ঢাকা: কর আহরণের পাশাপাশি খরচ করার স্বচ্ছতার ও বিশ্বাসযোগ্যতা সৃষ্টির তাগিদ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
তিনি বলেন, রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়ায় যে ডিজিটাইজেশনের কথা বলছি এটা যদি শুধু কর আদায়ের ক্ষেত্রে রাখি, ব্যয়ের ক্ষেত্রে না নিতে পারি তাহলে এটা পুরো ফলাফল দেবে না।
রোববার (১৯ মে) রাজধানীর হোটেল লেকশোরে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আয়োজিত 'ডিজিটালাইজেশন অব দ্য ট্যাক্সেশন সিস্টেম ইন বাংলাদেশ: দ্য নেক্সট ফ্রন্টিয়ার ফর হায়ার রিসোর্স মবিলাইজেশন' ডায়লগে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, রাজস্ব আহরণের জন্য করদাতাকে সেবার মাধ্যমে পুরস্কৃত করতে হবে। রাজস্ব বৃদ্ধি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ডিজিটালাইজেশনে সরকারের সদিচ্ছা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের পরিকল্পনা স্মার্ট হতে হবে, তাহলেই সেটি অর্জন সম্ভব হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ২০২৪ এর অগ্রাধিকারসমূহ বাস্তবায়নের প্রথম বাজেট এটা। এ বাজেটে রাজস্ব আদায়ে নতুন পদক্ষেপ নিতে হবে।
তিনি বলেন, আজকের আলোচনায় ক্যাশলেস সোসাইটি গড়ার কথা উঠে এসেছে। যদি বড় ব্যবসায়ীরা ক্যাশে ট্রানজেকশন করতে চান, তবে আমরা কীভাবে ক্যাশলেস ইকোনোমিতে পরিণত হব?
অর্থ প্রতিমন্ত্রী বলেন, রাজস্ব আহরণে সরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে আধুনিকায়ন করছে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, যারা কর দেন না, যারা দেশে থেকে টাকা পাচার করেন, তারা অনেক শক্তিশালী। রাজনৈতিকভাবে ব্যবসাগতভাবে এবং আর্থিকভাবে শক্তিশালী ব্যক্তি। যে বিষয়টি বার বার আলোচনায় এসেছে ন্যায্যতার প্রতি একটি রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি থাকে সেটাকে সামনে চলে আসে। শেষ বিচারে এটা একটি আর্থিক রাজনৈতিক বিষয় সেই রাজনৈতিক বিষয় যদি প্রতিশ্রুতিগুলো দৃশ্যমান না হয়, তাহলে অসহায় এনবিআর। ট্যাক্স আহরণ করতে গিয়ে বিরাট ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে। কাজেই রাজনৈতিক সুরক্ষা দিতে হবে। এর মাধ্যমে তাদের প্রতি দৃশ্যমান সমর্থন দিতে হবে।
এনবিআর সাবেক সদস্য আলমগীর হোসেন (ট্যাক্স পলিসি) বলেন, সরকারের ব্যয়ের ২০ শতাংশ যাচ্ছে বৈদেশিক ঋণের সুদ দিতে। এটা একটি ভয়াবহ চিত্র। যদি অভ্যন্তরীণ সম্পদ না বাড়াতে পারি এর মাত্রাটা আরও বেড়ে যাবে। বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আছে সেখান থেকে পিছিয়ে যাবো।
তিনি বলেন, গত ১৫ বছর আগে বলেছি ট্যাক্স জিডিপি বাড়াতে হবে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে কমছে। রাজস্ব বাড়ছে কিন্তু জিডিপির অনুপাতে রাজস্ব কমছে। তখনও বলেছি অটোমেশন দরকার এবং বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আজকেও একই কথা বলছি। এতগুলো বছরে আমরা পারলাম না কেনো? এটা একটি বড় প্রশ্ন। এখন এটা আমাদের আত্ম জিজ্ঞাসা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ বলেন, রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে একটি প্রশাসনির সংস্কার প্রয়োজন। ১৯৯০ সাল থেকে ডিজিটাইজেশন কার্যক্রম শুরু হয়ে এ পর্যন্ত ২৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এর অধিকাংশের টাইটেল ছিল ডিজিটাইজেশন কম্পিউটারাইজেশন ইত্যাদি। কিন্তু কোনোটারই ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি, পরে আবার নতুন প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। একটি প্রকল্প নিলে ওটা ওখানেই শেষ। পরে আবার নতুন করে আরেকটা প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ জন্য টাইম ফ্রেম করে একটা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে। আজকে যিনি আছেন ভালো চেষ্টা করবেন, কাল নতুন যিনি আসবেন কাল যিনি আসবেন আবার নতুন করে যেন শুরু না করেন।
বিএনপিনেতা ও ব্যবসায়ী তাবিথ আউয়াল বলেন, বাংলাদেশ এখনো পরোক্ষ কর বেশি। আমরা চাই প্রোগ্রেমিভ ট্যাক্স। যে যত বেশি আয় করবে সে তত বেশি কর দেবে। প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্স না বাড়াতে পারলে রাজস্ব বাড়বে না।
তিনি বলেন, এনবিআর একটি অটোনোমাস বডি। এনবিআরকে কিছু ভূমিকা নিতে হবে। সরকার যেই আসুক ডাটা পলিসি এবং ডাটা প্রটেকশন এনবিআরকে নিশ্চিত করতে হবে। যত বেশি ডাটা প্রটেটেড থাকবে, আমরা তত বেশি রাজস্ব দিতে উৎসাহ বোধ করবো।
এনবিআর যতই চেষ্টা করুক নিজস্ব উদ্যোগে অটোমেশন করতে পারবে না। এজন্য বাইরের বা থার্ড পার্টির থেকে যেন এনবিআর মুখ ফিরিয়ে না নেয়। তাহলে খামাখা এক প্রজেক্ট থেকে আরেক প্রজেক্ট তৈরি করবে; তিনি উল্লেখ করেন।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, এনবিআর সাবেক চেয়ারম্যান ড, নাসির উদ্দিন প্রমুখ গবেষক ও ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য রাখেন।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, মে ২০, ২০২৪
জেডএ/এএটি