ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩৫ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
সমবায় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ জেলা প্রশাসকের সাপ্তাহিক গণশুনানিতে দু’টি আলাদা স্মারকে অভিযোগ করা হয়। ছবি: বাংলানিউজ

যশোর: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রণজিত দাশের বিরুদ্ধে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) দু’টি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত এবং নারী লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৭ জুন) যশোর জেলা প্রশাসকের সাপ্তাহিক গণশুনানিতে দু’টি আলাদা স্মারকে এই অভিযোগ করা হয়।

অভিযোগ করেন ঝিকরগাছার গঙ্গানন্দপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের সভাপতি সাইদ হাফিজ এবং গঙ্গানন্দপুর নারী উন্নয়ন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য এলিজা শিরিন।

সাইদ হাফিজ তার অভিযোগে জানান, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কচুরিপানা দিয়ে হস্তশিল্প তৈরির জন্য তাকে এডিবির একটি প্রকল্পের কাজ দেওয়া হয়। এই প্রকল্পে এক লাখ টাকা বাজেট নির্ধারণ করেন প্রকল্পের সভাপতি রণজিত দাশকে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি প্রকল্পে কেবল ৪০ হাজার টাকা খরচ করেন। কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য বাকি টাকা চাইতে গেলে ওই টাকা খরচ হয়ে গেছে বলে জানান রণজিত। খরচের খাত জানতে চাইলে ওই উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রেগে যান সাইদ হাফিজের ওপর এবং বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দেন তাকে।  

সাইদ আরও অভিযোগ করেন, রণজিত দাশ ‘গঙ্গানন্দপুর সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতি’র রেজিস্ট্রেশনের সময়ও জেলা সমবায় কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে ১৫ হাজার টাকা নেন। অথচ সমবায় রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারি ফি মাত্র ৩৪৫ টাকা। এসব বিষয় সাইদ হাফিজ ও তার সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে জানাজানি হয়ে গেলে রণজিত তাদের নতুন কোনো প্রকল্প থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন।

সাইদের দাবি, প্রতিবাদ করায় ২১ জুন রণজিতের লেলিয়ে দেওয়া অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং এসব নিয়ে আর মাথা ঘামাতে নিষেধ করে।

আরেক অভিযোগে এলিজা শিরিন জানান, প্রশিক্ষণ না দিয়েই প্রশিক্ষণ হয়েছে দেখিয়ে ‘উন্নত জাতের গাভী পালনের মাধ্যমে সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন’ প্রকল্প থেকে অর্থ সরিয়েছেন রণজিত দাশ। এছাড়া ছয়টি প্রশিক্ষণে সরকারি বরাদ্দের এক লাখ ২০ হাজার টাকার মধ্যে ব্যয় করেছেন ৬০ হাজার টাকা। বাকি অর্থ নিজের পকেটস্থ করেছেন। প্রশিক্ষণ না দিয়েই সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্ল্যাংক ভাউচারে স্বাক্ষরের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। এলিজা শিরিন স্বাক্ষর করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় তাকে গালিগালাজ করেন রণজিত।  

গণশুনানিতে এসব বিষয় জানানো হলে জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল অভিযোগ তদন্তের জন্য ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুল ইসলামকে নির্দেশ দেন।  

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা রণজিত দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘ছেলেটি (সাইদ হাফিজ) বেশি বোঝে। আগের ডিসি (জেলা প্রশাসক) তাকে একটু বেশি স্নেহ করতেন বলে সে এ দপ্তর-ও দপ্তরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে কথা বলে বেড়াচ্ছে। এখন তাকে পাত্তা দেওয়া হচ্ছে না এবং সমিতির গভর্নিং বডির সভাপতি পদ থেকে তাকে বাদ দেওয়ার কথা চলছে বলে সে এসব করে বেড়াচ্ছে। ’ 

প্রকল্পের টাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি এডিবির আওতাধীন কাজ। এ বিষয়ে ইউএনও জড়িত আছেন। ’ 

‘এ বিষয়ে জড়িত’ থাকা প্রসঙ্গে ইউএনও জাহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রকল্পটি এডিবির হওয়ায় উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা এ কথা বলতে পারেন। সমিতি থেকে ওনারা আমার কাছে এসেছিলেন। বিষয়টি শুনানির মাধ্যমে তদন্ত করে দেখা হবে। অসঙ্গতি ধরা পড়লে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’

নাম ভাঙিয়ে টাকা নেওয়ার বিষয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে তারা আমাকে মৌখিকভাবে জানিয়েছেন। আগামী রোববার (১ জুলাই) ঢাকা থেকে কর্মকর্তা আসবেন। আমরা সেখানে গিয়ে সরেজমিনে বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করার পর ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২০ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৮
ইউজি/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।