময় চলন্ত ট্রেনের কামরার মধ্যেই যাত্রীদের পাসপোর্ট-ভিসা পরীক্ষা করা হতো, তেমনি বাংলাদেশ এবার প্রস্তাবিত মৈত্রী ট্রেনে চলন্ত অবস্থায় কামরার মধ্যেই কাস্টমস-ইমিগ্রেশন সেরে নেওয়ার প্রস্তাব করেছে।
কেননা দর্শনা-গেদে সীমান্তে এ কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন করায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগ পোহান। দর্শনা-গেদেতে এই পরীক্ষার জন্য সীমান্তের উভয় পাড়ে কয়েক ঘণ্টা করে ট্রেনটিকে দাঁড় করিয়ে সময় অপচয় করা হয়। অবশ্য সাম্প্রতিক কালে এই সময় কিছুটা কমানোর ফলে এখন ট্রেনে কোন আসন খালি থাকছে না। তদুপরি টিকিট পেতে পক্ষকাল পেরিয়ে যায়।
মৈত্রী ট্রেনের সংখ্যা বাড়লে তাই যাত্রীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১৪