ঢাকা, বুধবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

সিঙ্গুরে প্রকল্প এলাকায় লুটপাটে বিস্মিত আদালত

রক্তিম দাশ. সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৭ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০১১

কলকাতাঃ সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার ফের কলকাতা হাইকোর্টে সরকারের বিরুদ্ধে টাটা মোটরসের মামলার শুনানি হয়। প্রকল্পের মালামাল লুটপাট হয়েছে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে এদিন বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি সৌমিত্র পাল।



এদিন, দুপুর ২টা থেকে হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমিত্র পালের এজলাসে এই মামলার শুনানি শুরু হয়।
 প্রথমে টাটার আইনজীবী সমরদিত্য পাল বলেন, গতকাল তারা আদালতের কাছে অর্ন্তবর্তী স্থগিতাদেশ চেয়েছিলেন যে কারণন , ঠিক সেই ঘটনা ঘটেছে প্রকল্প এলাকায়। ’ তিনি কিছু ছবি ও সংবাদপত্রের কপিও আদালতে দেন।

এরপর তিনি বলেন, ‘বুধবার তাদের প্রকল্প এলাকার ভিতরে অবাধে লুটপাট হয়েছে। ’

বিচারপতি এ বিষয়ে জানাতে চাইলে রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র বলেন,‘ ওখানে ব্যাপক নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। আশঙ্কিত হওয়ার মতো কোনও কারণ নেই। ৫৯১ জন পুলিশকর্মী ও ৬ জন সহকারি পুলিশ সুপার নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পের বাইরে পড়ে থাকা কয়েকটি টিন ও বাঁশ ২-৩জন নারী নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। ’

এদিন টাটার আইনজীবী আবারও বলেন,‘ এই আইন সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিক। সিঙ্গুরে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে জমি হাতে পাওয়ার পর টাটা মোটরস প্রকল্পের কাজ অনেকটাই শেষ করে ফেলে। কিন্তু উপযুক্ত নিরাপত্তার অভাবে প্রকল্প স্থগিত করে দিতে হয়। আইন হাতে থাকলেই আইন নিয়ে যা ইচ্ছা করা যায় না। ’

দুপক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারপতি সৌমিত্র পাল শুক্রবার সকাল ১১টার মধ্যে হুগলীর জেলাশাসকের কাছে এই বিষয়ের ওপর রিপোর্ট তলব করেন। সেই সঙ্গে জানতে চেয়েছেন এখন যে নিরাপত্তা আছে তা যথেষ্ট কীনা।

প্রকল্প এলাকায় কড়া নিরাপত্তা

হাইকোর্টের নির্দেশে টাটা প্রকল্প এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করল জেলা প্রশাসন।

বুধবার কলকাতার বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেলে প্রকল্প এলাকার ভিতরে অবাধে লুটপাটের ছবি দেখানো হয়। তাতেই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

সকাল থেকেই এখানে বাড়তি পুলিশ নিয়োগ করা হয়। বাননো হয় অস্থায়ী কয়েকটি তাঁবু।

পুরো এলাকায় টহল দিতে শুরু করে পুলিশ ভ্যান। হুগলির পুলিশ সুপার তন্ময় রায় চৌধুরী বেশ ক’বার টহল দিয়ে যান। তিনি নিরাপত্তা নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে।

বিকালে সাংবাদিকদের পুলিশ সুপার বলেন, ‘প্রকল্প এলাকায় বড় কোনও লুটের ঘটনা ঘটেনি। কিছু টিন, বাঁশ ও ইট নিয়ে যাচ্ছিলেন কয়েকজন মহিলা। তাদের পুলিশ ধাওয়া করলে তারা মালপত্র ফেলে পালিয়ে যায়। ’

শুক্রবার সিঙ্গুর নিয়ে জরুরি বৈঠক রাজ্য মন্ত্রিসভার

সিঙ্গুরে ঘটনা নিয়ে টাটা মামলা করায় চিন্তিত রাজ্য সরকার। এই বিষয়ে পদক্ষেপ ঠিক করতে শুক্রবার জরুরি বৈঠকে বসছে রাজ্য মন্ত্রিসভা।

বিধানসভা ভবনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

এই বৈঠকে মূলত সিঙ্গুর নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানাগেছে মহাকরণ সূত্রে। সব সদস্যকে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।

সিঙ্গুর নিয়ে বিজেপির প্রতিক্রিয়া

সিঙ্গুরের ঘটনা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাল রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে তারা রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করল।

এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ‘দিনের বেলায় নোটিশ লাগালে এত ঝামেলা হত না। এখন বিষয়টি আদালতে গেল। জমি ফেরত নিয়ে রাজ্য সরকারের আন্তরিকতা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠছে। ’

এদিন তিনি আরও বলেন,‘ আদালতের বাইরে টাটার সঙ্গে সরকারের আগে আলোচনা হওয়াটা দরকার ছিল। তাতে সমস্যার সমাধান হলেও হতে পারত। ’

এদিন তিনি সিঙ্গুরের ভাগচাষিদের জন্য ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।

ভারতীয় সময়: ১৭৪৫ ঘন্টা, জুন ২৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।