ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

মোদির পশ্চিমবঙ্গ সফর

বিজেপি-তৃণমূলের রাজনীতিতে নতুন মোড়!

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৯ ঘণ্টা, মে ২, ২০১৫
বিজেপি-তৃণমূলের রাজনীতিতে নতুন মোড়! ছবি : বাংলানিউজটোয়েটিফোর.কম

কলকাতা: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন পশ্চিমবঙ্গ সফর নিয়ে নানামুখী জল্পনা চলছে। সফরে মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন বলে ইঙ্গিত মিলছে।

আর তাদের মধ্যকার ৯ মে’র সম্ভাব্য এ বৈঠকে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি ও রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূলের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের আভাস পাওয়া যেতে পারে বলেও ইঙ্গিত মিলছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে।

এ বৈঠকের ব্যাপারে এখনও সরকারের তরফ থেকে প্রকাশ্যে কিছু বলা না হলেও সূত্র বলছে, দু’দিনের পশ্চিমবঙ্গ সফরে মোদি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন।

আর বিশেষ কয়েকটি কারণে এ বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলের উৎসাহ বাড়ছে। প্রথম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে, কেন্দ্রীয় সরকারের আলোচিত জমি অধিগ্রহণ বিলে তৃণমূল কংগ্রেসের সমর্থনের বিষয়টি। এই বিল নিয়ে সংসদে কার্যত কোণঠাসা বিজেপি। কেন্দ্রীয় সংসদের নিম্নকক্ষে (লোকসভা) এই বিল পাশ করাতে পারলেও উচ্চকক্ষে (রাজ্যসভা) তৃণমূল কংগ্রেসের সাহায্য ছাড়া এই বিল পাশ করানো বিজেপি সরকারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া, রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বে জমি অধিগ্রহণ বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের আন্দোলন তো অব্যাহত রয়েছেই।

মনে করা হচ্ছে, মোদি-মমতার সম্ভাব্য বৈঠকে প্রধান আলোচ্য হতে পারে এই জমি অধিগ্রহণ বিলের বিষয়টি। অনেকেই এই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বিজেপি-তৃণমূলের নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন।

যদিও তৃণমূলের কাছাকাছি আসার রাজনৈতিক সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি রাহুল সিনহা। তার দাবি, জাতীয় পর্যায়ে কোনো একটি বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থন করলেও রাজ্য বিজেপি তার তৃণমূলবিরোধী অবস্থান ধরে রাখবে।

অবশ্য, রাহুল সিনহা এ মনোভাব প্রকাশ করলেও বাস্তবে তা কতোখানি অটুট থাকছে- সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে জনসাধারণের মনে। রাজনৈতিক সচেতন মহলের মতে, পুরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী না পাঠানো, সারদা মামলা নিয়ে সিবিআই তদন্তের গতি কমে আসা প্রভৃতি বিষয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।

ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হতে শুরু করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের পুর ও নগর উন্নয়নমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস নেতা ফিরহাদ হাকিমও বলছেন, উন্নয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এক সঙ্গে চলতে তাদের কোনো সমস্যা নেই।

দু’পক্ষের এ ধরনের প্রশংসা ও এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতার প্রকাশে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করা রাজ্য বিজেপির কর্মীদের মনে কৌতূহল ও প্রশ্নের ঝড় উঠেছে। সূত্র বলছে, তৃণমূল ও কেন্দ্রীয় বিজেপির অদ্ভ‍ুত এ আচরণে রাজ্য বিজেপি সভাপতি তার দলের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন। সেখানে কানাঘুষার এসব আলোচ্য তুলে ধরেছেন রাহুল সিনহা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, রাহুল এমন পদক্ষেপ নিলেও রাজ্য বিজেপিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নাও পারে কেন্দ্র। তার কারণ যেমন লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি হাওয়াকে পশ্চিমবঙ্গে নেতাদের ধরে রাখতে না পারা, তেমনি জাতীয় রাজনীতির প্রয়োজনে তৃণমূল কংগ্রেসকে কাছে টানার ইচ্ছেও।

কিছুদিন আগেই নয়াদিল্লিতে একান্ত বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নরেন্দ্র মোদি। ওই বৈঠকের সুফল হিসেবে দেখা যায়, বিমা বিলসহ একাধিক বিলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিজেপিকে সুবিধা করে দেয় তৃণমূল কংগ্রেস। পাশাপাশি ছিটমহল ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়েও বিজেপি সরকারকে সবুজ সংকেত দিয়ে রাখেন মমতা। বিনিময়ে মমতার পুনর্বাসন প্যাকেজ মেনে নেন মোদি।

এছাড়া, আগামী ৫ মে ‘স্থল সীমান্ত চুক্তি’ বিল লোকসভায় উত্থাপিত হলে তৃণমূল তাতে সমর্থন জানাবে বলেও স্পষ্ট খবর মিলছে।

এখন দেখার বিষয়, আগামী ৯ মে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সমীকরণের বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদি!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, মে ০২, ২০১৫
এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।