ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা

রক্তিম দাশ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১১

কলকাতা: ব্যাপক বিক্ষোভের মধ্যে বৃহস্পতিবার আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ছেড়ে দেওয়া ৬৫টি আসনে প্রাথী তালিকা ঘোষণা করল কংগ্রেস হাইকমান্ড।

দুপুরে নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর বাসভবনে দফায় দফায় বৈঠক করে অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেস নেতা জনার্দন পুজারি ও পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত শাকিল আহমেদ এই কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ডা. মানস ভুঁইয়া।

এদিকে, এমনিতেই এই আসন নিয়ে অসন্তোষ তার ওপর তৃণমূলের জোট সঙ্গী এসইউসি কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সর্বত্র প্রার্থী দেওয়া। এনিয়ে বৃহস্পতিবার রাজ্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখানো হয় এই বৈঠকে।

রাজ্য কংগ্রেসের সভাপতি ডা. মানস ভুঁইয়া এদিন বলেন, এসইউসি মত না বদলালে জোট থেকে দেওয়া এসইউসি বরাবর জেতা আসন জয়নগর ও কুলতলিতে তারা প্রার্থী দাঁড় করাবেন।

জানা গেছে, এর জন্য ৪টি নামও দেওয়া হয়েছে হাইকমান্ডকে। রাজ্য কংগ্রেসের মুখপাত্র ওমপ্রকাশ মিশ্র বলেছেন, ‘আমাদের রাজ্য সভাপতি ডা. মানস ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে তারা প্রার্থী দিয়েছে। এটা আমরা চুপচাপ মেনে নেব না। ’

এই আসন সমঝোতা নিয়ে জেলায় জেলায় কংগ্রেসের মধ্যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। মালদা জেলার মানিকচকে কংগ্রেস বাঁচাও কমিটি তৈরি হয়েছে। তারা এই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী সাবিত্রী মিত্রের বিরুদ্ধে রামপ্রবেশ মণ্ডলকে নির্দল প্রার্থী করে আসরে নেমেছেন।

মুশির্দাবাদের জেলা কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভা সদস্য অধীর চৌধুরী বৃহস্পতিবার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, তার জেলায় কোনো তৃণমূল প্রার্থীকে তিনি সমর্থন করছেন না। এই সব কেন্দ্রে তিনি নির্দলদের সমর্থন করবেন।

প্রার্থী তালিকা ও জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে দল ছাড়ার কথা ঘোষণা দিয়েছেন নদীয়া জেলার সভাপতি দাপুটে কংগ্রেস নেতা শংকর সিং। একই অবস্থা উত্তর ২৪ পরগণা জেলায়। এই জেলার কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি অসিত মুজমদার বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রে নির্দল প্রার্থী হয়েছেন।

অন্যদিকে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষ চরমে তৃণমূলে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙর কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী গতবারের জয়ী আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে ৫ হাজার কর্মী সমর্থক নিয়ে দল ছেড়ে নির্দল হয়ে লড়ছেন মুহম্মদ নান্নু। দার্জ্জিলিং জেলার মাটিগড়া কেন্দ্র তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর মালাকারকে ও ফাসিঁদেওয়া কেন্দ্রের ডা. রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে বহিরাগত, অবাঞ্ছিত বলে ঘোষণা করেছে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। এখানে নির্দল প্রার্থী তারা দাঁড় করাচ্ছেন অমর সিনহা ও কার্লুস লাকররাকে।

বালুরঘাটের হরিরামপুরে তৃণমূল প্রার্থী বিপ্লব মিত্রর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন স্থানীয় তৃনমূল নেতা জয়নাল আবেদিনের ছেলে শায়েস্তা আবেদিন।

কলকাতায় বির্তক এড়াতে জোড়াসাঁকোর প্রার্থী শান্তিলাল জৈনকে প্রার্থী করে বাধ্য হয়ে তাকে বদল করেছে তৃণমূল। এই কেন্দ্রে প্রথমে তারক বন্দোপাধ্যায়কে প্রার্থী করা হয়। তিনি রাজী না হয়ে সংবাদপত্রে বিবৃতি দেন মমতার বিরুদ্ধে। প্রায় তড়িঘড়ি করে শান্তি লাল জেনকে প্রার্থী করা হয়।

কিন্তু তাকে প্রার্থী করার পরই ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেয় স্থানীয় মুসলিমদের মধ্যে। জানা যায়, তিনি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের নেতা ও ‘৯২ সালে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনায় সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিনহা সংবাদমাধ্যমে শান্তিলাল জৈনের এই ভূমিকার কথা স্বীকার করে নেন।

তিনি জানান, শান্তিলাল গোরক্ষা সমিতি তৈরি করে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কাজ করেন। এই সময় তার সঙ্গে মমতা ব্যানার্জির আলাপ হয়।

কিন্তু তাকে বদল করে মমতা যাকে প্রার্থী করেছেন সেই স্মিতা বকসীর বিরুদ্ধে অভিযোগ- তিনি তপসিলি জাতির ছাড়পত্র জাল করে তফসিলি কেন্দ্রে কলকাতা পুরসভায় ভোটে জেতেন। এই অভিযোগ করেছিলেন আর কেউ নয়, তৃণমূলের সাবেক কলকাতার মেয়র সুব্রত মুখার্জি। সব মিলিয়ে প্রার্থী নিয়ে অসন্তোষে এখন জেরবার দুই জোট সঙ্গিই।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।