ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাজুস ফেয়ারে স্বর্ণ-ডায়মন্ডের গহনায় অফারের ছড়াছড়ি

সুব্রত চন্দ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
বাজুস ফেয়ারে স্বর্ণ-ডায়মন্ডের গহনায় অফারের ছড়াছড়ি

ঢাকা: স্বর্ণের গহনা কিনলে মজুরির ওপর দেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৬০ শতাংশ ছাড়। কেউ কেউ আবার কোনো মজুরিই নিচ্ছেন না।

ডায়মন্ডের গহনায়ও ছাড় দেওয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ। এছাড়া গিফট ভাউচার, র‍্যাফেল ড্র ও গেম খেলে পুরস্কার জিতে নেওয়ার সুযোগ থাকছে ক্রেতাদের জন্য।  

স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের গহনা কেনাকাটার ওপর এমনই অফারের ছড়াছড়ি চলছে জুয়েলারি শিল্পের সবচেয়ে বড় আয়োজন বাজুস ফেয়ার-২০২৩ এ।

বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে শুরু হয় তিন দিনব্যাপী এই মেলার আয়োজন।  

এদিন সকালে ফিতা কেটে মেলার উদ্বোধন করেন দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীর।

সরেজমিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের গহনার ওপর ছাড় দিচ্ছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও তাদের পছন্দ অনুযায়ী গহনা দেখছেন এবং কিনছেন।

মেলায় স্বর্ণের গহনা তৈরির মজুরির ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে ভেনাস জুয়েলার্স। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিধান মালাকার বাংলানিউজকে বলেন, মেলায় লাভ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাই আমরা স্বর্ণের গহনার মজুরির ওপর ছাড় দিচ্ছি। যাতে ক্রেতারা আকৃষ্ট হয়ে মেলায় আসে। এছাড়া বাজুস প্রেসিডেন্ট সায়েম সোবহান আনভীরের নেতৃত্বে বিদেশে স্বর্ণ রপ্তানির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। এটিও এই মেলার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য।

স্বর্ণের গহনার মজুরিতে শতভাগ এবং ডায়মন্ডের গহনায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিচ্ছে কুঞ্জ জুয়েলার্স। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার পার্থ সরকার বলেন, আমাদের কাছে সর্বনিম্ন ৩ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ডায়মন্ডের গহনা রয়েছে। ক্রেতারা তাদের চাহিদা মতো হাতের আংটি, গলার হার, কানের দুল কিংবা সেট সবই আমাদের এখানে পাবেন। মূলত ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে এবং মানুষ যাতে কম দামে স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের গহনা কিনতে পারে, তাই এমন বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা।

ডায়মন্ডের গহনার ওপর ২৭ শতাংশ ছাড়ের পাশাপাশি ক্রেতাদের নিশ্চিত গিফট দিচ্ছে রয়েল মালাবার জুয়েলার্স। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার বাকি বিল্লাহ বকুল বলেন, আমাদের শো-রুম থেকে যে কোনো গহনা কিনলেই রয়েছে নিশ্চিত গিফট। আমাদের এখান থেকে তিন লাখ টাকার কেনাকাটা করলে ক্রেতাদের জন্য উপহার হিসেবে থাকছে একটি ডায়মন্ডের রিং। এক লাখ টাকার কেনাকাটা করলে থাকবে নোসপিন। এছাড়া গিফটবক্স তো আছেই। যার মধ্যে থাকবে শাড়ি, থ্রি পিসের মতো উপহার।

ক্রেতা ও দর্শনার্থীদের জন্য গেম খেলে পুরস্কার জেতার সুযোগ রেখেছে রয়েল মালাবার জুয়েলার্স। কাঁচের বক্সের মধ্যে থাকা ১৪ কেজির একটি স্বর্ণের বার ছোট একটি ছিদ্রের ভেতর দিয়ে হাত দিয়ে বের করতে পারলেই আকর্ষণীয় পুরষ্কার পাবেন ক্রেতারা। তবে মাত্র ৪০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজটি শেষ করতে হবে প্রতিযোগীকে।

দেশের অন্যতম জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান আমিন জুয়েলার্স তাদের ডায়মন্ডের গহনার ওপর ৩২ শতাংশ পর্যন্ত ছাড়া দিচ্ছে। পাশাপাশি স্বর্ণের গহনার মজুরির ওপর ছাড় দিচ্ছে ৫০-৬০ শতাংশ।  

