দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় সংগঠিত ঘটনার জের এসে পড়েছে ত্রিপুরায়। বর্তমানে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চের মিছিল ঘিরে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে সেখানে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব এবং পুলিশের কাছে নিরাপত্তার আবেদনপত্র জমা দিয়েছে জামিয়াত উলেমা হিন্দ। জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছে, ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্যের ১৫০ মসজিদে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি আগের চেয়ে শান্ত হয়েছে বলেও দাবি প্রশাসনের।
বাংলাদেশের ঘটনার জেরে গত ২১ অক্টোবর ত্রিপুরার গোমতি জেলার উদয়পুরে এক বিশাল মিছিলের আয়োজন করে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং হিন্দু জাগরণ মঞ্চ। সেই মিছিল কেন্দ্র করে প্রথম উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে মিছিল এগোনোর চেষ্টা করলে প্রশাসনের সঙ্গে কার্যত খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় আন্দোলনকারীদের। এ সময় পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোঁড়া হলে তারা পাল্টা লাঠিচার্জ করে। ঘটনায় দুই পক্ষের কয়েকজন আহত হয়। পুলিশের বক্তব্য, ওই এলাকায় মুসলিমদের বসবাস থাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে মিছিল আটকানো হয়েছিল। যাতে উত্তেজনা ছড়িয়ে না পড়ে। কিন্তু আরএসএস নেতা অভিজিৎ চক্রবর্তীর জানান, আগেই পুলিশের কাছ থেকে মিছিলের অনুমতি নিয়ে রাখা হয়েছিল।
এদিকে এ ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিকে গুজব ছড়াতে শুরু করে। উনকোটিতে এক দেবতার মূর্তি পাহাড়ের ওপর ফেলে রেখে আসা হয়েছে বলে গুজব ছড়ায়। উনকোটির পুলিশ সুপার রতি রঞ্জন দেবনাথ সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যেভাবে গত কিছুদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে, তাতে পাহাড়ের ওপর ওই জায়গায় কারো পক্ষে মূর্তি রেখে আসা সম্ভব নয়। বিষয়টি গুজব বলেই তিনি দাবি করেন।
ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলার কাছেও দুই-একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। একটি মসজিদে সামান্য ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে অপরাধীদের ধরা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। এছাড়া ধর্মনগরেও এমন ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার (২২ অক্টোবর) বিপ্লব দেবের কাছে আবেদনপত্র দেন জামিয়াত উলেমা হিন্দের ত্রিপুরা শাখার প্রধান মুফতি তৈবুর রহমান। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ঘটনার নিন্দা জানাই। কিন্তু ত্রিপুরাতে যা ঘটছে, তাও মেনে নেওয়া যায় না। মুসলিমদের ওপর আক্রমণের চেষ্টা হচ্ছে। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করছি। ’
বরাক বুলেটিনের সাংবাদিক অনির্বাণ রায়চৌধুরী বলেন, ‘গত তিনদিন ত্রিপুরায় যথেষ্ট উত্তেজনা ছিল। তবে পুলিশ কড়া পদক্ষেপ নেওয়ায়, এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক। ’ অনির্বাণের বক্তব্য, আসাম এবং ত্রিপুরায় বিজেপি সরকারের আমলে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বারবার। এতে শাসকদলের ইন্ধন আছে বলেই তিনি মনে করেন।
তবে ত্রিপুরার বিজেপি মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, এ ধরনের ঘটনা বিজেপি সমর্থন করে না। দলের সংখ্যালঘু সেলের কর্মীরা আক্রান্ত অঞ্চলগুলোতে পৌঁছে গেছে।
এদিকে ২১ অক্টোবর থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব হওয়ার কথা ছিল আগরতলায়। পরিস্থিতি দেখে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ হাই কমিশন জানিয়েছে, সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এরপর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা দেখে উৎসব বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।
সূত্র: পিটিআই, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, দ্য ওয়্যার ও ডয়চে ভেলে
বাংলাদেশ সময়: ১৯১০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৬, ২০২১
এনএসআর