ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

বন্ডের অপব্যবহার

১৫ প্রতিষ্ঠানের চারশ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি

রহমত উল্যাহ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৬
১৫ প্রতিষ্ঠানের চারশ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশে বন্ড লাইসেন্স এর অপব্যবহার বাড়ছে। এর মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীরা পণ্য এনে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে।

এতে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, তৈরি হচ্ছে অসম প্রতিযোগিতা।

তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) ‘দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন’ নীতির আলোকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের তৎপরতায় বন্ডের অপব্যবহার কিছুটা কমে এসেছে।

চলতি অর্থবছরের নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এক্সেসরিজ খাতের বন্ড লাইসেন্সধারী ১৫টি প্রতিষ্ঠানের প্রায় চারশ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর। রোধ করা হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি। এছাড়া আরো অনেক লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের মামলা তদন্তাধীন রয়েছে।

অপরদিকে গত অর্থবছর এক্সেসরিজ খাতে বন্ড লাইসেন্সধারী শুল্ক ফাঁকি উৎঘঠিত হয়েছে মাত্র ৩২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ অর্থবছর প্রথম নয় মাসে কয়েকগুণ বেশি।

এর কারণ হিসেবে শুল্ক গোয়েন্দা বলছে, সরকার ও এনবিআর’র সহায়তায় থাকায় এ রহস্য উৎঘাটন সম্ভব হয়েছে। এক্সেসরিজ ছাড়াও অন্যান্য খাতে বন্ড লাইসেন্স এর অপব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ফাঁকির উৎঘাটন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

শুল্ক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত অনেক বন্ড লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করে শুল্ক গোয়েন্দা। এরমধ্যে অনেক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শুল্ক ফাঁকির তদন্ত করে মার্চ পর্যন্ত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের তদন্ত কাজ শেষ করে।

সূত্র আরও জানায়, ১৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৭১ কোটি ৭২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে মেসার্স খুলনা প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং।

প্রতিষ্ঠানটি ৬২৭ কোটি ৪৬ লাখ ৮৯ টাকার পণ্যে মূল্যে ২৭১ কোটি ৭২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন করেছে শুল্ক গোয়েন্দারা।

সূত্র জানায়, নীলফামারীর মেসার্স কোয়েস্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড পিভিসি রেজিন বন্ড লাইসেন্স সুবিধায় বিনাশুল্কে আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়।

পরে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ৩৫ লাখ ১৯ হাজার টাকার মধ্যে ২২ লাখ ২৭ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

গাজীপুরে গ্যালাক্সি সোয়েটার টাপিওকা স্টার্চ আমদানিকৃত মেশিনারিজ স্থাপন না করে কাঁচামাল আমদানি করে এবং এ কাঁচামালা বন্ডেড ওয়্যার হাউজে সংরক্ষণ না করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ৯ আগস্ট মামলা করা হয়। পণ্য মূল্য ১০ লাখ ৭২ হাজার। এরমধ্যে রাজস্ব ফাঁকি ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা।

চট্টগ্রামের গোল্ডেন সন লিমিটেড ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার টাকার বৈদ্যুতিক পাখা আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে দেয়। এতে রাজস্ব ফাঁকি দেয় ৮ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামের মেসার্স সান রাইজ ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা এক্সেসরিজ ডুপ্লেক্স বোর্ড, লাইনার পেপার আমদানি করে খোলা বাজারে বিক্রি করে রাজস্ব ফাঁকি দেয় ৪৯ লাখ ৩ হাজার টাকা।

চট্টগ্রামের ডাফ প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দু’দফা ৭৫ লাখ ৩৯ হাজার ও ৮ লাখ ৯৮ হাজার ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে ৭ লাখ ও ৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেয়।

চট্টগ্রামের লিবার্টি এক্সেসরিজ (বিডি) এইচডিপি ও এলডিপি ৩৪ কোটি ৩৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকার পণ্য মূল্যে ১২ কোটি ৪ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