প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং ম্যানেজার শামসুজ্জামান বলেন, আমাদের স্বর্ণ ও ডায়মন্ডের অনেক ধরনের গহনা রয়েছে। তবে মেলায় আমরা শুধু আমাদের এক্সক্লুসিভ গহনাগুলোই এনেছি। এছাড়া, এখন বিয়ের মৌসুম চলায় বিয়েতে যেই ধরনের গহনা ব্যবহার করা হয়, সেগুলোই মেলায় আনা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে অর্থনৈতিক কারণে লজ্জায় সাধারণ জুয়েলারির দোকানে যেতে পারেন না। কিন্তু এই মেলায় সবাই আসতে পারেন। এছাড়া এখানে এক ছাদের নিচে অনেকগুলো ব্র্যান্ডের জুয়েলারি এক সঙ্গে দেখতে পারবেন ক্রেতারা। গত বছর করোনার কারণে ক্রেতার সংখ্যা কিছু কম থাকলেও এবার সেই খরা কেটে গেছে। মেলার প্রথম দিনেই ক্রেতাদের ব্যাপক সাড়া দেখা যাচ্ছে।

দেশের ডায়মন্ড শিল্পে অন্যতম জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডও তাদের ডায়মন্ডের গহনার ওপর ছাড় দিচ্ছে ২৫ শতাংশ। এছাড়া স্বর্ণের গহনার মজুরির ওপরেও দেওয়া হচ্ছে ছাড়। সেই সঙ্গে প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে থাকছে গিফট ভাউচার। যা ক্রেতা পরবর্তী কেনাকাটায় সমন্বয় করতে পারবেন।  

এছাড়াও আছে র‍্যাফেল ড্র। যা মেলার শেষদিন ঘোষণা করা হবে। র‍্যাফেল ড্রতে ১০ জনকে বিজয়ী ঘোষণা করে পুরষ্কৃত করা হবে বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির সিনিয়র সেলস এক্সিকিউটিভ রানা বণিক।

এদিকে, উদ্বোধনের পর পরই ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায় বাজুস ফেয়ারে। ধানমন্ডি থেকে মেয়ে মৌনিতা সরকারকে নিয়ে মেলায় এসেছেন নীলা সরকার। মূলত ছেলে সৌরভ সরকারের বিয়ের জন্য গহনা কিনতেই আসা তাদের।  

নীলা সরকার বাংলানিউজকে বলেন, এক ছাদের নিচে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিভিন্ন ধরনের সবচেয়ে ভালো ডিজাইনের গহনা পাওয়া যায় এই মেলায়। তাই ছেলের বিয়ের গহনা দেখতে এসেছি। এছাড়া এখান থেকে গহনা কিনলে একদিকে যেমন বিভিন্ন রকম ছাড় পাওয়া যায়, তেমনি স্বর্ণের গহনার মজুরিও দিতে হয় না।

রাজধানীর ভাটারা থেকে ছেলে মাহতির হাসান ও স্ত্রী মাহমুদা হাসানকে নিয়ে বাজুস মেলায় এসেছেন দন্ত চিকিৎসক জাহিদ হাসান। তিনি বলেন, মেলায় বিভিন্ন ব্যতিক্রমী গহনা পাওয়া যায়। সাধারণ দোকান থেকে কিনতে গেলে অনেক ঘুরতে হয়। এখনে এক সঙ্গেই সবগুলো দোকান দেখতে পারছি। তবে আজ শুধু দেখতে এসেছি। পছন্দ হলে আগামীকাল কিনব।

শুধু গহনাই না। বাজুস মেলায় পাওয়া যাচ্ছে স্বর্ণ পরীক্ষা, ওজন মাপা ও হলমার্ক করার মেশিনও। ফিশার গোল্ড টেস্টিং মেশিনের স্বত্বাধিকারী শিমু দেব বলেন, এসব স্বর্ণ পরীক্ষার যন্ত্র দিয়ে স্বর্ণে কোনো খাদ আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। এক একটা মেশিনের দাম ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা।

১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এই মেলার আয়োজন করেছে সারা দেশের প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বাজুস। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে এই জুয়েলারি মেলা। মেলার প্রবেশমূল্য রাখা হয়েছে জনপ্রতি ১০০ টাকা। তবে ৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য লাগবে না কোনো প্রবেশমূল্য।

দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করা এই মেলায় রয়েছে ৮টি প্যাভিলিয়ন, ১২টি মিনি প্যাভিলিয়ন ও ৩০টি স্টল। যেখানে দেশের ঐতিহ্যবাহী ৫০টি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৩
এসসি/এনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।