ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

অপুষ্টিতে ধুঁকছেন কলকাতার রিকশাচালকরা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
অপুষ্টিতে ধুঁকছেন কলকাতার রিকশাচালকরা

কলকাতা: কলকাতার রিকশাচালকদের ওজন বহন করার সামর্থ্য দেখলে তাদের ‘সুপারম্যান’-এর সঙ্গে তুলনা করলে অতিরঞ্জন হবে না। রিকশাচালকদের ওপর হওয়া সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় উঠে এসেছে সাধারণভাবে নিজের ওজনের তিনগুণ বেশি ভার প্রতিনিয়ত বহন করেন তারা।



পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবার সাধ্যাতীত। এদের অনেকেরই প্রতিদিনের পুষ্টির নিশ্চয়তা নেই। সেটা বোঝা যায় তাদের চেহারা দেখলেই। না কামানো দাড়ি, তেলহীন রুক্ষ চুল, গায়ের ছেঁড়া গেঞ্জির ওপর দিয়ে দৃশ্যমান পাঁজরের হাড় চালকদের করুণ অবস্থার চিত্র তুলে ধরে।

বিলাসিতা বলতে একটাই মাথায় একটা গামছা দিয়ে বাঁধা পাগড়ি। সেটা শরীরের ঘাম মুছতে কাজে আসে। সম্ভবত জীবন যুদ্ধের এই লড়াকুদের কাছে গামছার পাগড়িটি আত্মসম্মানের প্রতীক। হাতে টানা রিকশাচালকদের সঙ্গে কলকাতায় আছে প্যাডেল রিকশা চালকও।

তাদের ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই। গবেষণা করে জানিয়েছেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের এক গবেষক। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের এর্গোনোমিক্স ওয়ার্ক ফিজিওলজি অ্যান্ড অকুপেশনাল হেলথ ল্যাবরেটরির তরফে গবেষক বিম্বমান বসু এই গবেষণা করেন।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, পা দিয়ে চালানো প্যাডেল রিকশাচালকদের থেকে টানা রিকশাচালকরা অনেক বেশি বোঝা তুলতে সক্ষম। কেমন সেই বোঝার পরিমাণ? গবেষণায় দেখা যাচ্ছে সোজা দাঁড়িয়ে এক ঝটকায় ৭৬ কেজি ওজন তুলতে পারেন টানা রিকশাচালকরা।

একটু ঝুঁকে তারা ওজন তোলেন ১০২ কেজি পর্যন্ত। যেখানে প্যাডেল চালিত রিকশাচালকরা সোজা দাঁড়িয়ে ৮৪ কেজি এবং একটু ঝুঁকে ৫৬ কেজি বোঝা তুলে থাকেন।

কিন্তু শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষায় দেখা গেছে সাধারণ মানুষের থেকে বেশি ওজন তুলতে সক্ষম হলেও রিকশাচালকরা ভুগছেন নানাবিধ রোগে। পেশাগত কারণে টানা রিকশাচালকরা কাঁধ, পিঠ, পা-সহ শরীরের বিভিন্ন জায়গার যন্ত্রণার শিকার হন।

শুধু তাই নয়, এদের শ্বাসজনিত সমস্যা রয়েছে বেশিরভাগের। গবেষণায় উঠে এসেছে বেশির ভাগ রিকশাচালক হার্টের অসুখ সিওপিডি-তে আক্রান্ত। এছাড়াও তারা প্রায় সবাই স্পন্ডেলোসিস এবং ডিস্ক হার্নিয়ার মতো রোগে আক্রান্ত।

গবেষকদের অবাক করেছে, এসব রোগ থাকা সত্ত্বেও কী করে রিকশাচালকরা সারাদিন এতো বোঝা বহন করতে সক্ষম। গবেষকদের অবাক করলেও এর কারণ লুকিয়ে আছে আর্থসামাজিক পরিস্থিতির মধ্যে। এর একটাই উত্তর হতে পারে, বেঁচে থাকার তাগিদ। সেই তাগিদেই ‘সুপারম্যান’ হয়ে উঠেছেন রিকশাচালকরা।

কিন্তু ধারাবাহিক অপুষ্টি ও চিকিৎসা না পাওয়া এসব রিকশাচালকরা কি আগামী দিনে ক্রমশ ঢলে পড়বে মৃত্যুর দিকে? যে টানা রিকশাকে কলকাতার ঐতিহ্য হিসেবে গণ্য করা হয়, সেই রিকশাচালকরা কি হারিয়ে যাবে অন্ধকারের গহনে? এ প্রশ্নের উত্তর একমাত্র দিতে পারে ভবিষ্যত।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৬
ভিএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।