যাত্রাবাড়ীর মেসার্স ভিকি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ১০ কোটি ৭৭ লাখ ৩২ হাজার টাকার আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড আমদানি করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে ৭ কোটি ৪৭ লাখ ১ হাজার টাকা।

নারায়ণগঞ্জের মেসার্স ফেডারেল করপোরেশন লিমিটেড ৬৫ কোটি ৯১ লাখ ৪ হাজার টাকার পেপার অ্যান্ড পেপার বোর্ড ৩৭ কোটি ৭৩ লাখ ৩ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

নীলফামারীর মেসার্স কোয়েস্ট এক্সেসরিজ লিমিটেড ৫ কোটি ৩২ লাখ ২৯ হাজার টাকার পিপি, এলএলডিপিই, ইভায় ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯৭ হাজার টাকার রাজস্ব ।

ঢাকার এফএল গার্মেন্টস এক্সেসরিজ লিমিটেড ৮৮ লাখ ১ হাজার টাকার ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, পিপিতে ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

ঢাকার মেসার্স চৌগাছা প্রিন্টিং লিমিটেড ৫৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকার আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড ৩৫ লাখ ৭১ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

নারায়নগঞ্জের মেসার্স ফেডারেল করপোরেশন লিমিটেড ফাঁকি দিয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ টাকার আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ডে ৮০ লাখ ১৮ হাজার টাকার রাজস্ব ।

ঢাকার মেসার্স এসএম প্যাকেজিং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড ১০ কোটি ৮৭ লাখ ২ হাজার টাকার আর্ট কার্ড, ডুপ্লেক্স বোর্ড ৬ কোটি ৪৭ লাখ ৪৪ হাজার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

ঢাকার মেসার্স তরী প্যাকেজিং লিমিটেড ২ কোটি ৭০ লাখ ৪৪ হাজার টাকার আর্ট কার্ড, লাইনার, পেপার রোল ১ কোটি ৫৬ লাখ ১৭ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে।

১৫টি প্রতিষ্ঠানের ৭৬৩ কোটি ২৫ লাখ ৫১ হাজার টাকার পণ্য মূল্যের মধ্যে ৩৪১ কোটি ৩৭ লাখ ৫৪ হাজার টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমান জানান, ‘যারা বন্ড সুবিধা নিয়ে অপব্যবহার করে তারা জাতীয় শত্রু। তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হবে। দুষ্টের দমন শিষ্টের লালন নীতিমালা অনুযায়ী তড়িৎ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে অনেক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। যারা এ ধরনের গর্হিত কাজ করছেন তাদের স্বরুপ উন্মোচিত করা হবে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড অপব্যবহারকারী আসলেই দেশের শত্রু। ইন্ডাস্ট্রি করে দেশে কর্মসংস্থান ও পণ্য তৈরি করে রফতানি করবে এ বিশ্বাস থেকে লাইসেন্স দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, গত নয় মাসে ব্যাপক অনিয়ম পেয়েছি। যে চিত্র পেয়েছি তার গভীরতা আরো ভয়াবহ। আমরা ইনফোর্সমেন্টর মাধ্যমে যতটা পারছি ফাঁকি রোধ করছি।

বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তদন্তাধীন রয়েছে। রাজস্ব ফাঁকি উৎঘাটন, গোয়েন্দা তৎপরতার ফলে বাজারে বন্ডের পণ্য কমে গেছে বলে জানান তিনি।  

তিনি আরও বলেন, সরকার ও এনবিআর সুশাসন চাই বলে আমরা এত বড় বড় ফাঁকি উৎঘাটন করতে পারছি। বন্ডের শুল্ক ফাঁকি রোধ করতে ইনফার্সমেন্ট’র পাশাপাশি পলিসি লেবেলে কাজ করছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৬
আরইউ /আরএইচএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।