মূল্যস্ফীতির থাবা শিশু আমানতকারীদের পকেটেও পড়েছে। অভিভাবক, আত্মীয়-স্বজনদের খরচ কমে যাওয়ার কারণে কমে গেছে শিশুদের আয়ের উৎসও, যার প্রভাব পড়েছে ব্যাংকে শিশুদের আমানতে।
স্কুল ব্যাংকিং সম্পর্কিত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এমন চিত্র মিলছে।
তথ্য বলছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্কুল শিক্ষার্থীদের আমানতের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ২২২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। মার্চ মাসে এসে সেই আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২২০ কোটি ২৭ লাখ ৬০ হাজার টাকায়।
এক মাসের ব্যবধানে শিশুদের সঞ্চয় কমেছে ২ কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার টাকা বা দশমিক ১২ শতাংশ। শিশুদের অ্যাকাউন্ট বাড়লেও অ্যাকাউন্টের বিপরীতেও আমানত কমে গেছে।
১৮ বছরের নীচের বয়সের শিশুরা অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলে সেখানে সঞ্চয় করে থাকে। স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে, বৃত্তি বা আত্মীয় স্বজনের দেওয়া উপহারের টাকা ব্যাংকে জমানোর মধ্য দিয় সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে স্কুল ব্যাংকিং চালু হয়েছে।
কখনো কখনো পরিবার থেকে ইচ্ছা করেও শিশুদের শিক্ষা ও অন্যান্য ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে এ সব অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করেন অভিভাবকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূল্যস্ফীতিতে যখন জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ে, তখন শিশুদের টিভিন ও উপহারে টান পড়ে। টান পড়ে শিশুদের ভবিষ্যৎ সঞ্চয়ের ইচ্ছেতেও। মার্চ মাসে এমনই টান পড়েছে শিশুদের অ্যাকাউন্টে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ মূল্যস্ফীতি ছিল মার্চ মাসে। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ। জীবনযাত্রার প্রকৃত খরচ আরও বেশি।
ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চ মাসে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার এই ঘা শিশু সঞ্চয়কারীদেরও পকেটে লেগেছে। কমে গেছে শিশুদের আমানত। ক্ষেত্রবিশেষে আগের আমানত তুলেও নিয়েছে।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, বাবা-মায়ের খরচ বেড়ে গেলে শিশুদের সঞ্চয়ে প্রভাব পড়বে এটা স্বাভাবিক। শিশুদের সঞ্চয় কমার আরও নানা প্রভাবক থাকে। যেমন- স্কুল বন্ধ, পরীক্ষা নানা কারণে সঞ্চয় কমতে পারে। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি বেড়েছিল, এতে অভিভাবকদের খরচ বেড়েছিল। শিশুদের সঞ্চয়ের সঞ্চয় কমে যাওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে।
তিনি বলেন, স্কুল ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য হলো শিশুদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং তারা যেন সঞ্চয় বা লেনদেন করতে ব্যাংকমুখী হয় সেই অভ্যাস গড়ে তোলা। তাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আমানত আর্থিক খাতে তারল্য বাড়াতে সহায়ক হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, গত কয়েক মাস ধরেই ধারাবাহিকভাবে ব্যাংকে শিশুদের সঞ্চয় কমেছে। গেল ডিসেম্বর মাসে শিশুদের আমানত ছিল ২ হাজার ২৫৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা। জানুয়ারিতে তা কমে দাঁড়ায় ২ হাজার ২২৬ কোটি ২০ লাখ টাকায়। মার্চে এসে এ কমে যাওয়ার হার অব্যাহত থাকে।
কোভিড-১৯ এর ধকল সামাল দিয়ে উঠতেই নতুন করে আরেক দুর্যোগ শুরু হয়, রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধ। বেড়ে যায় বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি। পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়া ও পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়। বেড়ে যায় আমদানি ব্যয়। বাংলাদেশে এর প্রভাব প্রবলভাবে পড়ে। বেড়ে যায় জীবনযাত্রার ব্যয়।
মূল্যস্ফীতি নিয়ে সরকারি সংস্থা বিবিএসের হিসাব নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রশ্ন থাকলেও তাতে কিছুটা হলেও আভাস মেলে। চলতি অর্থবছরের আগস্টে সর্বোচ্চে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৮ শতাংশ। এরপর কিছুটা কমে। মার্চে এসে আবারো বাড়ে।
বেড়েছে শিশু আমানতকারীদের ব্যাংক হিসাব (অ্যাকাউন্ট) খোলার সংখ্যা। তথ্য বলছে, ফেব্রুয়ারির মাসের তুলনায় মার্চ মাসে ৫ শতাংশ অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যেখানে শিশুদের হিসাবের সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ ৩৩ হাজার। মার্চে এসে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ। বেড়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ২৬ মে, ২০২৩
জেডএ/আরএইচ