ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেই ৫২ পণ্য

শাওন সোলায়মান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৫ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেই ৫২ পণ্য

ঢাকা: বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া ৫২টি পণ্য এখনো পাওয়া যাচ্ছে বাজারে। এসব পণ্য বাজার থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য আদালত নির্দেশনা দিলেও এখনো দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। এ বিষয়ে এখনো তৎপর চোখে পড়ছে না নিয়ন্ত্রণকারী সরকারি সংস্থাগুলোর। এজন্য তারা কারণ দেখাচ্ছে ‘আদেশের অনুলিপি’ হাতে না আসাটাকে।

রোববার (১২ মে) এক রিট শুনানির আদেশে উচ্চ আদালত বিভিন্ন ধরনের ভোজ্য তেল, খাবারের মসলা, পানি, সেমাই, ঘি, ময়দা, দই, চানাচুর, মধু, লবণসহ বিভিন্ন ধরনের ৫২টি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রি বন্ধ এবং সেগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশ দেয়। বিএসটিআইয়ের পরীক্ষার মাধ্যমে পুনরায় উত্তীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত এসব পণ্য উৎপাদন, সরবরাহ এবং  বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় ওই রায়ে।

আর এই আদেশ বাস্তবায়ন করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেন আদালত।

তবে সোমবার (১৩ মে) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর, উত্তরাসহ বেশ কয়েকটি এলাকার দোকানপাট ও বাজারে এখনো সেসব পণ্যের মজুদ দেখা যায়। থেমেও নেই এসব পণ্যের বিক্রি। এসব পণ্যের মজুদ সরিয়ে নেওয়া অথবা বিক্রি বন্ধে এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি পণ্যগুলোর মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা উৎপাদক থেকে শুরু করে সরবরাহকারী অথবা সরকারি সংস্থাগুলোকে।

উত্তরার বিডিআর মার্কেটের মুদি দোকানি মো. মনির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ভেজালের কারণে নিষিদ্ধ হওয়া পণ্যের মধ্যে বেশ কয়েকটি পণ্য আছে তার দোকানেও। আর সেগুলো ক্রেতারা কিনছেনও।  

কারওয়ান বাজারে পণ্য কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, পণ্যে ভেজাল আছে বুঝলাম, কিন্তু ভাল বা নির্ভেজাল পণ্যটা কোথায়? ৫২টি হয়তো পরীক্ষা করে ভেজাল পাওয়া গেছে, কিন্তু ঠিকমত পরীক্ষা করলে দেখা যাবে যে, প্রায় শতভাগ পণ্যেই ভেজাল। তাই ভেজাল পণ্যই যেহেতু কিনতে হবে তাহলে এগুলো কিনলেই বা আর কী হবে!

তবে নিষিদ্ধ পণ্যগুলোর বিষয়ে উৎপাদক ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান বা সরবরাহকারীদের কাছে থেকে এখনো কোনো ‘নির্দেশনা’ পাওয়া যায়নি বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন। পণ্যগুলো এখনো বিক্রি হচ্ছে এবং ক্রেতারা কিনছেন জানিয়ে হেলাল উদ্দিন বলেন, এ ধরনের খবর রীতিমত আতঙ্কিত হওয়ার মত খবর। কিন্ত বাস্তবতা হচ্ছে, বিএসটিআই বা অন্যান্য অনেক সংস্থার ওপরই এখন জনগণের আস্থা সেভাবে নেই। বিএসটিআইয়ের থেকে অনেক উচ্চমানের পরীক্ষাগার আছে এসব প্রতিষ্ঠানের। তবে আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা আমাদের দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে একটি চিঠি লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সেখানে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলবো যে, আমাদের মজুদে থাকা মালগুলো নিয়ে কেনার সময়ে দেওয়া মূল্য ফিরিয়ে দিতে অথবা পণ্যগুলোতে যে ভেজাল নেই সেটা যেন তারা প্রমাণ করে।  

এদিকে আদালতের রায়ের অনুলিপি হাতে পেলে সেখানে থাকা নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য এবং অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন বলেন, আদালতের আদেশের কপি না পাওয়া পর্যন্ত আসলে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ আদেশে উল্লেখিত বিভিন্ন শব্দগত ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করবে যে আমাদের কী পদক্ষেপ নিতে হবে? পণ্যগুলো সরিয়ে ফেলা বলতে ঠিক কোনগুলো বা কী পরিমাণ সরিয়ে ফেলতে হবে সেটা দেখতে হবে। কোনো একটি ব্যাচ নাকি পুরো লট সরিয়ে ফেলতে হবে? এসব বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে রায় বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেবো।  

প্রায় একই রকম মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার।  

অন্যদিকে আদালতের আদেশের পরও এসব পণ্য বিক্রিকে ‘একরকম অবৈধ’ বলছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কাজী ওয়াসীমুল হক। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এটা ঠিক যে রায়ের কপি থেকে পরিষ্কার হবে, ওই পণ্যগুলোর সবগুলোর ওপরেই কি নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে নাকি কোনো বিশেষ ব্যাচ বা লটের ওপর। তবে আংশিক হলেও সেসব পণ্য বাজারে তো আছে। তাই সেই পণ্যগুলো অন্তত বিক্রি করা অবৈধ এখন। আর যদি ওই ৫২টির সবগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়ে থাকে তাহলে তো সবই বিক্রি অবৈধ।  

পাশাপাশি এ ধরনের পণ্য কেনার সময় ক্রেতাদের আরও সাবধান ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) প্রেসিডেন্ট ও সাবেক বিচারপতি গোলাম রহমান। একইসঙ্গে দোকান মালিক ও ব্যবসায়ীদের ৫২টির তালিকায় থাকা পণ্যগুলো পরবর্তী নির্দেশনা আসা পর্যন্ত বিক্রি বন্ধ রাখা নৈতিকভাবে ‘উচিত’ বলেও মত দিয়েছেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৯ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৯
এসএইচএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।