ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী ছকিমুদ্দি

ফজলে ইলাহী স্বপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৪ ঘণ্টা, মে ১২, ২০১৯
হাঁসের খামারে স্বাবলম্বী ছকিমুদ্দি

কুড়িগ্রাম: হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান প্রত্যন্ত এলাকার ছকিমুদ্দি (৪০)। দারিদ্র্যতার টানাপোড়েনে লেখাপড়াও জোটেনি তার। কোনো কাজের অভিজ্ঞতা না থাকায় ৪০টি হাঁস দিয়ে খামার গড়ে স্বাবলম্বী কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের পানাতি পাড়া গ্রামের মৃত খয়বর আলীর ছেলে ছকিমুদ্দি। 

শনিবার (১১ মে) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, অভাব-অনটনের সংসারে জীবিকা নির্বাহের তাগিদে গত  ২০ বছর আগে ৪০টি হাঁস দিয়ে শুরু করেন ছোট একটি হাঁসের খামার। অর্থনৈতিক দৈন্যতার মধ্যেও খেয়ে না খেয়ে পরিচর্যা চালান খামারে।

এরপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি, এভাবেই শুরু হয় ছকিমুদ্দির এগিয়ে চলার গল্প।  

বর্তমানে তার খামারে হাঁসের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। তিন মাস বিরতিহীনভাবে প্রতিদিন হাঁসগুলো গড়ে ডিম দেয় ১০০টি। প্রতিটি ডিম ১২ টাকা হিসাবে বিক্রি করেন ১২০০ টাকা। এছাড়া তিন থেকে চার মাস পর পর পরিপক্ক হাঁস প্রতিটি বাজারে বিক্রি হয় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়। হ্যাচারি থেকে হাঁসের বাচ্চা কিনে এনে পালন করে প্রতিটি পরিপক্ক হতে খাদ্য ও ওষুধ বাবদ সর্বসাকুল্যে খরচ হয় প্রায় ১২০ টাকা।  ছকিমুদ্দির হাঁসের খামার।  হাঁস খামারি ছকিমুদ্দি বাংলানিউজকে বলেন, অভাবের সংসারে দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর ধরে হাঁস পালন করে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছি। দারিদ্রতার মধ্যে নিজে না খেয়ে হাঁসগুলোকে সন্তানের মতো পরিচর্যা করেছি। আল্লাহ মুখ তুলে দেখেছেন, তাই এসেছে সংসারে স্বচ্ছলতা, ঘুচেছে অভাবের কঠিন দিনগুলো। হাঁসের খামারের আয় থেকে সংসার চালিয়ে গরু কিনেছি, জমি কিনেছি।

অতীত স্মরণ মনে করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি আরও বলেন, নিজে তো পড়াশুনা করতে পারিনি, তাই ছেলে-মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালানোসহ পরিবারের সবধরনের চাহিদা পূরণ করে আসছি এ হাঁস খামারের আয় থেকে। এখন নিজে স্বাবলম্বী হয়েছি, অভাব-অনটন কেটে গেছে।

কুড়িগ্রাম সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান দেলওয়ার হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ছকিমুদ্দির হাঁসের খামার সত্যিই অনুকরণীয়। অতীতের অভাবের সংসারে হাঁস পালন করে নিজে স্বাবলম্বী হয়েছে এবং পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখেই দিন যাপন করছে। তার এই সাফল্যে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে আরও হাঁস খামার তৈরি হবে, দুর হবে এলাকার বেকারত্ব এ প্রত্যাশাই করছি।  

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল হাই সরকার বাংলানিউজকে জানান, খাল-বিলসহ নদীমাতৃক কুড়িগ্রাম জেলা হাঁস-মুরগি পালনের উপযোগী হওয়ায় ব্যাপক সম্ভাবনাময়। হাঁস পালনের উপযোগী পরিবেশের কারণে অনেকেই নিজ উদ্যোগে খামার গড়ে তুলে যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছে তেমনি ডিম ও মাংসের চাহিদা মেটাচ্ছে এলাকার। আমরা প্রাণিসম্পদ বিভাগের পক্ষ থেকে হাঁস পালনকারীদের পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে থাকি। হাঁস ও ডিমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় এবং বিপণন ব্যবস্থা ভালো থাকায় লাভবান হচ্ছেন খামারিরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৩ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
এফইএস/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।