ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী আমাদের সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জুলাই ৫, ২০২৪
‘জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী আমাদের সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে’

ঢাকা: অনেক সময় ক্রেতা তার পছন্দের অলঙ্কারের নকশা বলে দিলেও উন্নত মেশিন না থাকার কারণে সেভাবে তৈরি বা সরবরাহ করতে পারতেন না স্বর্ণ ব্যবসায়ী বা কারিগররা। আবার তারা নতুন কিছু করার কথা ভাবলেও একই কারণে এগোতে পারতেন না।

তাদের সেই ‘না পারার দিন’ শেষ হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনীতে আসা বিভিন্ন রকমের অত্যাধুনিক মেশিন স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কারিগরদের নিত্যনতুন স্বর্ণালঙ্কার এবং ক্রেতার চাহিদার অলঙ্কার তৈরির সাহস যোগাচ্ছে।

রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) পুষ্পগুচ্ছ হলে চলমান প্রথম আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী বাংলাদেশে (আইজেএমইবি-২০২৪) আসা ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মুখে এ আশার কথা উঠে আসে। শুক্রবার (৫ জুলাই) প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন চলছে।

পুরান ঢাকা থেকে প্রদর্শনীতে এসেছেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মুক্তা জুয়েলারি পুরান ঢাকার তাঁতীবাজারে। তিনি ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টলে প্রদর্শিত জুয়েলারি মেশিনারিজ দেখছিলেন।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বাংলানিউজকে বলছিলেন, আধুনিক মানের গহনার তৈরির জন্য দরকার আধুনিক মেশিন। কিন্তু দেশে সেভাবে মেলে না। বিদেশে থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বিদেশে যেতে দ্রুত ভিসা না পাওয়া, সময় বের করা, ডলার পাওয়াও কঠিন। আবার বিদেশ থেকে মেশিন আনলেও সার্ভিস ও মেশিন ইনস্টলেশনের জন্য বিদেশিদের অপেক্ষায় থাকতে হয়। এমন অবস্থায় এই প্রদর্শনী এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।

স্বর্ণশিল্পের এই উদ্যোক্তা বলেন, দেশে প্রথমবারের মত এ ধরনের মেলা হচ্ছে। এর আগে ভারতে গেছি, চীনে গেছি। এখন দেশেই মেলায় সব কিছু পাচ্ছি। আমার মতো অনেকে মেলায় এসেছেন, তাদের আর বিদেশে যাওয়া লাগবে না। আশা করি, আগামীতে আরও বেশি দেশ থেকে বেশি বেশি প্রতিষ্ঠান আসবে। আরও সুবিধা হবে।

স্বর্ণালঙ্কারের ব্যবসা আছে আশিস সাহার। তিনি এসেছেন নরসিংদী থেকে। আশিস বলেন, মেলায় আসায় অলঙ্কার তৈরির ক্ষেত্রে নতুন নতুন ভাবনা মাথায় আসছে। অনেক সময় চাহিদা থাকার পরও আমরা উন্নত মেশিন না থাকার কারণে সেদিকে এগোনোর সাহস পেতাম না। এই মেলা আমাদের সাহস তৈরি করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, বাজুসের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি মেলা হচ্ছে। মেলায় কোন দেশের কোন প্রতিষ্ঠান কী মেশিন ও সেবা নিয়ে এলো সেটাও জানতে পেরেছি।

গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) ফিতা কেটে আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিন হেলালী, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও নিটল নিলয় গ্রুপের চেয়ারম্যান আবদুল মাতলুব আহমাদ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের পরিচালক আহমেদ ইব্রাহিম সোবহান, ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ও কালের কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব এবং বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন-বাজুসের নেতারা।

