ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার পার্টিবাজদের পছন্দের ৬ স্থান

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৫
কলকাতার পার্টিবাজদের পছন্দের ৬ স্থান ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: ডিসেম্বর মাস মানেই কলকাতায় নতুন বছর উদযাপনের প্রস্তুতির শুরু হয়ে যাওয়া। আর এ সময়ে গা-ঝাড়া দিয়ে ওঠে কলকাতার পার্টিবাজরা।

না, এরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নয়। এরা ‘নাইট লাইফ’-এ বুদ হয়ে থাকা কলকাতার নাগরিক। ‘পার্টি’ করতে যাদের কোনো বিশেষ দিনের প্রয়োজন পড়ে না, তাদের কাছে পার্টি-ই জীবন। এসব পার্টিবাজদের পরিবারের অভিযোগ তারা রাতে জাগে আর দিনে ঘুমায়।

কলকাতাবাসীদের সঙ্গে কলকাতায় আসা পর্যটকদের জন্য ইতিমধ্যেই সাজতে শুরু করেছে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁ ও ক্লাবগুলি। কলকাতার বেশকিছু হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং ক্লাবে ঘুরে তাদের প্রস্তুতি সরজমিনে দেখে এলো বাংলানিউজ।

কলকাতার অন্যতম অভিজাত রেস্তোরাঁ ‘স্যামপ্লেস এলস’। প্রথমেই বলে বলে রাখা ভালো এই অভিজাত রেস্তোরাঁর মূল ঐতিহ্য তার সঙ্গীতে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীরা এই রেস্তোরাঁতে অনুষ্ঠান করেছেন। যারা সঙ্গীত ভালোবাসেন কলকাতায় এসে তারা কিছুটা সময় কাটাতে পারেন ‘স্যামপ্লেস এলস’-এর পাবে।

খাবার পানীয়ের সঙ্গে আপনি অনুভব করতে পারবেন বিশ্ব সঙ্গীতের বিভিন্ন ধারার সুরের মূর্ছনা। কলকাতায় যারা পাশ্চাত্য সঙ্গীতের চর্চা করেন তাদের মতে ‘স্যামপ্লেস এলস’ কলকাতার পাশ্চাত্য সঙ্গীতের প্রতিভাধরদের খনি। এই রেস্তরাঁতে অনুষ্ঠান করেছেন অঞ্জন দত্ত, বিখ্যাত ব্যান্ড ‘ইন্ডিয়ান ওসান’, ‘পরিক্রমা’ থেকে শুরু করে কলকাতা এবং মুম্বাইয়ের নামী-দামী ব্যান্ড এবং তারকারা। ১৭ পার্ক স্ট্রিটে পৌঁছে গিয়ে একবার উঁকি দিতেই পারেন ‘স্যামপ্লেস এলস’-এ।

কলকাতা মানেই নিত্য নতুন খাবার চেখে দেখা। কেমন হয় যখন চেনা ফুচকার সঙ্গে মেশে ল্যাটিন আমেরিকার কোনো পানীয়ের স্বাদ। আর এই ‘ফিউশন’-এর সঙ্গে যদি কানে আসতে থাকে বাঙলার লোকগীতি আর ল্যাতিন আমেরিকার ‘রেগে’ সঙ্গীতের মেশানো সুর। এই মিশ্রণটি সম্ভব হয়েছে নবীন পাই আর দীপ ব্যানার্জির  হাত ধরে। নবীন পাই একদিকে যেমন ‘ফুড কনসালটেন্ট’ অন্যদিকে তিনি সঙ্গীত শিল্পী। সদাহাস্যময় নবীন জীবন দর্শন একাধারে ‘এথনিক’ অন্যদিকে ‘ফোক’ –এর মিশ্রণে গড়ে উঠেছে। আর এই জীবন দর্শনের প্রভাব পড়ছে তাদের রেস্তরাঁ ‘সোল মিউজিক, সোল ফুড’-এ।

কলকাতার পার্টিবাজদের দারুণ পছন্দের জায়গা এটা। কলকাতার উডবার্ন পার্ক রোডে গিয়ে ২৩৪/৩এ, ঠিকানায় হাজির হলেই দেখা পাওয়া যাবে নবীনের। খাওয়ার সাথে সময় থাকলে জমিয়ে আড্ডাও দিতে পারবেন আগ্রহীরা।

পার্টি মানেই বন্ধুদের সাথে হুল্লোড়, দল বেঁধে খাওয়া দাওয়া। কিন্তু অঙ্কটা যদি বদলে দেওয়া যায়, তবে কেমন হয়। অর্থাৎ আপনি পার্টি করবেন এক অপরিচিতের সঙ্গে। ভাবতে একটু অবাক লাগছে, এই অবাক করা ধারণা নিয়ে কলকাতার পার্টিবাজদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা হয়ে উঠেছে ‘দ্য স্ট্রেঞ্জার দ্য বেটার’। কথাটার সঙ্গে বাঙলায় চালু একটা প্রবাদের অনেকটাই মিল খুঁজে পাওয়া যায়- ‘আপন থেকে পর ভালো, পরের থেকে বন ভালো’। যাই হোক এই ভালোমন্দের বিচারে না গিয়ে এই নতুন ধারণাটি সম্পর্কে আরও একটু জানা যাক।

