দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই স্বীকার করেছেন অর্থপাচার হওয়ার পর তারা বুঝতে পারেন অর্থপাচার হয়েছে। কিন্তু তখন আর তাদের কিছুই করার ছিলো না।
অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত নন দাবি করেছেন এবি ব্যাংকের সাবেক এই কর্মকর্তারা। কীভাবে এতোগুলো অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেল সেটা তারা বুঝতে পারেননি বলেও জানান দুদককে। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে অর্থপাচারের সঙ্গে তাদের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রায় নিশ্চিত হয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। এ কারণে ওয়াহিদুল হক ও ফজলার রহমানের পাসপোর্ট জব্দ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে দুদকের নির্ভরশীল একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানায়, অনুসন্ধান টিম নিশ্চিত যে, এবি ব্যাংকের ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের সঙ্গে তারা জড়িত। এ কারণে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা হয় যেন তারা দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারেন। এমনকি তাদের পাসপোর্ট থেকেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে বলেও ধারণা করছে সূত্রটি।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে দুদক কাযার্লয়ে আসেন সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক। তখন খুব বিমর্ষ দেখা যায় তাকে। এরপর দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল ৪টা ২৩ মিনিটে বেরিয়ে যান তিনি। বেরিয়ে যাওয়ার সময় খুব রাগান্বিত ছিলেন তিনি।
এ সময় সংবাদকর্মীরা অর্থপাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহিদুল হক বলেন, আমি অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত নই। তদন্ত চলছে, যা বলার আমি তদন্ত কর্মকতাদের বলেছি।
অন্যদিকে সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে দুদক কার্যালয়ে আসেন ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম ফজলার রহমান। এ সময় তিনি সংবাদকর্মীদের দেখে দ্রুত জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষে চলে যান।
দীর্ঘ ৭ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকেল ৫টার দিকে দুদক কার্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফজলার রহমান সংবাদকর্মীদের বলেন, দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা আমাদের ব্যাখা দিয়েছি। এখন তদন্ত চলছে।
অর্থপাচারের সাথে জড়িত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সেটা বলতে পারব না।
এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন ও সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার।
এর আগে বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) এ দু’জনসহ ৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে চিঠি পাঠায় রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি দমন প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়াহিদুল হক ও ফজলার রহমান ছাড়া বাকি ৮ জন হলেন- ব্যাংকটির সাবেক এমডি শামিম আহমেদ চৌধুরী, হেড অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হেড অব কর্পোরেট মাহফুজ উল ইসলাম, হেড অব অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট (ওবিইউ) মোহাম্মদ লোকমান, ওবিইউ’র কর্মকর্তা মো. আরিফ নেয়াজ, ব্যাংক কোম্পানি সেক্রেটারি মাহদেব সরকার সুমন এবং প্রধান কার্যালয়ের কর্মকর্তা এম এন আজিম।
গত ১০ ডিসেম্বর তদন্ত সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে ব্যাংকটির এমডির কাছে চিঠি দেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল। তারপর ১৩ ও ১৪ ডিসেম্বর ওয়াহিদুল হক, ফজলার রহমান, শামিম আহমেদ এবং মোস্তফা কামালকে দুদকে হাজির হতে বলা হয়।
কিন্তু তারা হাজির না হয়ে দুদকে উপস্থিত হতে সময়ের আবেদন করেন। এর প্রেক্ষিতে আবার তাদের হাজির হতে চিঠি পাঠানো হয় বুধবার।
ওই চিঠিতে ওয়াহিদুল হক ও ফজলার রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বৃহস্পতিবার সকালে ডাকা হয়। শামিম আহমেদ ও মোস্তফা কামালকে ৩১ ডিসেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছে। বাকিদের আগামী ২ জানুয়ারি জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।
দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান-এমডি
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮,২০১৭
এসজে/এমজেএফ