সাতক্ষীরা: গড়ে ৫০ টাকা করে কেজি ধরলেও এ জেলা থেকে চলতি মৌসুমে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে বলে আশা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
যদিও প্রথমে আমের বাম্পার ফলন হলেও ক্রেতা সংকটে চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে আম রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল।
রপ্তানির লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (৪ মে) জেলার কলারোয়া, সাতক্ষীরা সদর ও দেবহাটা উপজেলার বিভিন্ন আমবাগান পরিদর্শন করেছেন বাংলাদেশ ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির প্রতিনিধিরা। এর মধ্য দিয়ে আম রপ্তানিতে আশার আলো দেখছেন চাষিরা।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন ১৩ হাজার ১০০ জন চাষি। এর মধ্যে সদর উপজেলায় এক হাজার ২৩৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ৬৫৫ হেক্টর, তালায় ৭১৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৭০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ৮৩৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৪৫ হেক্টর ও শ্যামনগরের ১৬০ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন আম।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর সাতক্ষীরায় আমের বাম্পার ফলন হয়েছে এবং এ মৌসুমে সাতক্ষীরা থেকে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রির প্রত্যাশা করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।
সাতক্ষীরা শহরের রাজারবাগান এলাকার আম ব্যবসায়ী ব্লিপব ভট্টাচার্য সোনা বলেন, গত বছর উৎপাদন কম হওয়ায় লোকসান হয়েছিল। এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাগান লিজ নিলে অনেক টাকা খরচ হয়। বাগান পরিচর্যা, পোকামাকড় মুক্ত করতে ওষুধ প্রয়োগ, ফলনের পর বাজারজাত ও শ্রমিকের পেছনে অনেক টাকা ব্যয় হয়। তারপরও এবার আশা করছি, লাভের মুখ দেখব।
রপ্তানিযোগ্য আমের চাষি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁকাল এলাকার রফিকুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১০ বিঘা জমিতে হিমসাগর, গোবিন্দভোগ ও ল্যাংড়া আম চাষ করেছেন। অন্য বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে প্রতিটি গাছে প্রচুর আম ধরেছে। তবে এখনো আম রপ্তানির বিষয়ে তাদের সঙ্গে কোনো কোম্পানি যোগাযোগ করেনি। রপ্তানি করতে না পারলে তাদের বাধ্য হয়ে স্থানীয় বাজারেই আম বিক্রি করতে হবে। এতে ন্যায্যমূল্য পাওয়া যাবে না।
কলারোয়া উপজেলা সদরের আমচাষি কবিরুল ইসলাম বলেন, আমার ১৫ বিঘা জমিতে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ ও আম্রপালি গাছ রয়েছে। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সম্পূর্ণ বিষমুক্ত উপায়ে আম উৎপাদন করা হচ্ছে। এখন ভালোভাবে রপ্তানি করতে পারলে অনেক লাভ হবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কুখরালী গ্রামের আমচাষি খোকা বলেন, আমি বাগান কিনে ব্যবসা করি। চলতি মৌসুমে ১৫টি বাগান কিনেছি। ফলনও ভালো। কিন্তু প্রতিদিন যেভাবে শিলাবৃষ্টি হচ্ছে, সামনে ঘূর্ণিঝড়ের সিগন্যালও আছে, কি হবে, বলা যাচ্ছে না। আল্লাহ যদি রহম করেন, তাহলেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে পুঁজি বাঁচানো সম্ভব।
এদিকে স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সাতক্ষীরার আম পঞ্জিকায় কিছুটা পরিবর্তন এনেছে জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী ৫ মে গোবিন্দভোগ, ২৫ মে হিমসাগর, ১ জুন ল্যাংড়া ও ১৫ জুন আম্রপালি আম বাজারজাত শুরু হবে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরায় আমের খুবই ভালো ফলন হয়েছে। উৎপাদনে রেকর্ডের আশা করছি। গড়ে ৫০ টাকা কেজি করে ধরলেও এ জেলা থেকে চলতি মৌসুমে ২২৫ কোটি টাকার আম বিক্রি হবে।
আম রপ্তানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও দেবহাটা উপজেলায় ৮১টি আমবাগান রপ্তানিযোগ্য করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এসব বাগানের ৮১ জন আমচাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে বিষমুক্ত আম উৎপাদন করেছেন। তবে এখনো কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বাগান মালিকদের সঙ্গে চুক্তি করেনি। যদিও সংশ্লিষ্টরা বাগান পরিদর্শন করেছেন। আমরা আশা করছি, দ্রুতই রপ্তানির বিষয়ে ভালো খবর দিতে পারব।
এদিকে বৃহস্পতিবার আমবাগান পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ ফল, সবজি ও সহযোগী পণ্য রপ্তানিকারক সমিতির সদস্য আবুল হোসেন বলেন, সাতক্ষীরার আমের গুণগত মান অনেক ভালো। এ কারণে এ জেলার আমের চাহিদা দেশের বাইরেও রয়েছে। আশা করছি, এ মৌসুমে অন্তত ২০ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করতে পারব।
আবহাওয়া জলবায়ু ও ভৌগোলিক কারণে দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় সাতক্ষীরার আম আগে পাকে। এছাড়া সাতক্ষীরার হিমসাগর, গোবিন্দভোগ, ল্যাংড়া ও আম্রপালি আম স্বাদে গুণে অনন্য। এজন্য ইউরোপের বাজারে এ জেলার আমের বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৯ ঘণ্টা, মে ৫, ২০২৩
এসআই