আগরতলা (ত্রিপুরা): ফল ধরার পর যে পরিত্যক্ত কলা গাছ থাকে তার গুড়া দিয়ে নতুন চারা উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করলো ত্রিপুরা সরকারের উদ্যান বিভাগ। সাধারণভাবে জন্ম নেওয়া কলা চারা থেকে এই উদ্ধতিতে তৈরি চারার কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে।
সাধারণত যেকোনো প্রজাতির কলা গাছে একবার ফল হয়ে গেলে গাছটি আর কোনো কাজে লাগে না, পচে নষ্ট হয়। সেসঙ্গে ওই কলা গাছের গুড়ার স্কন্দটিও ধীরে ধীরে পচে মাটিতে মিশে যায়। কিন্তু কলার কাঁদি গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর গাছের স্কন্দটাকেও সঠিক পদ্ধতি মেনে সামান্য পরিচর্যা করলে চার থেকে ছয়টি নতুন চারা গাছের জন্ম হয়।
এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে ত্রিপুরা সরকারের কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অন্তর্গত উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের কৃষি গবেষকরা।
আগরতলার পার্শ্ববর্তী নাগিছড়া এলাকার উদ্যান এবং ভূমি সংরক্ষণ বিভাগের হর্টিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউটের টিস্যু কালচার বিভাগের কর্মকর্তা ঝর্ণা দত্ত বাংলানিউজকে জানান, সাধারণত কলা গাছে ফল ধরার পর গাছ পচে নষ্ট হয় এবং স্কন্দ পড়ে থাকে। কবে এই স্কন্দ থেকে নতুন চারা বের হয় তার কোনো ঠিক থাকে না আবার অনেক সময় তা পচে যায়। কিন্তু কলা সংগ্রহ করার সঙ্গে সঙ্গে যদি স্কন্দটাকেও তুলে আনা যায়, তাহলে নতুন একাধিক চারা তৈরি করা সম্ভব।
মূলত দুটি পদ্ধতিতে চারা করা সম্ভব। প্রথম পদ্ধতিটি হল স্কন্দ তোলে এনে প্রথমে ছত্রাক নাশক ও কীটনাশন দিয়ে শোধন করে বেড তৈরি করে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে লাগিয়ে নতুন চারা উদ্ভাবন করা যায়।
এই চারা গাছ পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে ১০ থেকে ১১ মাসের মধ্যে ফল ধরে। এই ধরনের চারার কিছু বিশেষ সুবিধা রয়েছে বলে জানান ঝর্ণা দত্ত। তিনি বলেন, এই পদ্ধতিতে মূল গাছকে কেটে ফেলায় স্কন্দের বাকি কুড়ি বের হওয়ার জায়গাগুলো থেকে এগুলো খাবার পায় এবং দ্রুত বেড়ে উঠতে পারে। সবকটি চারা একসঙ্গে সমান তালে বেড়ে উঠে এমনকি ফুল ও ফল একসঙ্গে হয়। তাই চাষিদের আগাম জানা থাকে কবে গাছে কলা আসবে এবং একসঙ্গে বিক্রি করলে অধিক অর্থ আসবে। যা চাষিদের অর্থনৈতিক ভাবে সহায়তা করবে।
এই পদ্ধতিতে চাষিরা কি নিজ বাড়িতে চারা উৎপাদন করতে পারবেন? এর উত্তর তিনি বলেন, যে কেউ চাইলেই এমনভাবে চারা নিজ বাড়িতে তৈরি করতে পারবেন। এর জন্য অর্ধেক ছায়াযুক্ত সেডে অথবা বড় গাছের তলায় বালি দিয়ে বেড তৈরি করে তাতে কলার স্কন্দ বসিয়ে নিয়মিত সেচ দিলে ২০ দিনের চারা বেরিয়ে আসে। পরবর্তী সময় চাষিরা জমিতে এই চারা লাগিয়ে বাগান তৈরি করতে পারেন।
কলা গাছের স্কন্দ দিয়ে চারা তৈরির আর একটি পদ্ধতি রয়েছে যাকে বলে মেক্রো প্রপাগেশন। এই পদ্ধতি চারা উৎপাদনের জন্য নূন্যতম দেড় কেজি ওজনের স্কন্দ নির্বাচন করতে হয়, তাহলে স্ববল ও চারা তৈরি হবে বলে জানান ঝর্ণা দত্ত। স্কন্দ সংগ্রহ করার পর প্রথমে এগুলোকে ছত্রাক ও বালাইনাশক মিশ্রিত পানিতে ৩০ মিনিটি ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর এগুলোকে এরপর একদিন রোদে শুকাতে হবে। সবশেষে স্কন্দটাকে কেটে নিতে হবে। এই কাজে লক্ষ্য রাখতে হবে যেদিকে নতুন চার বের হবে এগুলোর যেন ক্ষতি না হয়। কাঠের গুড়া, গোবরের গুড়া ও বালি মিশ্রিত বেডে অথবা ছোট জায়গায় বসিয়ে দিলে ৩০দিনের মধ্যে নতুন চারা চলে আসবে।
কলা চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক পদ্ধতি থেকে এই পদ্ধতির সুবিধা হচ্ছে যেখানে একটি স্কন্দ থেকে একটি চারা উৎপাদন হয় সেখানে এই পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করলে নূন্যতম ৪ থেকে ৬টি চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়। কারণ একটি স্কন্দে চারা আসার যে জায়গাগুলো সুপ্ত অবস্থায় থাকে এগুলো জেগে উঠে এবং বেশি চারা জন্ম নেয়।
এই পদ্ধতিতে তৈরি করা চারা দিয়ে কলা বাগান গড়ে তোলা হয়েছে হর্টিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে। গাছগুলোতে অনেকটা বড় আকারের। যেহেতু রাজ্যে সবরি কলার চাহিদা বেশি সেজন্য তারা এই পদ্ধতিতে এই কলার চারা উৎপাদন করছেন। তবে চাইলে অন্য প্রজাতির কলা চারাও উৎপাদন করা সম্ভব।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল, ২০২১
এসসিএন/এমআরএ