ঢাকা: আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রেখে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) রাজধানীর একটি হোটেলে ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএবি) আয়োজিত ‘জাতীয় বাজেট ২০২৪-২০২৫’ আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা জানান।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, আগামী বাজেটে প্রবৃদ্ধি অর্জন অব্যাহত রাখা, ফার্স্ট-ট্র্যাক অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন, ব্যক্তিখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে অগ্রাধিকার প্রদান করা হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ করা হবে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং পরবর্তীতে স্মার্ট বাংলাদেশ সফল বাস্তবায়নে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যে অগ্রগতি সেটি চলমান আছে। এই অগ্রগতির সঙ্গে আমি, আপনি সবাই সম্পৃক্ত। কেউই এই কার্যক্রমের বাইরে নয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপান্তরকারী নেতৃত্বে কোভিড পরবর্তী বিরূপ প্রভাব, মধ্যপ্রাচ্য সংকট ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোবাবিলা করে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯-১০ সালে আমাদের বাজেটের সাইজ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৮১৫ কোটি টাকার মতো, যা গত ১৫ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। আমরা দেখেছি জননেত্রী শেখ হাসিনার যুগান্তকারী নেতৃত্বে পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, শতভাগ বিদ্যুতায়ন, ইন্টারনেট সুবিধা গ্রাম পর্যন্ত প্রসার হয়েছে। আমরা উন্নয়নের রাজনীতি দেখেছি। সেটার জন্য অবশ্যই সম্পদ প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান আরও বলেন, যখন সুদের হার নয় শতাংশ ও ছয় শতাংশ ছিল, তখনো নন-পারফর্মিং লোন আমরা বাড়তে দেখেছি। সুদের হার বাড়লে খেলাপি ঋণ বাড়বে, এমন বিষয় না। আর্থিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যেম এটা দূর করতে হবে। যদি মুনাফা করার সুযোগ থাকে তবে ব্যবসায়ীরা উচ্চ সুদেও ঋণ নেবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা রপ্তানি বৃদ্ধি করতে চাই। রপ্তানি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও এফডিআই বাড়বে। রপ্তানি বৃদ্ধির বিষয়ে বিষয়ে সরকার মনোযোগী। রাজস্ব খাতে পরিকল্পিত সংস্কার কার্যক্রমসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এবং কর আহরণের সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কৌশল প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই যে আমাদের বাজেটের পরিধি বেড়েছে, এর সঙ্গে মিল রেখে বিভিন্ন পরিকল্পনাও করা হয়েছে। বাজেটে দারিদ্র নিরসন, নারীদের উন্নয়ন, জলবায়ু মোকাবিলা, জিডিপি বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হয়েছে। পাশাপাশি সব বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা অনেক চ্যালেঞ্জিং। শুধু বরাদ্দ বৃদ্ধি করলেই হবে না। বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি আসে, কিন্তু বরাদ্দের সর্বোত্তম ব্যবহারের কথা কেউ তোলে না। এটা আলোচনা করা বেশি দরকার।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রাক-বাজেট আলোচনায় ক্যাপিটাল মার্কেটের কথা কেউ বলেনি। প্রাইভেট সেক্টর ক্যাপিটাল মার্কেট থেকে টাকা নেয় না কেন? আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ে আরো আলাপ করতে হবে। সবকিছুর দায়ভার ব্যাংকিং সেক্টরের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা জনগণের ব্যয় কমিয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল আর্থিক ব্যবস্থা জনগণের বেশ কিছু ব্যয় কমানোর পাশাপাশি গতি বৃদ্ধি করেছে এবং সরকারের সেবা প্রদানের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করেছে।
আইসিএমএবির প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও কাউন্সিল সদস্য আরিফ খান এফসিএমএর সঞ্চালণায় প্রাক বাজেট আলোচনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ইস্ট ওয়েট ইউনিভার্সিটির চিফ অ্যাডভাইজার ড. মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ও এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম। এছাড়া আলোচক হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আমিন হেলালী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সাহাদাত হোসাইন সিদ্দিক, মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহিউদ্দিন, এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মুনির হোসাইন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মো. মাসরুর রিয়াজ প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এসসি/নিউজ ডেস্ক