কলকাতা: কলকাতায় এসে হোটেল কিংবা গেস্ট হাউজ খুঁজে পেতে সমস্যায় পড়েন অনেকেই। বিশেষত যারা প্রথমবার বা উৎসবের মৌসুমে কলকাতায় আসেন তারা পড়েন ভীষণ বিপাকে।
এই সমস্যা বাড়ে উৎসবের সময়। কারণ কলকাতার সমস্ত হোটেলে বিদেশিদের থাকার অনুমতি নেই। উৎসবের মৌসুমে বিভিন্ন দেশ থেকে কলকাতায় মানুষ বেড়াতে আসেন। ফলে নিউমার্কেট, পার্ক স্ট্রিট, মারকুইস স্ট্রিট, সদর স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদইয়াই রোডের হোটেল ও গেস্ট হাউজগুলিতে সহজে জায়গা পাওয়া যায় না। জায়গা পেলেও খরচ হয় অনেক বেশি।
চলতি বছরের ২০ ডিসেম্বর থেকেই এসব এলাকার বেশিরভাগ হোটেলে অগ্রিম বুকিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জায়গা খালি হলে তবেই ঘর ভাড়া দেওয়া হচ্ছে অতিথিদের।
অনেক সময় এমন হয়, কেউ কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসেছেন, হাসপাতালের কাছাকাছি থাকতে পারলে সুবিধা হয়। কিন্তু জানা না থাকায় তাকে থাকতে হচ্ছে হাসপাতাল থেকে দূরের কোনো হোটেলে।
আসুন এবার জেনে নিই পার্ক স্ট্রিট সহ কলকাতায় কোন কোন জায়গায় বাংলাদেশিরা থাকতে পারেন সহজে। জেনে রাখা ভালো কলকাতার সমস্ত হোটেল বা টুরিস্ট লজে বিদেশি অতিথি রাখতে হলে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়।
কলকাতার সবচেয়ে বেশি হোটেল বা গেস্ট হাউজ আছে পার্ক স্ট্রিট এলাকায়। নিউমার্কেট চত্বরের আশপাশের রাস্তাগুলিতে। এখানে বিদেশি অতিথিরা থাকতে পারেন।
৬শ’ থেকে আড়াই হাজার রুপি প্রতি রাত হিসেবে ঘর ভাড়া পাওয়া যায়। চেক ইন-এর সময় সকাল ১২টা। এর মধ্যে কিছু কিছু হোটেলে ঢাকা থেকেও বুকিং দেওয়া যায়। তবে কলকাতায় এসে হোটেল নিলে, ঘরগুলি দেখে নেওয়ার এবং কিছুটা দরদাম করার সুযোগ পাবেন। তবে উৎসবের মৌসুমে পর্যটকদের চাপ বাড়ায় হোটেলগুলি অনেক সময় বাধ্য হয়ে অগ্রিম বুকিং বন্ধ করে দেয়।
কিন্তু কলকাতার পার্ক স্ট্রিট অঞ্চলেই একমাত্র হোটেল বা গেস্ট হাউজে আপনি থাকতে পারবেন এমনটা নয়। যদি আপনি চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসে থাকেন তবে, আপনি হাসপাতালগুলির কাছাকাছি জায়গায়ও থাকতে পারেন।
কলকাতার বেশিরভাগ বেসরকারি হাসপাতাল কলকাতার পূর্ব দিক অর্থাৎ ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দিকে। বাইপাস সেই রাস্তা যা দক্ষিণ দিকের সঙ্গে সোজা উত্তর কলকাতা হয়ে বিমান বন্দরের সঙ্গে জুড়েছে কলকাতাকে। এর পাশেই গড়ে উঠেছে কলকাতার প্রায় সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল।
