ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতার হেরিটেজ স্ট্রিট ফুড ‘রোল’

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৬
কলকাতার হেরিটেজ স্ট্রিট ফুড ‘রোল’ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: মেক্সিকোর ‘কসিডিয়ার’ কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের ‘শোয়ারমা’ খাবারের সঙ্গে কলকাতার ‘রোল’র একটা মিল আছে। কিন্তু স্বাদের ক্ষেত্রে রোলের সঙ্গে অন্যকিছুর তুলনা হয় না বলে জানান কলকাতার ভোজন রসিকরা।



তেলে ভাঁজা ময়দার রুটির ভিতর ডিম, মাংসের পুর আর সঙ্গে সস কিংবা লেবুর রস ও গোল মরিচের মিশ্রণে বানানো এই রোল।

কলকাতার স্ট্রিট ফুডের (রাস্তার পাশের খাবার) ‘বেতাজ বাদশা’ কথাটা আক্ষরিক অর্থে সত্য। চট-জলদি বানানো যায়, তাড়াতাড়ি খেয়েও ফেলা যায়। এটা যদি স্ট্রিট ফুডের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয় তবে ‘রোল’ এক্ষেত্রে প্রথম। বাংলাদেশে ‘শর্মা’ বলে পরিচিত খাদ্যটির কিছুটা কাছাকাছি কলকাতার ‘রোল’।

পেশাগতভাবে খাবার ব্যবসায় জড়িত শুভাশীস মুখ্যোপাধ্যায়। তিনি জানান, সালাদ আর হুমস দিয়ে তৈরি ‘শোয়ারমা’ কিন্তু রোলের স্বাদের ধারে কাছে আসতে পারবে না। আর ‘শোয়ারমা’ বানাতেও সময় লাগে অন্তত একদিন।

মসলাদার খাবার হিসেবে বিখ্যাত রুটির মধ্যে মাংস দেওয়া মেক্সিকান ‘কসিডিয়ার’ কলকাতার রোলের কাছে অনেকটাই ফিকে বলেও মনে করেন তিনি।

এই রোলের আদি জন্ম কোথায়? এটা কী বিদেশ থেকে রফতানি হয়েছে বঙ্গ রসনায়, নাকি এটি দেশীয়? সে নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। কে এই রোল নামের মুখরোচক খাবারটি প্রথম তৈরি করেন। অনেকের এই জিঞ্জেসাও আছে।

কাগজপত্র ঘেঁটে একসূত্রে জানা যায়, ‘রোল’ আবিষ্কার হয় খোদ কলকাতাতেই। যিনি এটি আবিষ্কার করেন তার নাম শেখ হাসান রেজা। ১৯৩০ সাল থেকেই কলকাতায় পাওয়া যাচ্ছে ‘রোল’। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসন কালেও বঙ্গ রসনায় ‘রোল’ বিষয়টি ছিল।

তার মানে রোল শুধু লোভনীয় স্ট্রিট ফুড নয়, ঐতিহ্যবাহী খাবারও বটে।

ময়দার রুটিকে হালকা আঁচে সেঁকে নিয়ে তেলে ভাঁজা হয়। তার মধ্যেই একটি ডিম ফাটিয়ে ঢেলে দেওয়া হয়। তারপর রুটির সঙ্গে ডিম ভাঁজা হয়ে গেলে সেই রুটির মধ্যে পেঁয়াজ, মরিচ, কুচি করে কাটা শসা, লেবুর রস, গোল মরিচের গুড়া এবং সস রেখে সেটিকে গোল করে পাকিয়ে কাগজে মুড়ে পরিবেশন করা হয়। যখন ডিমের সঙ্গে দেওয়া হয় মুরগির মাংস। তখন সেটির নাম হয়ে যায় চিকেন, মহিষের বা অন্য মাংস দিলে হয়ে যায় মাটন রোল কিংবা বিফ রোল।

জানা যায়, উনিশ শতকের গোড়ার দিকে রোলের আবিষ্কারক শেখ হাসান রেজা ভারতের উত্তর প্রদেশের লখনৌ থেকে কলকাতায় এসে একটি দোকান দিয়েছিলেন। ঠিক কলকাতার হগ মার্কেট বা নিউমার্কেটের বিপরীতে। তার দোকানের পরোটা আর কাবাব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

শেখ হাসান রেজা ঠিক করেন পরোটা আর কাবাবকে একসঙ্গে মুড়ে পরিবেশন করলে কেমন হয়। সেই ভাবনা থেকেই  কলকাতায় রোলের জন্ম। এরপর বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যদিয়ে আজকের কলকাতার অন্যতম জনপ্রিয় স্ট্রিট ফুড রোল।

কলকাতার অন্যতম বিখ্যাত রোলের দোকান ‘জিশান’। এছাড়া, পার্ক স্ট্রিট এলাকার ‘বাদশা’, দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট এলাকার ‘বেদুঈন’সহ প্রায় প্রতিটি পাড়ায় একাধিক রোলের দোকান আছে।

শুধু কলকাতা নয় পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম থেকে শুরু করে প্রায় সব জায়গায় রোলের দোকান দেখা যায়। সুযোগ পেলে কেউই রোলের স্বাদ আস্বাদন করতে মিস করেন না।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭, ২০১৬
ভিএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।