ঢাকা: পবিত্র ঈদুল ফিতরের বাকি আর মাত্র দুই দিন। ধর্মীয় এ উৎসবের আনন্দ পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন নগরের অধিকাংশ মানুষ।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত ১৫ দিনের মধ্যে চাল, মাংস, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, আলু, মসলাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। তবে এ সময়ের মধ্যে কিছুটা কমেছে সবজির দাম।
ঈদের ঠিক আগে হঠাৎ বেড়েছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংসের দাম। কারওয়ান বাজারে বর্তমানে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৮০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ১৫০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুই দিন আগেও একই বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস ৭৫০ টাকা, খাসির মাংস এক হাজার ১০০ টাকা ও ছাগলের মাংস এক হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এছাড়া গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে প্রায় ৪০-৫০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি ২৫০-২৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০-৩৮০ টাকা দরে৷ লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা দরে৷ যা মাত্র এক সপ্তাহ আগেও ২৮০-৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে মুরগি ও মাংস বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের কারণে খুবই সীমিত আকারে গরু, খাসি ও মুরগি আসছে। ফলে বাজারে কিছুটা সংকট রয়েছে। এছাড়া ঈদে মাংসের চাহিদা বাড়ে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে৷ এটা ঈদের পর কমে যাবে।
মোতালেব নামে কারওয়ান বাজারের এক মাংস বিক্রেতা বলেন, চাঁদ রাতের আগে সব কিছুর দাম একটু বাড়ে। কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, সালামি দিতে হয়। আর ট্রাক কম আসায় বাজারে গরু ছাগলও কিছুটা কম। তাই গরু-খাসির দাম সামান্য বেড়েছে।
এদিকে একই কারণ দেখিয়ে আলু, পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম বাড়িয়েছেন বিক্রেতারা। বর্তমানে প্রতি পাল্লা (পাঁচ কেজি) আলু ২৩০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। যা কয়েকদিন আগেও ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছিল। কেজিতে প্রায় ৫ টাকা বেড়ে পাবনার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকায়, ফরিদপুরের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়।
পেঁয়াজের দাম ঈদের পর আরো বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
এছাড়া রসুনের দামও কিছুটা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা, ভারতীয় রসুন ২০০ টাকা, চায়না আদা ২০০ টাকা ও ইন্দোনেশিয়ার আদা ২২০ টাকা।
মাংসের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মাংস রান্নার অন্যতম উপকরণ মসলা। গত ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৪০০ টাকা বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৮০০ টাকা। একই সময়ে কেজিতে ১০০ টাকা বেড়ে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা, কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা।
তবে মসলার দাম বাড়ার জন্য আমদানি খরচ ও ভ্যাট-ট্যাক্সকেই দুষছেন বিক্রেতারা।
হাসান নামের এক মসলা বিক্রেতা বলেন, আমরা পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার থেকে মসলা কিনে আনি। যেই দামে আনি, সে দামেই বিক্রি করি। তবে শুনেছি আমদানি খরচ বাড়ায় মসলার দাম বাড়ছে।
স্বস্তি নেই চালের বাজারেও। বর্তমানে পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি চিকন মিনিকেট ৭২ টাকা, নাজিরশাইল ৭০-৮০ টাকা ও মোটা আটাশ চাল ৫৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ আগেও একই বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট ৬৬-৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৬৬ থেকে ৭৬ টাকা ও আটাশ ৫২ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
তবে সে তুলনায় কিছুটা স্বস্তি আছে সবজির বাজারে। বর্তমানে কারওয়ান বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৫০ টাকা, চিচিঙ্গা ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, ঝিঙ্গে ৪০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লম্বা বেগুন ৪০ থেকে ৫০ টাকা, টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা, উস্তে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, পটল ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, গোল বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, শিমের বিচি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, সজনে ডাটা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কাকরোল ১১০ থেকে ১৩০ টাকা, ধুন্দল ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি পিস লাউ ৪০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, বাঁধাকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজি দাম তুলনামূলক কম হওয়ার কারণ হিসেবে সবজি বিক্রেতা মো. জাকির হোসেন বলেন, রমজানের মাঝামাঝি থেকে সরজির দাম কমতে শুরু করে। কারণ তখন মানুষ মাছ-মাংস একটু বেশি খায়। ঈদেও মানুষ তেমন সবজি খায় না। আর ঢাকা থেকে অনেক মানুষ চলে যাওয়ায় বাজারে সবজির দাম কিছুটা কম।
বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৪
এসসি/জেএইচ