এই হাসপাতালগুলিকে ঘিরে আছে বেশ কিছু গেস্ট হাউজ। যেখানে চাইলেই বাংলাদেশিরা থাকতে পারবেন।
যদি বাসে চড়ে কলকাতা আসেন তবে পার্ক স্ট্রিটে নেমে বাইপাসের উপর মুকুন্দপুর অঞ্চলে চলে আসতে পারবেন। ট্যাক্সিতে সময় লাগবে মিনিট কুড়ি। যদি রেলপথে আসেন তবে চিৎপুর স্টেশন থেকে সরাসরি চলে আসতে পারবেন মুকুন্দপুর। সময় লাগবে ৩০ থেকে ৪০ মিনিট। বিমানে এলে কলকাতা বিমানবন্দর থেকে ট্যাক্সিতে মিনিট ৩০ এর মধ্যে আপনি পৌঁছে যাবেন মুকুন্দপুর।
মুকুন্দপুরে পৌঁছেই আপনি দেখে নিতে পারেন গেস্ট হাউজ। এখানে ঘর ভাড়া ৩শ’ রুপি থেকে দেড় হাজার রুপি পর্যন্ত। ভালো করে ঘরগুলি দেখে পছন্দ করে নিতেই পারেন। প্রথমত চিকিৎসার জন্য কলকাতায় এসে থাকলে এই অঞ্চলে থাকলে যাতায়াতে সুবিধা হবে। দ্বিতীয়ত খরচও কিছুটা কম পড়বে। উৎসবের মৌসুমে নিউমার্কেট অঞ্চলে যখন জায়গা পাওয়া যায় না তখন মুকুন্দপুরে অনায়াসে হোটেল বা গেস্ট হাউজে রুম পাওয়া যাবে।
এছাড়া আছে দক্ষিণ কলকাতার ঠাকুরপুকুর অঞ্চল। এখানেও সস্তায় থাকতে পারেন পর্যটকরা। ৩০০-৭০০ রুপির মধ্যে ঘর পাওয়া যায়। রেল পথে এলে স্টেশন থেকে ট্যাক্সি করে চলে আসতে পারেন ঠাকুরপুকুর এলাকার ‘ক্যানসার হাসপাতাল’ বাসস্টপে। এখানেই কলকাতার বিখ্যাত সরোজ গুপ্ত ক্যানসার হাসপাতাল। এই হাসপাতালকে ঘিরে রয়েছে শতাধিক গেস্ট হাউজ। পার্ক স্ট্রিট থেকে মেট্রোযোগে ১২ মিনিটে পৌঁছে যাওয়া যায় টালিগঞ্জের মহানায়ক উত্তম কুমার স্টেশনে। সেখান থেকে ১৫ মিনিট অটোরিকশায় চড়ে ‘ক্যানসার হাসপাতাল’ বাসস্টপে। এখানে রাস্তার উপরেই আছে অনেক গেস্ট হাউজ। এছাড়াও আশপাশের গেস্ট হাউজের বিজ্ঞাপনও দেখতে পাবেন এখানে।
বেশ কিছু খাবার হোটেল আছে। প্রতিদিনই এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এখানে আসেন। গাড়ি চাইলে গেস্ট হাউজে বলে দিলেই হবে। ৩০ মিনিটের কম সময়ে পৌঁছাতে পারবেন নিউমার্কেট এলাকায়। তবে বেশি রাতে ট্যাক্সি পেতে সমস্যা হতে পারে। আছে মেট্রো, বাস ও অটো।
বড় দিনের সময় এই অঞ্চলের চার্চগুলিকে ঘিরে চলে উৎসব ও মেলা। খ্রিস্টধর্মের বেশ কিছু পরিবার এ অঞ্চলে থাকায় বাড়ি ও রাস্তাগুলি সেজে ওঠে রঙে রঙে। বড়দিনের সময় এই এলাকা প্রায় কার্নিভালের শহরে রূপ নেয়। সস্তায় কলকাতায় থাকতে এই এলাকা এক আদর্শ স্থান। তাই নিউমার্কেট এলাকায় ঘর না পেলে সহজেই এখানে চলে আসতে পারেন ভ্রমণকারীরা। তবে হোটেলে প্রবেশ করার আগেই জেনে নিতে হবে বিদেশি অতিথি রাখার অনুমতি আছে কি না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৫
ভিএস/এমজেএফ