বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, আর্থিক খাত জুড়ে অস্থিরতা, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ ও বাড়তি সুদ হারের কারণে বেশ কিছুটা সময় পুরো ব্যাংকিং খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বলতে গেলে অনেকটাই স্থবিরতা নেমে আসে ব্যাংকিং ব্যবস্থায়।
এই নেতিবাচক প্রভাবে থেকে বাদ যায়নি কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। বর্তমানে কৃষিঋণ বিতরণ আশঙ্কাজনক ভাবে কমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনই এমন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে কৃষিঋণ বিতরণ হয়েছে ১৩ হাজার ৮১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। যা পুরো বছরের লক্ষ্যমাত্রা ৩৪ কোটি ৪২ শংতাশ।
গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৬৬ শংতাশ বিতরণ সম্ভব হয়েছে। টাকার অংকে যা ১৫ হাজার ২৮০ কোটি ১২ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরে বছরে কৃষিঋণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩8 হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে জুলাই-নভেম্বর পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ১৫ হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা ৪৪ লাখ টাকা। কিন্তু উল্লেখিত সময়ে দুই হাজার ৭৫২ কোটি ১৮ লাখ টাকা ঋণ কম বিতরণ হয়েছে।
খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষি খাতে অগ্রাধিকার ভিত্তি অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করতে চায় সরকার। তারই অংশ হিসেবে ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ২ শতাংশ কৃষি ঋণ বিতরণ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এ জন্য আর্থিক খাতের মোট ঋণ বিতরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ে।
২০১০-১১ সালের যেখানে কৃষি ঋণ বিতরণ হয়েছিল ৯ হাজার কোটি টাকা কিছুটা উপরে। সেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৮ হাজার কোটি টাকা।
কৃষিঋণ বিতরণে পরিমাণের পাশাপাশি সুদ হারও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যা অন্যান্য ঋণের তুলনায় কমপক্ষে এক শতাংশ কম হবে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ কৃষিঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রার পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার করে বাংলাদেশ ব্যাংক। যে ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রা মোতাবেক কৃষিঋণ বিতরণে করবে না, তার অনর্জিত ঋণের নির্দিষ্ট একটি অংশের সম পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা ওই ব্যাংকের টাকা থেকে কেটে রেখে কৃষকদের মধ্যে ঋণ হিসেবে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়।
যে সব ব্যাংকের পল্লী অঞ্চলে নিজস্ব শাখা নেই, সে সব ব্যাংককে এনজিও লিংকেজের মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
মাইক্রো-ক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি (এমআরএ) কর্তৃক নিবন্ধিত এনজিও-এর মাধ্যমে এ সব কৃষি ঋণ বিতরণ করে থাকে। এনজিওগুলো ব্যাংকের কাছে থেকে নির্ধারিত সুদ হারে ঋণ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২২ শতাংশ সুদ হারে বিতরণ করে থাকে। ব্যাংকে বিতরণ করা মোট কৃষি ঋণের এক-তৃতীয়াংশ ঋণ বিতরণ করা হয় এনজিও এর মাধ্যমে। চলতি অর্থবছরে এনজিও-এর মাধ্যমে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
পাঁচ মাসে যে সব ব্যাংক কৃষি ঋণ বিতরণ করেনি
গত নভেম্বর পর্যন্ত হিসাবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের পাঁচ মাস চলে গেলেও চার ব্যাংক কোনো কৃষিঋণ বিতরণ করেনি। কৃষি ঋণ বিতরণ শুরু না করা ব্যাংকগুলো হলো, বিদেশি সিটি ব্যাংক এনএ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ও উরি ব্যাংক। এবং দেশি বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক পিএলসি কোনো ঋণই বিতরণ শুরু করেনি।
বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৬,২০২৫
জেডএ/এমএম