ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
‘নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে’ ছবি: দিপু মালাকার- বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশের অভিবাসন ব্যয় পৃথিবীর যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। তাই নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে হবে।

শনিবার (১৬ জুলাই) রাজধানীর গুলশানের একটি কনভেনশন সেন্টারে বাজেট ও শ্রম অভিবাসন বিষয়ক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দক্ষতার বিষয়ে বাজেট অন্যান্য দিক থেকেও আসে। তাই আমরা এটা স্বচ্ছ করতে পারি কি-না- সেটা দেখতে হবে। অভিবাসনের জন্য সামগ্রিকভাবে কতোটুকু করতে পারছি, সেটা দেখা দরকার। এতে আসলে কি করছি, সেটা স্পষ্ট হবে। কতোটুকু বাড়ল সেটাও দেখা যাবে’।

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা দিয়ে বিনিয়োগ ব্যয় সক্ষমতা বাড়ছে। তবে এ টাকা পরিবারের কাছে আসছে, এটা মনে রাখতে হবে’।

‘পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ব্যয় বাংলাদেশে। কাজেই নিট আয় কতো হচ্ছে, সেটাও দেখতে হবে। যারা বিদেশে যাচ্ছেন, তারা ১২০ শতাংশ হারে ঋণ নিয়ে বিদেশে যাচ্ছেন। কেননা, আত্মীয়-স্বজন বা অন্য কোনো উৎস থেকে যে টাকা তারা নিচ্ছেন, তার সুদ অনেক বেশি। যদিও সরকার এটা কমানোর চেষ্টা করছে, এটি ইতিবাচক। এটা করা দরকার। কেননা, এতে অভিবাসনের জন্য ব্যয় কমে যাবে’।

তিনি বলেন, ‘সহস্রাব্দ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে সেইফ মাইগ্রেশন নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গি অর্থায়নের কথা বলেও অভিবাসীদের ওপর চাপ ফেলা হচ্ছে। এটাও মোকাবেলা করতে হবে’।

মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, যে চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে, এতে সক্ষমতা আনতে হবে। এজন্য দরকার পেশার ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা। প্রশিক্ষণ দিতে হবে বাজারে চাহিদার কথা চিন্তা করে। ৫ থেকে ১০ বছরের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সাজাতে হবে। এজন্য পাবলিক, প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে এগোতে হবে’।

মুস্তাফিজুর রহমান আরো বলেন, সরকার ৫০টি দেশের বাজার যাচাই করে দেখবে- কোন দেশের কি চাহিদা। এটা ভালো উদ্যোগ। এতে কোন দেশের কি ধরনের শ্রমিক প্রয়োজন সেটা জানা যাবে’।

‘এটা আমাদের অঙ্গিকার। অভিবাসনে ভালো করতে পারলে এসডিজি অর্জন সহজ হয়ে যাবে’।

আলোচনা সভাটির আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাতের চেয়ে অভিবাসী খাতে ২ বিলিয়ন ডলার বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়েছে’।

‘২০১৫ সালে তৈরি পোশাক খাতে ২৫ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে বলা হয়। কিন্তু তুলা, সুতা, কাপড়, কাঁচামাল ইত্যাদি খাত বাদ দিলে প্রকৃত আয় দাঁড়ায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। অথচ একই বছরে অভিবাসন খাতে আয় ১৫ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে অভিবাসন খাতের অবদান বেশি হলেও পৃষ্ঠপোষকতা এখানে কম। গার্মেন্টস খাতে বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হলেও প্রবাসীরা পান না’।

কিরণ বলেন, প্রতি বছর দেশের ৫ লাখ লোক বিদেশে গেলেও ৯০ শতাংশই বৈশ্বিক চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষিত নয়। তাই অভিবাসীদের পর্যাপ্ত দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ফিলিপাইন কেবল দক্ষ জনশক্তি রফতানি করে প্রতি বছর ২৬ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। তাই আমাদেরও সে পথেই এগোতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশিক্ষণ)  ড. মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ১৫ বিলিয়ন বৈধভাবে আসে। এর বাইরে হাতে হাতে আসে প্রায় ২০ শতাংশ। সব মিলিয়ে অভিবাসীরা গত বছর প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন। সে হিসেবে গার্মেন্টস খাতের চেয়ে এ খাতে আয় অনেক বেশি।

তিনি বলেন, ১ কোটি লোক দেশের বাইরে থাকেন। তারা দেশে থাকলে খাবার, পোশাক, অবাসনের যোগান দিতে হতো। এতে বেকারত্ব বাড়তো। তাই অভিবাসনের একটা ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে সমাজে।

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশিক্ষণ উন্নয়নে গুরুত্ব দিচ্ছি। তবে তা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। একটা উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। এক্ষেত্রে সৌদি আরব এবং ইউএইতে জনশক্তি পাঠানোর জন্য নিয়েছি। এছাড়া সরকারের ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের জন্য রাখা হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘জনশক্তি রফতানির বিষয়ে আমরা আন্তর্জাতিক ফোরামে আলোচনা করছি। আমাদের ভালো আইনও আছে। তবে সমস্যা হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করা। এজন্য সরকারের পাশাপাশি এনজিও এবং সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে’।

বিদেশে ফেরতদের বিষয় তিনি বলেন, তাদের নিয়ে অনেক কিছু করার আছে। ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে সরকারকে সঙ্গে নিয়ে বেসরকারি উদ্যোগ এগিয়ে এসেছে। সেখানে বিদেশ ফেরতদের আবাসনসহ বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।

ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামের ম্যানেজার পারভেজ সিদ্দিকী বলেন, শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, এখন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের বাজারও ধরতে হবে।

সভায় আয়োজক সংগঠনের পরিচালক ড. এসএম মোর্শেদ, ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশনের মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান খান প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বৈঠকে দূতাবাসগুলোর অসহযোগিতার কথাও উঠে আসে। বক্তারা বলেন, কোনো শ্রমিক বিপদে পড়লে দূতাবাস কোনো সহায়তা করে না। এছাড়া দেশেও অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায় না। এজন্য ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্রকে কাজে লাগানোর ওপরও জোর দেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৮ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৬
ইইউডি/এএসআর

** পোশাকের চেয়ে অভিবাসী খাতে আয় বেশি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।