কলকাতা: পরনে হালকা নীল শার্ট, গলায় আলগা করা টাই, কোমরে ঝুলছে ভারতের এক বিখ্যাত লোহা কোম্পানির কলকাতা অফিসের পরিচয়পত্র। সামনে এসে ভদ্রলোক জানতে চাইলেন, ‘বেন-হুর’ কোথায় দেখাচ্ছে বলতে পারবেন? নন্দনের গেটে ঝোলানো তালিকার হদিস দিয়ে একটা ছবি তুলতে গেলে প্রায় আর্তনাদ করে মুখ ঢাকলেন।
এটা শুধু একজনের গল্প নয়, কলকাতার ১২টি প্রেক্ষাগৃহে চলতে থাকা চলচ্চিত্র উৎসবে এ ধরনের বেশ কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া গেল। কেউ চলচ্চিত্র উৎসবে এসেছেন কলেজের ক্লাস পালিয়ে, কেউ অফিস, কেউ প্রাইভেট টিউশনি ফাঁকি দিয়ে, আবার কেউ প্রেমিকাকে বলেছেন, প্রবল জ্বর, ডেঙ্গুও হতে পারে, ঘুরতে যাওয়া বাতিল।
আসলে শহর কলকাতার এখন একটাই প্রেম ‘সিনেমা’।
‘২১ নভেম্বর পর্যন্ত সিটি অব জয় হয়ে গেছে সিটি অব সিনেমা’- জানালেন নন্দন চত্ত্বরে ভবানীপুর ফিল্ম সোসাইটির স্টলে আসা বর্ষীয়ান সিনেমাপ্রেমী অশোক মুখার্জি। ২১ বছরের মধ্যে একটি বছরও বাদ যায়নি তার। তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন চলচ্চিত্র উৎসবকে কেন্দ্র করে বদলে যাওয়া কলকাতাকে।
উৎসবের কর্মকর্তা অভিনেতা-পরিচালক অরিন্দম শীল জানালেন, হলিউড ক্লাসিক চলচ্চিত্রগুলো দেখানোর পেছনের পরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, পুরনো এ চলচ্চিত্রগুলো অনেকই বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পাননি। তাদের জন্যই এ বিশেষ আয়োজন। এর মাধ্যমে হলিউডকে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টির কথাও তিনি তুলে ধরেন।
আমি ‘ক্যাসাব্লাঙ্কা’ দেখবোই! কাগজে লিখেছে, দারুণ ‘রোমান্টিক’ ছবি- মায়ের সঙ্গে ছবি দেখতে নন্দন চত্ত্বরে এসে বায়না করছে এক অষ্টাদশী তরুণী। ‘চলচ্চিত্র উৎসবতো শুধু চলচ্চিত্র বোদ্ধাদের জন্য নয়, নতুন দর্শক তৈরির জন্যও। তরুণ দর্শক না আসলে চলচ্চিত্র তো প্রাণহীন হয়ে যাবে’- মেয়েটির বায়না শুনে মুচকি হেসে মন্তব্য করলেন অশোক মুখার্জি।
আর সেই অসংখ্য দর্শকের কথা মাথায় রেখেই হয়তো প্রেক্ষাগৃহের অন্ধকার ঘরের বাইরে কলকাতার বেশ কয়েকটি পার্কে আম-জনতার জন্য বিখ্যাত এই চলচ্চিত্রগুলো দেখানোর পরিকল্পনা করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
তবে এ কথা হলফ করে বলয়ায় কলকাতাবাসীর এখন একমাত্র প্রেম ‘চলচ্চিত্র’। আক্ষরিক অর্থেই সিটি অব জয় এখন সিটি অব সিনেমা।
বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৫
ভিএস/এএসআর