ঢাকা: পলিসি হোল্ডারদের দায়ের প্রায় সাড়ে ৯শ’ কোটি টাকার অবৈধ বিনিয়োগ রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। কোম্পানিটি সরকারি বন্ড ও অনান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের এ টাকা অন্য খাতে বিনিয়োগ করেছে, যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।
পলিসি হোল্ডারদের দায়ের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের করার বিধান করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।
সূত্র জানায়, বিমা আইনের বিধান পালনে প্রতিষ্ঠানটিকে চারবার সময় বেঁধে দেয় আইডিআরএ। সর্বশেষ বেঁধে দেওয়া সময় শেষ হয়েছে গত ২০ নভেম্বর। কিন্তু কোনো বারেই কোনো বিনিয়োগ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। বরং পঞ্চমবারের মতো ২০১৭ সাল পর্যন্ত সময় চেয়ে আবেদন করেছে।
ফলে এ বছর তো হচ্ছেই না, আগামী বছরের মধ্যেও এ টাকা কোম্পানিটি বিনিয়োগ করবে কি-না, তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সূত্র মতে, কোম্পানিটির পলিসি হোল্ডারদের লাইফ ফান্ডের পরিমাণ ০৩ হাজার ১২৫ কোটি ০৩ লাখ টাকা। বিমা আইন-১৯৩৮ অনুসারে জীবন বিমা পলিসি হোল্ডারদের মেয়াদ পূর্তিজনিত দায়ের ৩০ শতাংশ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে হয়। সে হিসেবে কোম্পানিটির ৯৩৭ কোটি ৫০ লাখ ৯০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করার কথা। কিন্তু বিনিয়োগ রয়েছে মাত্র দেড় কোটি টাকা, যা বিমা আইনের লঙ্ঘন।
এজন্য বিমা আইন-২০১০ এর ধারা ১০ এর (ঘ) ও (ছ) উপধারাসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ধারা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আইন পালনের জন্য গত ১৯ এপ্রিল, ০৫ জুন, ০৬ সেপ্টেম্বর ও ২০ নভেম্বর চার দফা বৈঠকের পর সময় বেঁধে দেওয়া হয় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে।
আইডিআরএ’র সদস্য ও মুখপাত্র জুবের আহমেদ খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোম্পানিটির সরকারি বন্ড ও অন্যান্য সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ পরিমাণের তুলনায় কম রয়েছে। আমাদের বেঁধে দেওয়া সময়ও শেষ হয়েছে। এখন কোম্পানিটির সঙ্গে আইডিআরএ’র শুনানি হবে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
মোবাইল ফোনে বিষয়টি স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি হেমায়েত উল্লাহ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালের মধ্যে ৫০ কোটি টাকার বন্ড কেনা হবে। এরপর প্রায় ৯শ’ কোটি টাকার মধ্যে অর্ধেক টাকার সরকারি বন্ড আগামী বছর কেনার পরিকল্পনা রয়েছে। আশা করছি, কিনতে পারবো’।
তিনি বলেন, সাধারণ বন্ডে সুদের হার ৭ শতাংশ। এ কারণে অন্যান্য কোম্পানিগুলো বন্ড কিনে সেখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পায়। আর ফারইস্ট ইসলামী কোম্পানি হওয়ায় ইসলামী বন্ডে বিনিয়োগ করতে হয়। অথচ এতে সুদের হার মাত্র ২ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
তাই সব ধরনের বন্ডের সুদের হার এক করা উচিৎ বলে মনে করেন তিনি।
অবৈধ বিনিয়োগ ছাড়াও কোম্পানির অন্যান্য অনিয়ম খতিয়ে দেখতে অডিটর (বিশেষ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান) নিয়োগ করেছে আইডিআরএ।
সূত্র জানায়, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের কষ্টে উপার্জিত ২শ’ কোটি টাকার অবৈধ লেনদেন করার তথ্য পেয়েছে আইডিআরএ। কোম্পানিটির ২০১২, ২০২৩ এবং ২০১৪ সালের বার্ষিক আর্থিক প্রতিবেদেনগুলোর ব্যবস্থাপনা ব্যয়ে অনিয়ম ধরতে বিশেষ নিরীক্ষণের নির্দেশনাও দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সাত বছরে কোম্পানির মোট ২শ’ কোটি ৫১ লাখ টাকার দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিমা কোম্পানির ‘ব্যবস্থাপনা ব্যয়’ আইনের তোয়াক্কা না করে নামে-বেনামে নিজেদের ইচ্ছেমতো ভুয়া এজেন্টের নামে কমিশন গ্রহণ, ভুয়া বিনিয়োগ এবং অবৈধভাবে ব্যবস্থাপনা ব্যয় দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা মিলে বিভিন্ন কৌশলে এ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৬
এমএফআই/এএসআর