ঢাকা: ঢাকা চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, মুদ্রানীতির কঠোর বাস্তবায়নই বেসরকারি ও আর্থিক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ স্থিতিশীল করা।
সোমবার (১৬ জানুয়ারি) গণমাধ্যমে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত ২০২৩ অর্থ বছরের দ্বিতীয় পর্বের (জানুয়ারি-জুন ২০২৩) এর মুদ্রানীতির ওপর প্রতিক্রিয়ায় তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, ২০২৩ অর্থবছরের জানুয়ারি-জুন মেয়াদের জন্য সরকারি ঋণের প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ দশমিক সাত শতাংশ যা গত ২০২২ অর্থবছরের জুন-ডিসেম্বর মেয়াদে ছিল ২৬ দশমকি ছয় শতাংশ। সরকারি খাতের ঋণ প্রবাহের লক্ষ্যমাত্রা বেসরকারি খাতে নতুন ঋণ প্রবাহ ও বিনিয়োগকে সংকুচিত করতে পারে। সরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ কমানোর লক্ষ্যে সরকারকে সুশাসন নিশ্চিত করতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যয় কমাতে হবে। এছাড়াও সরকারকে উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অপরিহার্য প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ব্যারিস্টার সাত্তার মনে করেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় ভোক্তা পর্যায়ে ঋণের সুদের হারের সীমা শিথিলকরণের প্রস্তাব এবং সঞ্চয়ের ওপর সুদ হারের সীমা প্রত্যাহার করার ফলে ব্যাংকিং খাতে সঞ্চয় ও তারল্য বাড়াতে পারে। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা আনয়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ ক্রমান্বয়ে বাজার ভিত্তিক এবং একক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার চালু করার প্রত্যাশাতে তিনি স্বস্তি প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থপাচার রোধে এলসির মাধ্যমে আমদানি ব্যয় মেটানোর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের নজরদারি জোরদার করার সিদ্ধান্তকে তিনি স্বাগত জানান।
এছাড়াও যেসব এলসির মূল্য ৩০ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি সেগুলোকে তদন্তপূর্বক পরিশোধ করা গেলে তা অর্থপাচার রোধে সহায়ক হবে বলে তিনি মনে করেন।
তবে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ডিসিসিআই সভাপতি প্রস্তাব করেন যে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি মার্জিনের শর্তাবলী শিথিল করতে হবে এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিতে এলসি মার্জিনের শর্তাবলী শিথিল করলে তা স্থানীয় ও রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদনকে তরান্বিত করবে।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতিতে অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, কুটির ও মাঝারি (সিএমএসএমই) শিল্প সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছে। কৃষি, সিএমএসএমই এবং আমদানি বিকল্প শিল্পখাত যেন সহজ শর্তে ঋণগ্রহণ পূর্বক বিনিয়োগ করতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ৫০ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করাকে ডিসিসিআই সভাপতি স্বাগত জানিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত সিএমএসএমইর দ্রুত পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে।
তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নন-পারফর্মিং লোন কমানো ও সুশাসন নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। কীভাবে নন-পারফর্মিং লোন কার্যকরভাবে কমানো যায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও সুনিদিষ্ট এবং স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলে তা মুদ্রানীতির জন্য সহায়ক হতো। যেহেতু ক্রমবর্ধমান নন-পারফর্মিং লোন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ এবং প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে সে কারণে তিনি নন-পারফর্মিং লোনের বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংককে বিশেষভাবে বিবেচনা করার ওপর তাগিদ দেন ডিসিসিআই সভাপতি সামীর সাত্তার।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক অভ্যাসগত ঋণ খেলাপি হওয়ার নিদিষ্ট কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারে ও তা পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান মামলাগুলোর ব্যাকলগ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কাজ করতে পারে। এর পাশাপাশি, তিনি কার্যকরভাবে এডিআর পদ্ধতি চালু করতে বিদ্যমান আইনগুলোর দ্রুত সংষ্কারের প্রস্তাব করেন।
বৃহৎ ও খেলাপি ঋণ কমানোর স্বার্থে প্রতিনিয়ত নজরদারির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘স্পেশাল মনিটরিং সেল’ গঠন করার সিদ্ধান্তকে ব্যারিস্টার সাত্তার একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ বলে মনে করেন। প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়াতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার, স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃক ফি গ্রহণ না করা এবং উত্তোলনের আগে অনুমোদন না রাখার ব্যবস্থাকে তিনি স্বাগত জানান।
সর্বোপরি, ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশ কিছু ইতিবাচক দিক-নির্দেশনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর নজরদারির মাধ্যমে একটি সময়োপযোগী বাস্তবায়ন কৌশল মুদ্রাবাজার ও অর্থনীতির মূল লক্ষ্য অর্জন করতে পারে বলে ব্যারিস্টার সাত্তার আশা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০২৩
এসএমএকে/আরআইএস