ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

লুণ্ঠনের সম্পদ অধিগ্রহণ করা গেলে মানুষের কর দেওয়ায় আগ্রহ বাড়ত: দেবপ্রিয় 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
লুণ্ঠনের সম্পদ অধিগ্রহণ করা গেলে মানুষের কর দেওয়ায় আগ্রহ বাড়ত: দেবপ্রিয় 

ঢাকা: দুর্নীতি ও লুণ্ঠনের মাধ্যমে সম্পদ গড়ে তোলা হয়েছে। এগুলো কেন বাজেয়াপ্ত হলো না, এ সম্পদ কোথায় গেল, এই সম্পদ কেন আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার অধিগ্রহণ করল না—এসব প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেলে মানুষের কর দেওয়ার আগ্রহ বাড়ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় বলেন, আর্থিক খাতসহ নানা বিষয়ে সরকারের উদ্যোগ আছে, তবে কেন যেন উদ্বেগটা কাটছে না।

এর কারণ ব্যাখ্যা করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, সরকার যেসব উদ্যোগ নিচ্ছে তার ফল আসছে না। মানুষ অত ধৈর্য রাখতে পারছে না। কিংবা আস্থার সংকট হচ্ছে।

এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারে থাকাকালীন ইআরএফের এক অনুষ্ঠানে এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেছিলেন ‘ডাল মে কুচ কালা হ্যায়’। এই উদ্বৃতি আবারও উল্লেখ করে তিনি বলেন, আগামী রোববার বলতে পারব কোন কোন ডাল পচা, আর কোন কোন ডাল ভালো ছিল। রোববার প্রধান উপদেষ্টার কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করা হবে। পরদিন সংবাদ সম্মেলনে জনগণের জন্য গত সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার চিত্র তুলে ধরা হবে।

দেশের দুটি ফুসফুস ব্যাংক ও জ্বালানি খাত। এই দুই খাতে বড় ধরনের অনিয়মের কথা উল্লেখ করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে বেশি লুটপাট হয়েছে। এসব তুলে ধরা হবে প্রতিবেদনে।

দুর্নীতি প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় বলেন, সাধারণ মানুষের যে ধারণা আছে, তার চেয়ে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও জটিল। এমন একটি অর্থনীনৈতিক পরিস্থিতিতে কোনো উত্তারাধিকার সরকারের করার কিছু থাকে না। ব্যাংকিং খাতে সমস্যা বেশি ছিল। তাৎক্ষণিক দূর করার চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যতটা উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে, তা যদি সরকার দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে না পারে তবে দেশের মানুষকে ততটাই হতাশ করা হবে। এ জন্য বছর শেষে সরকারকে ৫ মাসের মূল্যায়ন উপস্থাপন করতে হবে। কী কী সরকারের দিক থেকে করা হয়েছে, এগুলো একত্রিত করে প্রকাশ করতে হবে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাজেটের আগে চলমান পরিস্থিতিতে আগামী ছয় মাসের পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ, সরকারি ব্যয়, রাজস্ব আয় ও বৈদেশিক খাতের ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা তুলে ধরতে হবে। আগামী জানুয়ারিতে ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়ন ফোরাম গঠন করতে পারলে আগামী বাজেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে।

আর্থিক স্বস্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে সংস্কার করা কঠিন হবে; বলে জানান মনে করেন এই অর্থনীতিবিদ।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার এমনভাবে রেখে গেছে, তার খেসারত আমরা গুনছি। বেপরোয়া অনেক নীতি নিয়েছিল। ফলে মূল্যস্ফীতি হয়েছে।

তিনি বলেন, এখন ব্যাংক থেকে টাকা লুটপাট ও চুরি বন্ধ হয়েছে। এর সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাংকের আমানত সংগ্রহ ও রপ্তানি বেড়েছে। বর্তমানে নেওয়া নীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ সাড়া দেখতে পাচ্ছি। তবে আর্থিক ব্যবস্থাপনা কঠিন হবে। কারণ আগামী ছয় মাস অত্যন্ত কঠিন সময় যাবে। এর মধ্যে রিজার্ভ বাড়াতে হবে। রিজার্ভ না বাড়লে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব হবে না।

র‌্যাপিপের নির্বাহী পরিচালক আবু ইউসুফ বলেন, সরকারের ব্যয় সচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে কি না, জনগণ খুবই কম জানতে পারছে।

জরিপের ফল তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজেট ব্যয়ে সচ্ছতা ৩৭ শতাংশ, যা যথেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে ভারত, নেপাল ও শ্রীলংকার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কেবল পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। বাজেটে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ১১ শতাংশ আর বাজেট বাস্তবায়ন তদারকি হচ্ছে ৩৭ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আনোয়ারুল কবির বলেন, বাজেট বাস্তবায়নে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে। এটা কীভাবে ত্বরান্বিত করা যায়, তার চেষ্টা করা হবে। জরিপে বেশ কিছু সুপারিশ এসেছে, তা নিয়ে কাজ করবে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাংবাদিক শওকত হোসেন। ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০২৪
জেডএ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।