কলকাতা: একজন মানুষ দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলেন, তাকে উদ্ধার করে নেওয়া হলো হাসপাতালে। সেখানে পাঁচ ঘণ্টা চিকিৎসা শেষে তাকে মৃত ঘোষণা করা হলো।
এই গুরুতর অভিযোগ উঠেছে কলকাতার ‘অভিজাত’ অ্যাপোলো হাসপাতালের বিরুদ্ধে। আর যার চিকিৎসা ও মরদেহ নিয়ে এই অভিযোগ, তিনি হলেন সমাজসেবী অসীম ঘোষ। স্বল্প বেতনে চাকরির ফাঁকে বিনামূল্যে অর্ধশত ছিন্নমূল শিশুকে পড়াশোনা করাতেন তিনি।
এ নিয়ে সোমবার (৩ অক্টোবর) উত্তাল ছিল কলকাতা। হাসপাতালটির সামনে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। এরমধ্যে কয়েকশ’ ছিল বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। তাদের হাতে ছিল অ্যাপোলোর চিকিৎসা সেবার নামে জালিয়াতির বিরুদ্ধে নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার।
ঘটনা শুক্রবার (৩০ সেপ্টম্বর) রাতের। কলকাতার সল্টলেক সংলগ্ন শ্রীভূমি বাস স্টপেজে রাত ১০টা ১০ মিনিটে দাঁড়িয়ে ছিলেন অসীম ঘোষ। এসময় তার দু’টি পায়ের ওপর দিয়ে বাস চলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে পথচারীরা অসীমকে অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে আসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যু হয় তার। অভিযোগ উঠেছে, হাসপাতালে যখন অসীমকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তার চেতনা ছিল। সবমিলিয়ে হাসপাতালে ৫ ঘণ্টা জীবিত ছিলেন অসীম। এরপর মৃত ঘোষণা করা হয় তাকে। কিন্তু এই পাঁচ ঘণ্টায় অসীমের চিকিৎসার বিল দাঁড়ায় ৯৫ হাজার রুপি।
কেবল এই বিল দেখিয়েই অবাক করেনি অ্যাপোলো কর্তৃপক্ষ। এরপর স্বজনরা যখন মরদেহ নিতে এলেন, কর্তৃপক্ষ হুংকার ছাড়লো, পুরো বিল দেওয়া না হলে মরদেহ ছাড়া হবে না।
এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই কলকাতায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নগরীর ভাষা ও চেতনা সমিতি এবং বিবেকানন্দ সেবাব্রত সমিতি এর তরফ থেকে প্রথমেই এই ঘটনার প্রতিবাদ করা হয়। এরপর সোমবার ভাষা ও চেতনা সমিতি’র ডাকে অ্যাপোলো হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভে যোগ দেন পাঁচশ’ মানুষ। প্রতিষ্ঠানের পোশাক পরেই হাজির হয় প্রায় তিনশ’ শিক্ষার্থী।
পরে অবশ্য, জনতার বিক্ষোভ ও সংবাদকর্মীদের জেরার মুখে অর্থের অংক ৫০ হাজার রুপিতে নামিয়ে মরদেহের ছাড়পত্র দেয় কর্তৃপক্ষ।
আন্দোলনের বিষয়ে ভাষা ও চেতনা সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এমানুল হক বাংলানিউজকে জানান, তারা পাঁচ দাবিতে আন্দোলন করছেন। এগুলো হলো অসীম ঘোষের মৃত্যুর পূর্ণ তদন্ত করতে হবে, ডাক্তারির নামে ‘ডাকাতি’ বন্ধ করতে হবে, ঝুটা বা বাড়তি বিল বন্ধ করতে হবে, চিকিৎসার নামে অর্থ লুট রোধ করতে হবে এবং সরকারকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর দেওয়া প্রতিশ্রুতি মতো ১০ শতাংশ গরিব মানুষকে বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিতের ব্যবস্থা করতে হবে।
এমানুল হক বলেন, চিকিৎসার নামে এই অর্থ লুটের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দ্বারস্থ হবো আমরা।
এ বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করে তিনি অসীমের মরদেহ আটকে রাখার তীব্র প্রতিবাদও জানান।
এমানুল হক জানান, যেসব চিকিৎসা করা হয়নি সেই চিকিৎসারও বিল বানিয়েছে অ্যাপোলো হাসপাতাল। বিলে দুই ব্যাগ রক্তের দাম ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৩২০ রুপি।
এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, রোগীর স্বজনরা প্রতিদিনের বিল প্রতিদিন দেখার অভ্যাস করুন। প্রতিদিনের বিল এবং চিকিৎসার ফাইলের ছবি তুলে রাখুন। সম্ভব হলে রোগীর মুখ থেকে জেনে নিন কী ঔষধ তাকে সেবন করানো হয়েছে এবং কী পরীক্ষা করানো হয়েছে।
অ্যাপোলোর এই জালিয়াতিতে প্রশ্ন উঠতে শুরু করছে, কলকাতার মানুষদের ক্ষেত্রেই এই অবস্থা হলে, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কতোটা সমস্যার মুখে পড়তে হয়।
এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ২৩৫৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৩, ২০১৬
ভিএস/এইচএ/