বরিশাল: পদ্মা সেতু স্থাপনের পর নদীবেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। তবে এখনও আশানুরুপ কল-কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করেনি এ অঞ্চলে।
শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ শুরু হলে এ সেক্টরের উন্নয়নে সমৃদ্ধ হবে বৃহত্তর বরিশাল। তাই পরিস্থিতির উত্তরণে ভোলার গ্যাস পাইপলাইনে বরিশালে সরবরাহের দাবি তাদের।
শিল্প উদ্যোক্তাদের তথ্যানুযায়ী, শুধু বরিশাল শহর নয়, ভোলা ব্যতিত বিভাগের বাকি ৫ জেলায় যে সব কল-কারখানা রয়েছে, তার বেশিরভাগই বিদ্যুতের ওপর নির্ভর। আর কিছু আছে সিলিন্ডার গ্যাসসহ অন্য জ্বালানির ওপর নির্ভর করে চলছে।
তবে গত কয়েকবছরে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ বিভিন্নখাতে যে হারে উন্নয়ন হয়েছে তাতে যে পরিমানে কল-কারখানা স্থাপন হওয়ার কথা ছিলো তা বাস্তবে হয়নি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়া বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী জসীম পারভেজ জানান, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের আগে থেকেই বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের দুইপাশে আমতলী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে শিল্প মালিকরা জমি কিনেছেন। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সইভাবে অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি।
প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দক্ষিণাঞ্চলে বাস্তব উন্নয়ন হয়েছে। ভোলা ব্যতিত বরিশাল বিভাগের বাকি ৫ জেলার মধ্যে ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়েছে। সবশেষ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন তো এ অঞ্চলে সড়কপথের বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এছাড়া নৌপথেও পরিবর্তন আনা হয়েছে, অভ্যন্তরীন বিভিন্ন নৌপথে ড্রেজিং করে সচল করা হয়েছে। এছাড়া পণ্য পরিবহনের জন্য মংলা বন্দর থেকে বরিশাল হয়ে ঢাকার নৌপথেরও উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। যদিও এরইমধ্যে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হয়েছে, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়ে গেছে এবং আকাশপথেও বিমান চলাচল সচল রয়েছে। এছাড়া এ অঞ্চলে রয়েছে বিপুল সংখ্যক দক্ষ জনবলও। সবমিলিয়ে বরিশাল অঞ্চল এখন শিল্প বান্ধব একটি অঞ্চল।
যদিও ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। আর এই বিদ্যুৎ ও সিলিন্ডার গ্যাস দিয়ে পণ্য উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় প্রতিযোগিতায় এগুতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। বর্তমানে বরিশাল বিসিকে এলপি গ্যাস নির্ভর কারখানাগুলোর খরচ ন্যাচারাল গ্যাসের থেকে কয়েকগুণ বেশি। আবার ঢাকায় গ্যাস নির্ভর কারখানাগুলোর যে খরচ হচ্ছে বিদ্যুৎ দিয়ে সেই ধরনের কারখানা সচল রাখতে ৩-৫ গুণ বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে বরিশাল অঞ্চলে কল-কারখানা গড়ে তুলতে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে বিনিয়োগকারীদের মাঝে।
এ কারণে আগে থেকেই বরিশাল অঞ্চলের বিভিন্ন বিসিকে খালি থাকা প্লটগুলো এখনও বরাদ্দ নিতে অনীহা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবার যারা প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তারাও অবকাঠামো নির্মাণ করছেন না গ্যাসের অজুহাতে।
আর যারা এরইমধ্যে অবকাঠামো গড়ে পণ্য উৎপাদন করছেন, তারা বলছেন বরিশালে অপার সম্ভাবনা থাকলেও গ্যাস না হলে অন্য বিভাগের সঙ্গে ব্যবসায় মার খেয়ে যেতে হবে। ফলে এর প্রভাব এ অঞ্চলের মানুষের কর্মসংস্থানের ওপরেও পরবে।
বরিশাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি এর সভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, বিভাগের মধ্যে ভোলাতেই রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাস। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে এ গ্যাস ছড়িয়ে দিলে পার্শবর্তী বিভাগের জেলার সাথে আমরাও ব্যবসায়িকভাবে টিকে থাকতে পারব। তাই বিভাগের জেলাগুলোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে সেই গ্যাস সরবরাহের দাবি ব্যবসায়ীদের।
আর সরকার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিন উল আহসান।
তিনি বলেন, ভোলার গ্যাস যেকোন ফরমেটে বরিশাল বা মূল ভূখণ্ডে শিল্প উদ্যাক্তাদের সহজ করে ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০২৩
এমএস/এসএএইচ