ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

আই.আই..আই...চেন্নাই এক্সপ্রেস!

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
আই.আই..আই...চেন্নাই এক্সপ্রেস! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চেন্নাই এক্সপ্রেস থেকে: টিকেট খরিদ কে/ বেঠ যা সিট পে/ নিকাল না যায়ে কাহিন চেন্নাই এক্সপ্রেস!

চেন্নাই...আই...আই...আই...চেন্নাই এক্সপ্রেস!

হাওড়া স্টেশনের ২৩নং প্লাটফর্মে যাত্রীদের লম্বা লাইন দেখে অনুমান করা যায়, দীর্ঘ ট্রেন চেন্নাই এক্সপ্রেস। ঠিক কতগুলো কম্পার্টমেন্ট রয়েছে গুনে দেখা হয়নি।

তার চেয়ে এখানে নতুন যাত্রী হিসেবে দ্রুত ট্রেনের সিট খোঁজাটা বুদ্ধিমানের।

স্টেশনের টিটিদের জিজ্ঞাসা করে আগেই ‘বি-২ কম্পার্টমেন্টে’ এসে দাঁড়ালাম। থেমে আছি জায়গা মতো। দৌড়, জোরে হাঁটা, ব্যস্ততা বেড়ে গেল যাত্রীদের। অনেকেই হয়ত ভিন্ন পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।

এখানে এসি, নন এসি, স্লিপিং চেয়ার যেমন রয়েছে, তেমনি চেয়ার সিটও রয়েছে। ট্রেন প্লাটফর্মে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ আগেই নোটিশ বোর্ডে যাত্রীদের যে তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানে সিট ও স্লিপিং যাত্রীদের, আবার প্রথম শ্রেণি স্লিপিং যাত্রীদের তালিকাও আলাদা করে দেওয়া আছে।

ঠিক সাড়ে ১১টায় প্লাটফর্মে এসে ভিড়লো চেন্নাই এক্সপ্রেস। ইঞ্জিনের পরের কম্পার্টমেন্ট বেশ রংবেরংয়ের। মনে মনে মুচকি হাসলাম, নিশ্চয়ই চেন্নাই এক্সপ্রেস ছবির শুটিংয়ের সময় রং করা হয়েছে। যদিও সিনেমাটির নির্মাণ বা অন্য কোনো ইতিহাসে আমার ধারণা শূন্য। পরের কম্পার্টমেন্টগুলো ঠিকই নীল সাদা রংয়ের।

এই স্লিপিং কম্পার্টমেন্টটি ৩ টায়ারের। আমার ৩৪নং সিট মাঝখানে, ওপরে নিচে আরও দু’টি সিট। ঠিক যেন স্যান্ডউইচের ভেতরের মশলা হতে যাচ্ছি।

সিটের নিচে বড় ব্যাগটি দিয়ে দৌড়ে গেলাম গেটের দিকে। ট্রেন নড়ে উঠবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। তখনই চেন্নাইয়ের সুন্দরীকে আমি হাত ধরে টেনে ট্রেনে ওঠাবো। হুম, সিনেমায় তো তাই করেছেন শাহরুখ খান। কিন্তু হায়, ট্রেনের স্টাফ এসে হাঁক দিলেন, ‘দাদা সরুনতো, দরজা লাগাবো’! ভগ্ন মন নিয়ে নিচের সিটে এসে বসলাম। এ ধরনের সিনেমা না দেখা- রোমান্সহীন স্টাফদের কারা যে রেলওয়েতে নিয়োগ দেয়... এসব বলতে থাকলাম।

ঠিক ৩ বছর পর এটি ভারতে আমার তৃতীয় ট্রেন ভ্রমণ। এর আগে কলকাতা-দিল্লি-কলকাতায় কালকা এক্সপ্রেস আর রাজধানী এক্সপ্রেসের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে অসাধারণ ছিল। হাজার কিলো রাস্তা ট্রেনে চলতে চলতে ভারতে অনেক বড় একটি অংশের ওপরই চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়।

নির্ধারিত সময় ১১টা ৪৫ মিনিটেই ট্রেন ছাড়লো। ট্রেনের শেষ গন্তব্য চেন্নাই, তবে আমি নেমে পড়বো মন্দিরের শহর ভুবনেশ্বরে। ওড়িষ্যা প্রদেশের রাজধানী ভুবনেশ্বর। সোয়া ৬ ঘণ্টার এ যাত্রা পুরোটাই অন্ধকারে। তাই জানালার পাশে বসে বাইরে ঘোর অন্ধকার ছাড়া চোখ বোলানোরও কিছুই নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিচের সিটের যাত্রী এসে জানালেন, তিনি খুব ক্লান্ত এবং ঘুমিয়ে পড়তে চান। হিন্দি না বুঝলেও ভদ্রলোক হিসেবে ধারণা করতে পারি এই হিন্দিভাষী মাঝবয়সী যাত্রী কী চাইছেন। তাই ৩ টায়ারের সিটের মাঝখানে নিজেকে এলিয়ে দেওয়া ছাড়া অভিজ্ঞতা আসবে না নতুন কিছুর।

স্লিপিং সিটের জন্য কাগজের প্যাকেটে প্রতি সিটের জন্য দু’টি করে চাদর, একটি বালিশ এবং কম্বল দেওয়া রয়েছে। নিচের যাত্রীর দেখাদেখি পুরো বিছানা বাসার বেড রুমের মতো সাজিয়ে নিলাম আমিও।
 
এবার একদম সোজা হয়ে শুয়ে পড়া। ২৮ থেকে  ৩২ সিটে পাঁচজনের পরিবার। বৃদ্ধা স্ত্রীকে বিছানা করে দেওয়ার পাশাপাশি মেয়ে, বোনকেও বিছানা করে দিচ্ছিলেন পুলিন বাবু।

জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা ভুবনেশ্বর যেতে কত সময় লাগে। বললেন, ঠিক ৬টায় পৌঁছাবে। সেখান থেকে আমার আরেক মেয়ে উঠবে। জানালেন, তারা শেষ স্টপেজ চেন্নাইতে যাবেন। শুক্রবার (১৩ নভেম্বর) রাত হয়ে যাবে।

অনুরোধ করে বললাম, আমাকে একটু বলে দেবেন। প্রতি উত্তরে মোবাইলে ইতোমধ্যে এলার্ম দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন পুলিন বাবু।

কিছু সময়ের মধ্যে টিকেট চেকার এসে তার সঙ্গে থাকা তালিকায় নাম মিলিয়ে গেলেন। মিনিট ২০’র মধ্যেই পুরো কম্পার্টমেন্ট অন্ধকার।

ঝিক ঝিক শব্দ সঙ্গে ঝাকুনিতে ঘুমিয়ে পড়তে থাকেন যাত্রীরা।

বাংলাদেশ সময়: ১১৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৫
এমএন/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।