ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

‘হালখাতা’ কিনে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের

সুদীপ চন্দ্র নাথ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২১
‘হালখাতা’ কিনে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ কিনে নতুন বছর শুরুর প্রস্তুতি ব্যবসায়ীদের

আগরতলা (ত্রিপুরা): কথায় আছে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। পহেলা বৈশাখ অর্থাৎ বছরের শুরুর দিনটি উৎসবের মধ্য দিয়ে এই পার্বণের সূচনা হয়।

বাংলা বছরের শুরুর দিনটিতে ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার হিসাব নিকাশ নতুন খাতাতে শুরু করেন। এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় হালখাতা অনুষ্ঠান। আর পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, সেটাই ‘হালখাতা’ নামে পরিচিত।

আগরতলার বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা তাদের নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হিন্দু শাস্ত্র অনুসারে সিদ্ধিদাতা গণেশের পূজার মাধ্যমে নতুন বছরে নতুন হালখাতা সূচনা করেন। অপরদিকে, অপেক্ষাকৃত ছোট ব্যবসায়ীরা দোকানে পূজার আয়োজন না করলেও আগরতলার লক্ষ্মীনারায়ণ বাড়ি মন্দির, সেন্ট্রাল রোড শিববাড়ি মন্দিরে পুরোহিতদের দিয়ে নতুন হালখাতার পূজার মধ্য দিয়ে শুভ সূচনা করেন।  


পহেলা বৈশাখ হালখাতার উৎসবকে কেন্দ্র করে এখন রাজধানী আগরতলা বিভিন্ন জায়গায় বইসহ অফিসের প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রির দোকানগুলোতে নানা আকারের ও নানা ডিজাইনের হালখাতার ছড়াছড়ি। রাজধানী আগরতলা ওরিয়েন্ট চৌমুহনী এলাকায় সবচেয়ে বড় বইয়ের দোকানগুলোতে এখন স্তরে স্তরে সাজানো রয়েছে নানা রকমের হালখাতা। এবছর প্রায় প্রতিটি দোকানেই লাল মলাটের এই হালখাতা কেনাবেচার জন্য ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  

রাজধানী আগরতলা এলাকার ব্যবসায়ী স্বপন পাল জানান, গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই সময়ে লক ডাউ ছিলো। তাই দোকানপাট বন্ধ থাকায় হালখাতা বিক্রি হয়নি। ব্যবসায়ীরা পহেলা বৈশাখের দিন পূজার আয়োজন করতে পারেননি। তবে এবছর ব্যবসায়ীরা নতুন খাতা কিনতে ভিড় করছেন দোকানগুলোতে। বিক্রিও বেশ ভালো হচ্ছে। তবে আগামী দু-একদিনের মধ্যে আরও বিক্রি বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।

এই এলাকায় আশা একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, অপেক্ষায় বসে থাকেন কবে পহেলা বৈশাখ আসবে এবং নতুন খাতায় ব্যবসার হিসাব শুরু করবেন। যুগ যুগ ধরে বংশপরম্পরায় এই রীতি চলে আসছে কিন্তু গতবছর করোনা মহামারির আগ্রাসনের কারণে এই ঐতিহ্যবাহী উৎসবে ছেদ পড়ে। তবে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই আশা করছেন যে, এ বছর তারা এই উৎসবে শামিল হতে পারবেন।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক সময় সর্বজনীন উৎসব হিসেবে ‘হালখাতা’ ছিল বাংলা নববর্ষের প্রাণ। ১৫৮৪ সালে ১০-১১ মার্চ সম্রাট আকবর বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতা’র প্রচলন হয়। অতীতে জমিদারকে খাজনা দেওয়ার অনুষ্ঠান হিসেবে ‘পুণ্যাহ’ প্রচলিত ছিল। বছরের প্রথম দিন প্রজারা সাধ্যমতো ভালো পোশাক পরে জমিদার বাড়িতে গিয়ে খাজনা পরিশোধ করতেন। তাদের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো। জমিদারী প্রথা উঠে যাওয়ায় পুণ্যাহ বিলুপ্ত হয়েছে।
কিন্তু হালখাতা যেহেতু ব্যবসায়ীরা পালন করতেন তাই এটি অক্ষুণ্ণ আছে আজও।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২১
এসসিএন/এমআরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।