ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হবে বন্ড ব্যবস্থাপনার অটোমেশন

গৌতম ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১২ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হবে বন্ড ব্যবস্থাপনার অটোমেশন

ঢাকা: আগামী ডিসেম্বরেই চূড়ান্ত হবে বন্ড ব্যবস্থাপনার অটোমেশন প্রক্রিয়া। তবে বাস্তবায়নে যেতে অপেক্ষা করতে হবে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ লক্ষ্যে বন্ডের আওতায় আমদানিকৃত পণ্য পাচার বা খোলাবাজারে বিক্রি বন্ধে আগামী ২৭ মে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

বন্ড খাতে অটোমেশন বাস্তবায়ন করতে পারলে সেবাখাতে হয়রানিসহ নানা অভিযোগ আর থাকবে না। পাশাপাশি শুল্কমুক্ত সুবিধায় আমদানিকৃত পণ্য খোলাবাজারে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

এ বিষয়ে এনবিআরের গ্রেড-১ এর মেম্বার সুলতান মো. ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে এ সুবিধাকে অটোমেশন করা হবে। এ লক্ষ্যে আমাদের নিয়োগকৃত গবেষণা ফার্ম সাউনেসিস একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদনে তারা বর্তমানে বন্ড ব্যবসা কী রকম আছে তা পাঠিয়েছে। এখন কী করা দরকার সে বিষয়ে কাজ চলছে। এজন্য আগামী ২৭ মে ফার্স হোটেলে ২০/২৫ জন স্টেকহোল্ডারকে নিয়ে স্টেকহোল্ডার অ্যাওয়্যারনেন্স সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে এ ধরনের ৬ থেকে ৭টি সেমিনার করা হবে।

তিনি বলেন, সেমিনার শেষে প্রাপ্ত মতামতের ভিত্তিতে একটি আধুনিক যুগোপযোগী টেকসই বিজনেস প্রসেস চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এই চূড়ান্ত বিজনেস প্রসেস নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্যদের কাছে উপস্থাপন করা হবে সবাই অনুমোদন দিলে বন্ড অটোমেশন বিজনেস প্রসেস বাস্তবায়ন করা হবে। এজন্য আমাদের আরো ৭ থেকে ৮ মাস সময় লাগবে।

সুলতান মো. ইকবাল বলেন, বিজনেস প্রসেস চালু হবে আগামী ডিসেম্বরে। তবে বন্ড অটোমেশন চালু হতে আমাদের ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ বন্ড অটোমেশন বিজনেস প্রসেস চূড়ান্ত করে বাস্তবায়ন করতে একটি ডিজাইন, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার তৈরি করতে হবে। এগুলো তৈরি করতে সময়ে প্রয়োজন রয়েছে। তবে আমরা ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে অটোমেশন চালু করতে পারব বলে আশাবাদী।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বন্ডের আওতায় পণ্য আমদানি করে পাচার বা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছে। এ অবৈধ কাজ বন্ধের লক্ষ্যে বন্ড সুবিধার ব্যবহারে সকল কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে এনবিআর-এর সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আগামী ২৭ মে থেকে পর্যায়ক্রমে  স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে ৭ থেকে ৮টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার রোধে কি করণীয় সে বিষয়ে আলোচনাসহ স্টেকহোল্ডারদের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া হবে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, রফতানিমুখী শিল্পকারখানাগুলো পুনঃরফতানির শর্তে শুল্কমুক্ত বন্ড সুবিধায় পণ্য আমদানির সুযোগ পায়। এসব কাঁচামাল বা পণ্য সরকার-নির্ধারিত গুদামে (বন্ডেড ওয়্যারহাউস) রক্ষিত থাকে। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী দেশে শুল্কমুক্ত পণ্য এনে অবৈধভাবে অপসারণের মাধ্যমে তা খোলাবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বন্ড সুবিধায় আনা কাপড়, প্লাস্টিক দ্রব্য, কাগজপণ্য, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড, কার্ড বোর্ড, বৈদ্যুতিক পাখা, এসিডিটিক এসিড, পেডিং (ব্লেজার বা জ্যাকেট তৈরির কাঁচামাল) ইত্যাদি দ্রব্য ও পণ্য ওয়্যারহাউজে যাওয়ার আগেই খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) অভিযোগ জানিয়ে বাংলাদেশ পেপার ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য বন্ড সুবিধায় আনা কাগজ ও কাগজ বোর্ডে এখন খোলাবাজার সয়লাব। পোশাকশিল্পের নামে নির্ধারিত কাগজের বাইরে নিম্নমানের কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি করে খোলাবাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে বৈধ পথে সরকারকে নির্ধারিত রাজস্ব দিয়ে আমদানি করা ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা অসম প্রতিযোগিতায় সংকটের মধ্যে পড়ছেন।

অ্যাসোসিয়েশন সূত্র মতে, ১৯৯৬ সালে তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যবহারের জন্য বন্ড সুবিধায় কাগজ ও কাগজ বোর্ড আমদানি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এতে শুধু ৩০০ গ্রাম বা তদূর্ধ্ব গ্রামের কাগজ আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। রপ্তানিমুখী শিল্পে তেমন চাহিদা না থাকলেও ১০০ গ্রাম বা ১৫০ গ্রামের আর্ট পেপার বন্ডেড সুবিধাভুক্ত করা হয়। সুবিধার আড়ালে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করায় সরকার বিশাল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। আর উচ্চ শুল্ক দিয়ে আমদানি ও বিনা শুল্কে আমদানি করা পণ্য খোলাবাজারে বিক্রি করায় বৈধ আমদানিকারকরা সংকটে পড়েছে।

এক হিসাবে দেখা যায়, বৈধ পথে কোটেড ও গ্রাফিক পেপার, ডুপ্লেক্স বোর্ড, আর্ট কার্ড ও ফোল্ডিং বক্স ও সেলফ অ্যাডহেসিভ পেপার থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২৫১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০৫ কোটি ৮০ লাখ টাকা আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩৫৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।

একই সময়ে বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কোটেড পেপার, ক্রাফট পেপার ও গ্রাফিক পেপার আমদানিতে সরকার রাজস্ব পায়নি। ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে তিন বছরে তিন হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার পেপার আমদানি করা হয়। এই আমদানির বিপরীতে ব্যবসায়ীরা শুল্ক সুবিধা পান ২ হাজার ৭৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতিবছর সরকার প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ববঞ্চিত হচ্ছে। বন্ড সুবিধার বাইরে বৈধ পথে এই কাগজ আমদানি করা হলে সরকারের রাজস্ব আরো বাড়বে বলে মনে করছে বাংলাদেশ পেপার ইমপোটার্স অ্যাসোসিয়েশন।

দেশে বর্তমানে ৬ হাজার ৫৬৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে বন্ড লাইসেন্স থাকলেও অনিয়মের কারণে ১ হাজার ৭৫৭ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কাস্টমস। আবার কারখানা বন্ধ থাকার পরও বন্ড লাইসেন্স আছে ২৪৩৮টি পোশাক ও প্যাকেজিং কারখানার।

বাংলাদেশ সময়: ১০১২ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০১৯
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।