ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সফল দুই ছাত্রছাত্রী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের সফল দুই ছাত্রছাত্রী মনোমি তানজানা অর্থী

কলকাতা: বিদেশের মাটিতেও বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা বহন করে চলেন দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই ধারা বজায় রেখে কলকাতার বুকে বাংলাদেশের চেতনাকে শিখরে তুলে ধরেছেন দুই ছাত্রছাত্রী এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান এবং মনোমি তানজানা অর্থী।

সাম্প্রতিককালে কলকাতায় নৃত্য নিয়ে পাঠরত এই দুই ছাত্রছাত্রীর সাফল্যকে সমাদৃত করলো, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ও পশ্চিমবঙ্গ ‘রাজ্য সঙ্গীত একাডেমী এবং ওয়েস্ট বেঙ্গল ডান্স গ্রুপ ফেডারেশন।

এই দুই সফল ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে কথোপকথনে উঠে আসে তাদের শিক্ষা, অনুপ্রেরণা, গুরু-শিষ্য পরম্পরা এবং দুচোখে জমা থাকা স্বপ্নগুলি।

মনোমি তানজানা অর্থী, ২০১৩ সালে ঢাকা থেকে কলকাতায় আসেন রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নৃত্য নিয়ে পড়াশুনা করার জন্য। মনিপুরী নৃত্যের একনিষ্ঠ ছাত্রী হিসেবে তিনি সফলভাবে উত্তীর্ণ হন। তবে শুধু সফল ভাবে উত্তীর্ণ হন বললে তার প্রতিভার প্রতি মোটেই সুবিচার করা হয় না। মনোমি তানজানা অর্থী রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনিপুরী নৃত্য বিভাগে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অধিকার করেন।

এই সাফল্যের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গুরু আমুবী সিংহ পুরস্কার লাভ করেন। অর্থী জানান, তার নাচের শুরু একদম ছোটবেলা থেকে। তার পথ চলা শুরু বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে। এরপর বুলবুল ললিত কলা একাডেমি (বাফা) এবং জাগো আর্ট সেন্টারে শিক্ষা গ্রহণ। এরপর তিনি গুরু এম আর ওয়াশেক -এর কাছে সৃজনশীল নাচে শিক্ষা গ্রহণ করেন। মনিপুরী নাচে শিক্ষা শুরু হয় গুরু তামন্না রহমানের কাছে।

তিনি বাংলাদেশ শিশু শিল্পী প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক লাভ করেন। নাচের জন্য ভারতের বিভিন্ন রাজ্য ছাড়াও অর্থী ঘুরেছেন থাইল্যান্ড, জাপান ও নেপালের মতো দেশেও। বর্তমানে তিনি মনিপুরী

নৃত্যে মাস্টার্স করছেন এবং গুরু শ্রীমতি কলাবতী দেবী এবং গুরু বিম্বাবতী দেবীর কাছে মণিপুরি নাচের উপর তালিম নিচ্ছেন।

পরিবারের প্রেরণার কথা বলতে গিয়ে বাবার সাহায্যের সঙ্গে মায়ের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন অর্থী।

তিনি জানান, পাছে মেয়ে ডাক্তারি পড়তে চলে যায় তাই ক্লাস নাইনে ‘বায়োলজি’ নিয়ে পড়তেই দেননি ইচ্ছে থাকলেও নৃত্য চর্চা না করতে পাড়া অর্থী-এর জননী। এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান এস এম হাসান ইশতিয়াক ইমরান। পিতা এস এম ইউসুফ ইকবাল মুক্তিযোদ্ধা।

নাট্যকার পিতার স্বপ্নই যেন বাস্তবের ইমরান। ২০১৩ সালে আইসিসিআর স্কলারশিপ নিয়ে কলকাতায় নৃত্য নিয়ে পড়াশুনা করতে আসেন ইমরান। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সঙ্গীত একাডেমি-থেকে কথক নৃত্যে পুরস্কার লাভ করেছেন।

ইমরানের নাচের শুরু চতুর্থ শ্রেণি থেকে। গুরু সঞ্জয় ভৌমিক, গুরু এমআর ওয়াসেক এবং বাফা থেকে তিনি নৃত্য প্রশিক্ষণ নেন। গুরু সাজু আহমেদের কাছে কথক নৃত্যের শিক্ষা শুরু।

২০০৪ সালে ‘নতুন কুড়ি’ প্রতিযোগিতায় স্বর্ণ পদক লাভ করে সকলের নজরে আসেন। লুবনামারিয়ামের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন ইমরান। এরমধ্যে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কত্থক নৃত্যে স্নাতক হয়ে মাস্টার্স পড়ছেন। বর্তমানে উপাসনা সেন্টার ফর ডান্স-এ গুরু অসীমবন্ধু ভট্টাচার্য-এর কাছে শিক্ষা গ্রহণ করছেন।

অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে ইমরান জানান, কলকাতার মানুষ তার মতো বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের আপন করে নিয়েছে। তবে সমস্যার মুখে যে তাকে পড়তে হয় নি তেমনটা নয়। কখনও বাসস্থান সম্পর্কিত সমস্যা, আবার কখনও প্রয়োজনে আর্থিক লেনদেনের বাস্তব সমস্যার কথাও তুলে ধরেন।

এ প্রসঙ্গে তিনি অন্তত ছাত্রদের জন্য দুই দেশের মধ্যে সহজ-সরল ব্যাংকিং পরিষেবা চালুর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

ইমরান ২০০৪ সালে জাপান সফর করেন। এছাড়া জনপ্রিয় উদয়শঙ্কর নৃত্যোৎসব, রায়গড় নৃত্যোৎসব, খয়ড়াগড় নৃত্যোৎসব, খাজুরাহো নৃত্যোৎসব, অনন্যা নৃত্যোৎসব, কোনারক নৃত্যোৎসবেও অংশগ্রহণ করেন।

ভবিষ্যতে বাংলাদেশ লোক সংস্কৃতির সঙ্গে ভারতীয় শাস্ত্রীয় নৃত্যকে মিলিয়ে কাজ করার ইচ্ছা আছে বলে তিনি বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।

অর্থী জানিয়েছেন, তিনি চান নৃত্য বিদ্যালয় এবং কলেজ স্তরে পাঠ্যক্রমে আসুক। বাংলাদেশে নৃত্য শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে চান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৭
ভিএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।