ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শুঁটকির বর্জ্য থেকে বছরে আয় সোয়া ৩ কোটি টাকা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, মার্চ ২, ২০১৯
শুঁটকির বর্জ্য থেকে বছরে আয় সোয়া ৩ কোটি টাকা শুঁটকির বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ কাজে ব্যস্ত জেলে, ছবি: বাংলানিউজ

দুবলার চর থেকে ফিরে: দেশের প্রধান শুঁটকি উৎপাদন ক্ষেত্র বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের দুবলার চর শুঁটকিপল্লী। প্রতিবছর এই পল্লী থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি শুঁটকি উৎপাদন হয়। শুধু তাই নয় শুঁটকির বর্জ্য থেকেও সোয়া তিন কোটি টাকার উপরে আয় করেন জেলেরা।

সাগরে মাছ আহরণের পর জেলেরা সেগুলো দুবলার চরে নিয়ে আসে। তখন মাছ বাছাইয়ের সময় অনেক সামুদ্রিক প্রাণী বাদ পড়ে যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না।

জেলেরা সেগুলোকে রাবিশ (বর্জ্য) বলে। যেমন- ছোট ছোট কাকড়া, কামট, অক্টোপাস, পোটকা, দোয়াত কলম, টেপা, মূল্যে মাছ ও চিংড়ির মাথা উল্লেখযোগ্য।

তবে সেসব বর্জ্য ফেলে দেয় না জেলেরা। বরং যত্নের সঙ্গে সংরক্ষণ করে তা ফরিয়াদের কাছে বিক্রি করেন। ফরিয়ারা এগুলো নিয়ে রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। রাবিশ ব্যবসায়ীরা তা আবার বিভিন্ন মৎস্য খাবার উৎপাদন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। এ থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়। বনবিভাগও পায় রাজস্ব।

দুবলার চর ঘুরে দেখা যায়, পুরো চর জুড়ে রয়েছে জেলেদের ছোট ছোট ঘর, মাছ শুকানো মাচা, চাতাল এবং মাছ শুকানোর জন্য মাটিতে নেট বিছানো। সমুদ্র থেকে মাছ আহরণ করে শুঁটকি প্রক্রিয়ার কাজে ব্যস্ত হাজার হাজার জেলে। ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
শুঁটকির বর্জ্য, ছবি: বাংলানিউজসুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের হিসাব মতে, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে দুবলার চরে শুধু ২০ হাজার ৬৩০ মণ বর্জ্য উৎপাদন হয়েছে। যেখান থেকে এক লাখ ৭৯ হাজার ৫০ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ২২ হাজার ৩১২ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৮১ হাজার ৬৮৫ টাকা এবং ১৭-১৮ অর্থ বছরে ২১ হাজার ৭৮০ মণ বর্জ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ২৫৬ টাকা রাজস্ব পেয়েছে সরকার। চলতি মৌসুমের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ২ হাজার ৯৩০ মণ বর্জ্যে ২৩ হাজার ৭৭৫ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন বিভাগ।

এনিয়ে রামপালের আব্দুল গনি শেখ, মিফজুল ইসলাম, মোহাম্মাদ আলী ও মোংলার আক্কাস আলী বাংলানিউজকে বলেন, মাছ চরে নিয়ে এসে প্রথমে শুঁটকির জন্য ভালো মাছ বাছাই করি। বাছাইয়ের সময় কিছু প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ফেলে দিতে হয়। যা শুঁটকি হিসেবে বিক্রি করা যায় না। তবে এগুলোকে আমরা না ফেলে মাটিতে নেট বিছিয়ে শুকিয়ে ঘরের মধ্যে স্তুপ করে রাখি। এরপর দুই থেকে তিন মণ হলে তখন সেগুলো রাবিশ ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।  

বর্জ্য ব্যবসায়ী আনছার ফকির ও মৌলভী হানিফ বাংলানিউজকে বলেন, দুবলার চর থেকে আমরা ১৪ থেকে ১৬শ’ টাকা দামে রাবিশ ক্রয় করি। যখন রাবিশ কম থাকে তখন দাম কমে যায়। মাছ বৃদ্ধি পেলে দাম বৃদ্ধি পায়। এগুলো খুলনার লবন চোরা, বগুড়া, পাথরঘাটাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি।
শুঁটকির বর্জ্য, ছবি: বাংলানিউজদুবলা ফিসারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মো. কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, জেলেরা শুঁটকির জন্য মাছ বাছাই করেন। বাছাইয়ের সময় অব্যবহৃত বর্জ্য জেলেরা সংরক্ষণ করেন। এ বর্জ্য বিক্রি করে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয়।
 
বাগেরহাট সদর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বাংলানিউজকে বলেন, শুঁটকির বর্জ্য মৎস্য খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এ বর্জ্যে খাবারে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, এরফলে মাছ উৎপাদনও ভাল হয়। দেশে মাছ উৎপাদনে এ বর্জ্যের ভূমিকা রয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. মাহমুদুল হাসান বাংলানিউজকে বলেন, শুঁটকির পাশাপাশি দুবলার চরে প্রতি মৌসুমে ২০ হাজার মণের অধিক বর্জ্য উৎপাদন হয়। এগুলো থেকে জেলেদের অতিরিক্ত আয় হয় এবং বনবিভাগ প্রতি কুইন্টালে ২০ টাকা করে রাজস্ব আদায় করে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৪০ ঘণ্টা, মার্চ ০২, ২০১৯
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।