‘গহনায় হোক প্রযুক্তির ছোঁয়া’ প্রতিপাদ্য নিয়ে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনীর আয়োজন করে দেশের ঐতিহ্যবাহী ও পণ্যভিত্তিক সর্ববৃহৎ বাণিজ্য সংগঠন বাজুস ও ভারতীয় প্রতিষ্ঠান কেএনসি সার্ভিসেস।

প্রদর্শনীতে ভারত, ইতালি, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জার্মানি, চীন ও থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের ১০টি দেশের প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান সব ধরনের স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিন নিয়ে এসেছে। মেলাতে বড় জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের জন্য ল্যাব, মান পরীক্ষা, হলমার্ক বসানোর উন্নত মানের মেশিন; ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের অলঙ্কার তৈরির সরঞ্জাম এবং ডায়মন্ড কাটিংয়ের মতো সুক্ষ্ম মেশিন এনেছে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

আগতরা জানান, স্বর্ণালঙ্কার তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যারা মেশিন কিনতে আগ্রহী, তাদের মালিক বা স্বত্বাধিকারীরা এ মেলায় ঘুরে ঘুরে স্টলগুলো দেখছেন। মেলায় অংশগ্রহণকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও এ দেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে পরিচিত হতে পারছে। উভয়পক্ষই বলছে, এ প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্বর্ণশিল্পের আধুনিকতার যাত্রা আরও উচ্চমাত্রায় যাবে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে তৈরি হবে সেতুবন্ধন।

মেলায় অংশ নেওয়া ড্রিম ইনস্ট্রুমেন্ট টেকনোলজির সিনিয়র সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার শ্রীকান্ত চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের প্রতিনিধিরা সাধারণত মেশিনের লোগো নিয়ে বিভিন্ন স্বর্ণালঙ্কার প্রতিষ্ঠানে যান। মেলার সুবাদে আমরা এক ছাদের নিচে মিলিত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছি। অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মিশতে পারছি। অনেকে অর্ডার দিচ্ছেন।

মেলায় মেশিন কেনার জন্য উদ্যোক্তাদের উপস্থিতি ইতিবাচক বলে জানান মুম্বাইভিত্তিক ডয়ট ইন্ডাস্ট্রিজ ইন্টারন্যাশনাল বিপণন প্রধান ইয়াশা বর্ধন। তিনি বলেন, এখানকার মেলা এজন্য ভালো লাগছে যে, উদ্যোক্তা ও কারিগর উভয়ে মেলায় আসছেন-দেখছেন, খোঁজখবর নিচ্ছেন। মেশিন কেনার জন্য অর্ডারও দিচ্ছেন। বাংলাদেশের স্বর্ণালঙ্কার প্রস্ততকারীদের সঙ্গে এই মেলার মাধ্যমে যোগাযোগ হচ্ছে।   

কেএনসি সার্ভিসেসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রান্তি নাগভেকার বলেন, প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক জুয়েলারি মেশিনারিজ প্রদর্শনী আয়োজন করেছি। বাংলাদেশের কারিগদের হাতের কাজের সুনাম আছে। এই কারিগরদের হাতে যদি মেশিন যুক্ত হয়, তাহলে বিশ্বজয় করবে বাংলাদেশের জুয়েলারি শিল্প।

তিনি বলেন, মেলার দুই দিনে আমরা এখানে উদ্যোক্তা ও কারিগরদের উৎসাহ দেখে খুবই খুশি। আগামী বছরে আমাদের যে মেলা অনুষ্ঠিত হবে সে সময় আরও বৈচিত্র্যপূর্ণ মেশিন আসবে। স্বর্ণশিল্পে বাংলাদেশ খুবই সম্ভাবনাময়। আগামীতে স্বর্ণাল্ঙ্কার রপ্তানির মধ্য দিয়ে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখবে জুয়েলারি শিল্প।

আগামী শনিবার (৬ জুলাই) পর্যন্ত চলবে এই প্রদর্শনী। বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি ব্যবসায়ী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ০৫, ২০২৪
জেডএ/এইচএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।