ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদ সামনে রেখে কর্মব্যস্ত জামদানিপল্লি

মাহফুজুর রহমান পারভেজ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৪ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
ঈদ সামনে রেখে কর্মব্যস্ত জামদানিপল্লি জামদানি শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। ছবি: বাংলানিউজ

নারায়ণগঞ্জ: ঈদকে সামনে রেখে কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে শীতলক্ষ্যা তীরের নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তারাব পৌরসভার নোয়াপাড়া জামদানিপল্লিতে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন নকশার জামদানি শাড়ি তৈরি করছেন এ পল্লির কারিগররা। বর্তমানে জামদানিপল্লিতে দিন-রাত শ্রম দিয়ে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই এসব কারিগরদের কাজ করতে হচ্ছে। 

জানা যায়, ফুল তেরছি, ছিটার তেরছি, ছিটার জাল, সুই জাল, হাটু ভাঙা তেরছি, ডালম তেরছি, পার্টিরজাল, পান তেরছি, গোলাপ ফুল,  জুঁই ফুল, পোনা ফুল, শাপলা ফুল, গুটি ফুল, মদন পাইরসহ প্রায় শতাধিক নকশার জামদানি বুনন হয় এই পল্লিতে। এগুলোর মধ্যে ছিটার জাল, সুই জাল ও পার্টির জাল জামদানির মূল্য সবচেয়ে বেশি।

এসব জামদানি শাড়ির প্রতিটির দাম পড়ে প্রায় ৩০ হাজার থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত। আর এ দামের একটি শাড়ি বুনতে সময় লাগে প্রায় তিন থেকে ছয় মাস। এছাড়া দুই হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার জামদানি শাড়িও রয়েছে। কম দামের এসব জামদানি শাড়ি বুনতে সময় লাগে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস।  

বর্তমানে জামদানি কারিগরদের সংখ্যা দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। ১৯৭৫ সালে রূপগঞ্জে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার জামদানি তাঁতি ছিল।

জেলা জামদানি তাঁত শিল্প শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, ৬০ হাজার লোক এ শিল্পের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিল। বর্তমানে দেড় হাজার পরিবার এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত।

জামদানি তাঁতি আক্তার হোসেন, আমির আলী, সাখাওয়াত ভূঁইয়া জানান, বংশের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে এ পেশায় রয়েছেন তারা। প্রতি মাসে অল্প মূল্যের তিন থেকে চারটি শাড়ি তৈরি করেন তারা। এ শাড়ি বিক্রির টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার।  

বর্তমানে ঈদকে সামনে রেখে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত প্রায় ২৪ ঘণ্টাই জামদানি কারিগরদের কাজ করতে হচ্ছে। আগের তুলনায় তাদের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ বলেও জানান তারা।

বাংলাদেশ থেকে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, সৌদি আরব, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশে জামদানি শাড়ি রফতানি হচ্ছে। আর এই রফতানির সঙ্গে জড়িত জামদানি শাড়ির ব্যবসায়ীরা। তাঁতিদের কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা এসব শাড়ি কিনে দেশের বাইরে রফতানি করে থাকেন। প্রতিবছর জামদানিপল্লি থেকে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকার জামদানি শাড়ি রফতানি করা হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ইসলামাবাদ, করাচি, লাহোর ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রতিবছরই জামদানি মেলা হয়।

জামদানি শাড়ি বিক্রিকে ঘিরে শীতলক্ষ্যার পাশে ডেমরায় ও নোয়াপাড়া জামদানিপল্লিতে প্রতি বৃহস্পতিবার জামদানির হাট বসে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামদানি শাড়ি কিনতে এখানে আসেন ব্যবসায়ীরা। এখান থেকে প্রায় দুই শতাধিক পাইকার বিভিন্ন প্রকার জামদানি ক্রয় করে দেশ-বিদেশে বিক্রি করে করেন।  

বিক্রেতারা জানান, প্রতি মাসে জামদানির হাটে প্রায় ২০ কোটি টাকার শাড়ি বেচা-কেনা হয়।  

ঈদকে সামনে রেখে এ মাসে প্রায় ৩৩ কোটি টাকার জামদানি বেচা-কেনা হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা।

কলামিস্ট ও গবেষক মীর আব্দুল আলীম বাংলানিউজকে জানান, জামদানি তাঁতিরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দিন-রাত পরিশ্রম করে এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছেন। তবে, মহাজনদের কাছে তাঁতিরা জিম্মি হয়ে পড়েছেন। সঠিক মজুরি তারা পাচ্ছেন না। এ শিল্প টিকিয়ে রাখতে তাঁতিদের সঠিক মজুরি দিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।