এই রেস্তোরাঁর অন্যতম মালিক মেঘা আগরওয়াল ও অনুরাধা চিরানি। মেঘাদের বক্তব্য, ধরুন আপনি কলকাতা শহরে একা ,ভাবছেন কী করবেন। দেখুন না অপরিচিতদের সঙ্গে একটা সন্ধ্যা আড্ডা মেরে কেমন লাগে? প্রাথমিক জড়তাটা কাটাতে সাহায্য করবেন মেঘারা। তারাই এই অপরিচিতদের রুচি, মর্জি বুঝে নিয়ে হাজির করবেন একটি বিষয়। সেই বিষয় নিয়ে কথা বলতে বলতে সঙ্গীতের সুরে একট‍ু কোমর দুলিয়ে নিতে পারেন। বিষয়টা শুধু নতুনই নয় বেশ মজারও। তাই কলকাতার ৯২-বি শরৎ বোস রোডে একবার ঢুঁ মেরে দেখতে পারেন। আর কিছু না হোক নতুন একটা অভিজ্ঞতা হবে!

কলকাতার পার্টিবাজদের কেউ ‘বাম্বি’কে চেনে না এমন হতেই পারে না, আবার কলকাতার পার্টিবাজদের কাউকে ‘বাম্বি’ চেনেন এমনও নাকি হতে পারে না। কলকাতার রাতের জীবন বা ‘নাইট লাইফ’- নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে এই কথাটা বেশ কয়েকবার শুনেছি। কিন্তু কোথায় পাওয়া যায় ‘বাম্বি’-কে। কী বা তিনি করেন? বেশি খোঁজ খবর করতে হলো না। ‘বাম্বি’ একজন পার্টি ম্যানেজার। তিনি যে শুধু একজন পার্টি ম্যানেজার তাই নয়, তিনি সঙ্গীতের এক দারুণ ভক্ত, শুধু এটুকু বললে কম বলা হয়, তিনি একজন দক্ষ সংগঠক, একজন বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী। ঝুঁকি নিতে পিছপা না হওয়া বছর ৩৫ এর এক তরুণ। আসল নাম অমিত হাতিরামানি। তবে ‘বাম্বি’ নামের জনপ্রিয়তায় আসল নাম চাপা পড়ে গেছে। কলকাতার পাঁচতারা হোটেলে পার্টি জমাতে নাকি তার জুরি মেলা ভার।

তিনি নিজেরও একটি রেস্তোরাঁ আছে। খাদ্য, পানীয় আর সুরে জাদুতে আপনি ভাবতেই পারেন এ এক অন্য পৃথিবী, যে পৃথিবীর সবটাই সুন্দর আর মোহময়ী। একবার প্রবেশ করতে চান সেই পৃথিবীতে, তবে চলে যেতে পারেন কলকাতার শরৎ বোস রোডের ১১/১ নম্বর বাড়িতে। সেখানেই আছে ‘গ্রেট ব্রোজ স্টোরি’।

কলকাতার ‘টলি ক্লাব’ সম্ভবত এই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজকদের মধ্যে সবথেকে প্রাচীণ। ১২০ বছরের এই ক্লাবে আপনি সদস্য বা সদস্যের আমন্ত্রিত ব্যক্তি ছাড়া কোনোভাবেই প্রবেশ করতে পারবেন না। বড়দিন এবং নতুন বছর উপলক্ষে এখানে থাকে বিশেষ আয়োজন। এই বছরেও তারা সেই পরিকল্পনায় ব্যস্ত বলে জানা গেছে।

আমাদের পরের গন্তব্য ‘রেজিং দ্য বার’। এই রেস্তরার অন্যতম মালিক ভিকি মেহেতা রামানি ২০ বছর ধরে ডিক্স জকি হিসেবে কাজ করেছেন। বর্তমানে ‘রেজিং দ্য বার’ –কে কলকাতার পার্টিবাজরা এক ছাদের তলায় সবকিছু বলে মনে করে। নাচ, গান আর বন্ধুদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া সব কিছু একসঙ্গে পাওয়া যাবে ২০ জি পার্ক স্ট্রিটের ঠিকানায়।

নতুন বছরের উৎসবকে সামনে রেখে কলকাতার প্রতিটি হোটেল-রেস্তরাঁয় নানা আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। আয়োজকরা আশাকরছেন অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার আরো বেশি উৎসবমুখর হয়ে উঠবে তিলোত্তমা নগরী কলকাতা।
   
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৫
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।